ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় অভিনেত্রী শমী কায়সারকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় করা এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন।
তার জামিন নিয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৬ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছে আদালত।
আদালতে শমী কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল ইসলাম সুমন।
গত ১০ ডিসেম্বর শমী কায়সারকে ৩ মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ। পরে বুধবার তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শমীর বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই ঢাকার আজমপুর হাবিবুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেন মামলার বাদী ইশতিয়াক। সেখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
পরে তিনি নিজেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এই মামলায় গত ৫ নভেম্বর ঢাকার উত্তরা থেকে অভিনেত্রী শমী কায়সারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ৬ নভেম্বর শমী কায়সারকে ৩ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত।
রিমান্ড শেষে গত ৯ নভেম্বর ফের তাকে আদালতে তোলা হয়। সেদিন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে শমী কায়সারকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছেন।
ওই মামলায় শমী কায়সার ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ও অভিনেত্রী তারানা হালিম, লোকশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শমী কায়সার শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার এবং সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সারের সন্তান।
নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি।
তিনি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি ছিলেন। ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালকও।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ১৪ অগাস্ট ই-ক্যাব সভাপতির পদ ছাড়েন শমী কায়সার।
সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর জামিন স্থগিত
ঢাকার মিরপুর থানায় করা এক হত্যা মামলায় সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত। জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল ইসলাম সুমন।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুব আলীকে জামিন দেয়।
এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনে নিহত সিয়াম সরদার (১৭) রাজধানীর মিরপুরের হোটেল রাব্বানীতে চাকরি করতেন। গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পথে মিরপুর-১০ এ গুলিতে আহত হন তিনি। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর তার বাবা সোহাগ সরদার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ ১১৪ জনকে আসামি করা হয়। এতে মাহবুব আলীর নামও রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব আলী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হকের (ব্যারিস্টার সুমন) কাছে পরাজিত হন।
এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি হবিগঞ্জ ৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।