Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সাক্ষাৎকারে আজিজুল হাকিম তামিম

‘আমি মুখে নয় ব্যাটে জবাব দিই’  

Tamim
Picture of শিহাব উদ্দিন

শিহাব উদ্দিন

[publishpress_authors_box]

দেশের ক্রিকেটে চলে এসেছেন আরেক তামিম। পাওয়ার হিটিংয়ে দক্ষতা, নেতৃত্বগুণ মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত তারকা হিসেবে ধরা হচ্ছে তাকে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে উপহার দিলেন টানা দ্বিতীয় এশিয়া কাপ। আসরে ২৪০ রান করা তামিম এবার স্বপ্ন দেখছেন আরও বড় মঞ্চে নিজেকে রাঙানোর। এই স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সকাল সন্ধ্যাকে।

প্রশ্ন : স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি (এনসিএল টি-২০) মানে বড় পর্যায়ে প্রথম নেমেই ফিফটি খুলনা দলের হয়ে। কোন চাপ অনুভব হয়নি?

আজিজুল : না, কোনও চাপ মনে হয়নি। যুব দলের হয়ে যেভাবে খেলছিলাম, যে ছন্দ ছিল এখানেও সেরকম খেলতে পেরেছি। নিজের পরিকল্পনা মতো ব্যাট করতে পেরেছি। খুব ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন : নির্বাচক হাসিবুল হোসেন শান্ত আপনাকে নিয়ে বলছিলেন দারুণ একজন ব্যাটার আসছে । আপনি নিজেকে নিয়ে কি বলবেন?

আজিজুল : আলহামদুলিল্লাহ, এখন যেভাবে ব্যাট করছি সব তো ভালোই হচ্ছে। রান পাচ্ছি, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমি চাইবো এভাবে যেন সামনেও চালিয়ে যেতে পারি। আলাদা করে কিছু ভাবিনি।

প্রশ্ন : আপনার ব্যাটিংয়ের শক্তিশালী দিক কোনটা? দেখলাম আপনাকে স্লেজিং করলে ভালো ব্যাটিং করেন…

আজিজুল : আমি সব সময় চেষ্টা করি যে মুখে কিছু না বলে স্লেজিংয়ের জবাব ব্যাটে দিতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেদিন একটা ফ্রি হিট বল মিস করার পর বোলারটা আমার সামনে এসে বলে – তুই কি বল দেখেছিস। পরের বলে ওকে ছক্কা মেরে আমি পাল্টা বলেছিলাম – এবার তুই কি বল দেখেছিস? ঘটনাটা আসলে এমন ছিল।

প্রশ্ন : এর মানে আজিজুল হাকিম তামিম এমনই (শক্তিশালি দিক)। আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করে?

আজিজুল : আসলে ব্যাপারটা ঠিক এমন নয়, দলের প্রয়োজনে যখন যেটা দরকার আমি তা করতে চাই। সেট যদি ৬ বলে ৬ টা ছক্কা প্রয়োজন হয় তবে আমি সেই চ্যালেঞ্জ নিতে চাই। যদি ৬টা বল ডট দিতে হয় সেভাবেও খেলতে পারি। মূল কথা হলো দলের অবস্থা বুঝে ব্যাটিং করা। এটাই আমার কাছে বড়।

প্রশ্ন : আপনার ক্রিকেটের শুরুটা সংক্ষেপে যদি বলতেন…

আজিজুল : আমার ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয় যশোর থেকে। ২০১৬ সালে ক্লাস ফোরে থাকতে বাবা আমাকে জেসিসি (যশোর ক্রিকেট কোচিং) একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি প্রথম অনূর্ধ্ব-১২ দলে সুযোগ পাই। পর্যায়ক্রমে ১৪, ১৫-তে খেলি। অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের জন্য প্রথম ট্রায়ালে বাদ পড়ি। পরেরবার সুযোগ পেয়ে যাই। এরপর অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে ভারত সফর করি। এখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলছি।

প্রশ্ন : এখন দেশের ক্রিকেটের আলোচনায় আপনি। আগেও বেশ কয়েকজন ওপেনার যুব দলের আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু বড় পর্যায়ের চাপ সামলাতে না পেরে হারিয়ে যান। আপনি কিভাবে এই চাপ সামলাবেন আর নিজেকে এখন কোথায় দেখছেন?

আজিজুল : দেখেন, যুব দলে ভালো করেছে এমনও অনেকে আছেন। যেমন জিসান ভাই (জিসান আলম), রাব্বি ভাই (অলরাউন্ডার মাহফুজুর রহমান রাব্বি) এইচপি, “এ” দলে আছে, ভালো করছে। আমি বা আমরাও চেষ্টা করবো এরকম ভালো করতে। বড় পর্যায়ের কথা যদি বলি তারা ভালো করছে, সামনে আরও ভালো হবে। আমি যদি ওই পর্যায়ে যেতে পারি চেষ্টা থাকবে নিজেকে আরও ভালো ভাবে উপস্থাপন করার।

প্রশ্ন : যুব দলে ভালো করার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে ভালো করতে পারে না কেন?

আজিজুল : আসলে জাতীয় দলে সবাই কিন্তু চেষ্টা করে। যুব দলের বেশ কয়েকজন জয় ভাই (মাহমুদুল হাসান জয়), ইমন ভাই (পারভেজ হোসেন ইমন) বোলার যারা আছেন সবাই ভালো করছেন। হয়তো স্কিল, পরিস্থিতি অনুযায়ী সবসময় ভালো করা হয় না কিন্তু সবাই প্রসেস মেনেই চেষ্টা করে।

প্রশ্ন : বড় পর্যায়ের কথা বললেন। জাতীয় দলের কথা যদি বলি, আপনি কিভাবে খেলতে চান? এইচপি, “এ” দল হয়ে নাকি অনেকে যে সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ পায় সেভাবে?

আজিজুল : এটা নির্ভর করে। যদি আমার পারফরম্যান্স ওই রকম ভালো হয়, নির্বাচকরা যদি মনে করেন আমি ওই পর্যায়ে ভালো পারফরম করতে পারবো, তাহলে ওটা হতে পারে। আবার ধাপে ধাপে যে পথটা আছে ওটাও যদি হয় তাহলেও কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আমি চাই সবসময় পারফরম্যান্স ধরে রাখতে। খেলাটা তো একদিনের না অনেকদিনের। আমি অনেকদিন ধরেই পারফরম করে যেতে চাই।

প্রশ্ন : খারাপ সময় সব ক্রিকেটারের আসে। ওই অবস্থার জন্য আপনি কি নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন?

আজিজুল : খারাপ-ভালো সময়টা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর। আমি আল্লাহকে খুব বিশ্বাস করি। দেখেন দুই বছর আগে তামিমকে কিন্তু কেউই চিনতো না। এখন কিন্তু সবাই চেনে। খারাপ সময় প্রত্যেক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে আসে। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদেরও হয়। এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। আমি চেষ্টা করবো নিজের পারফরম্যান্সটা ঠিক রাখার।

প্রশ্ন : আপনারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যুব বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন। শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জটা কেমন ছিল?

আজিজুল : আমরা মাত্রই এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলাম। শিরোপা ধরে রাখার একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো সেটা জয় করতে পেরেছি। এরপর বিশ্বকাপ আছে, সেখানে ভালো করায় নজর থাকবে। এখন যে ফল আমরা আনতে পেরেছি এটা ভালো। অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনা ছিলো, সেভাবে এগোতে পেরেছি। দল হিসেবে সফল হয়েছি। শিরোপা ধরে রাখা অবশ্যই বড় ব্যাপার।

প্রশ্ন : গতবারও এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিশ্বকাপে দলের ওপর চাপ ছিল শিরোপা জেতার। তা হয়নি। আপনাদের ওপরও সেই চাপ থাকবে। এই ব্যাপারটা কিভাবে দেখেন?

আজিজুল : দেখেন ফলাফল আল্লাহর হাতে। আমরা যেভাবে চেষ্টা করছি মানসিক, শারিরিক ভাবে কঠিন পরিশ্রম করছি সেটা ঠিক আছে। আমরা এই টুর্নামেন্টে পাকিস্তান ও ভারতকে যেভাবে হারালাম সেখান থেকে মানুষ অবশ্যই আমাদের কাছে বড় কিছু আশা করবে। আমরাও দল হিসেবে ভালো করার আত্মবিশ্বাস রাখি এমন পারফরম্যান্সের পর। এই ইতিবাচক দিকটা আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো বিশ্বকাপে। বাকিটা আল্লাহর উপর।

প্রশ্ন : এখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল যে টানা ভালো করছে। এটা সামনের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কতটুকু এগিয়ে রাখবে?

আজিজুল : এটা তো অবশ্যই। আমরা এশিয়া কাপ জিতলাম। এটা বিরাট একটা অভিজ্ঞতা। আমরা এখন থেকে যে আসরই খেলবো এই শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে খেলবো। যেমন সামনে আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের মতো ভালো দলের বিপক্ষে সিরিজ আছে। সেখানে আমরা এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো। দেশের লিগ যেমন এই টি-টোয়েন্টি লিগ, প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পেলে সেখানেও আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েই খেলবো। ঠিক তেমনি ভাবে সামনের যুব বিশ্বকাপেও আমরা এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়ে নামবো। এটা আমাদের বাড়তি একটা প্রেরণা দিবে অবশ্যই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত