Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

রিজার্ভ বাড়ছে, ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

ডলার
ডলার
[publishpress_authors_box]

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ প্রায় ৭৫ কোটি ডলার বেড়ে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। দুটোই বাড়তে থাকায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

গত ১২ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে যা ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক মাসের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ প্রায় ৭৫ কোটি ডলার বেড়েছে; ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ৫৮ কোটি ডলার।

আকুর বিল শোধের আগে ৭ নভেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়ন ডলার; ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে রিজার্ভের পাশপাশি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।

রিজার্ভ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্স বাড়ছে। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। মূলত এই সূচকের ওপর ভর করেই রিজার্ভ বাড়ছে।”

আগামী দিনগুলোতে রিজার্ভ আরও বাড়বে- এ আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা মোটা অঙ্কের বাজেট সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই ঋণগুলো আসতে শুরু করলে রিজার্ভ নিয়ে আর কোনও চিন্তা থাকবে না।

“এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বুধবার ৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে। খুব শিগগিরই এই অর্থ রিজার্ভে জমা হবে।”

এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আর্থিক খাতের সংস্কারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এডিবি। সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই বাজেট সাপোর্ট হিসেবে এই ৬০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এই অর্থ পাবে বাংলাদেশ; যোগ হবে রিজার্ভে।”

এক বছর আগে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার; ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি ব্যয় কমায় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে বিপিএম-৬ ও ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি রিজার্ভের নিট হিসাবও করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সেটি প্রকাশ করা হয় না। আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

নিট রিজার্ভ হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার মোট সঞ্চিতি থেকে সব ধরনের দায়দেনা বাদ দেওয়ার পর যা থাকে সেটা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো কম থাকে। আর বিপিএম-৬ হিসাবের চেয়ে কম থাকে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।

সে হিসাবে বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ গত অক্টোবর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, এই পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত