বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল অর্থনীতি খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজন এবং আইসিটি বিভাগের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে তিনটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে হুয়াওয়ে।
হুয়াওয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশে, বাংলাদেশের জন্য’ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম উদ্যোগ হিসেবে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় আসবাব ও সরঞ্জামা প্রদান, যাতে ইনটেলিজেন্ট ক্লাসরুম চালু করা যায়।
দ্বিতীয় উদ্যোগটি হলো আইসিটি বিভাগের সঙ্গে জয়েন্ট ইনোভেশন ল্যাব স্থাপন। তাদের তৃতীয় উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক খাতের পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ, গবেষণাকর্মী ও শিক্ষকদের জন্য ‘চীন-বাংলাদেশ ফিনটেক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’ চালু।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুলশানে হুয়াওয়ের নতুন অফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই উদ্যোগগুলোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের বিশেষ একটি অংশ ছিল ‘বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি রিসার্চ রিপোর্ট’-এর উন্মোচন। বিটিআরসি ও চায়না অ্যাকাডেমি অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস্ টেকনোলজি (সিএআইসিটি) যৌথভাব প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে।
প্রতিবেদন উন্মোচন করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী। সিএআইসিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ঝিকিন ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের উন্নয়ন নিয়ে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, ইকোসিস্টেম, ব্যবসার পরিবেশ ও সুনির্দিষ্টভাবে দেশের পরিস্থিতিকে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে খাত সংশ্লিষ্টরা ৫-১০ বছরে বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড সংযোগের উন্নয়ন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাবেন।
প্রথম উদ্যোগের আওতায় হুয়াওয়ে ইনটেলিজেন্ট ক্লাসরুম স্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যেমন আইডিয়া হাব, আধুনিক অ্যাক্সেস পয়েন্ট ও ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ দেবে। এর মাধ্যমে গবেষণায় দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরের জন্য আগামীর নেতৃত্ব তৈরি হবে।
দ্বিতীয় উদ্যোগে হিসেবে হুয়াওয়ে ও বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ বাংলাদেশে একটি ইনোভেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করবে। এই ল্যাবে বাংলাদেশে দক্ষ আইসিটি পেশাজীবী গড়ে তুলতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ দেবে হুয়াওয়ে। বাংলাদেশে আইসিটি উদ্ভাবনের সক্ষমতা বাড়াতে ও আইসিটি কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য এই গবেষণাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর ও সমৃদ্ধ করতে হুয়াওয়ে ‘চীন-বাংলাদেশ ফিনটেক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’ চালু করবে।
এই উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা চীনে ফিনটেকের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ফিনটেক ও মাইক্রোফিনান্স প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করা।
অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “বিশ্বের শীর্ষ আইসিটি অবকাঠামো প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়ে বাংলাদেশে গত ২৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে।
“হুয়াওয়ে বাংলাদেশের আইসিটি খাতকে ২জি থেকে শুরু করে ৫জিতে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল কমিউনিকেশন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমি আনন্দিত।”
হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং বলেন, “আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একসঙ্গে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছি। এই নতুন অফিস উদ্বোধন দক্ষিণ এশিয়ায় হুয়াওয়ের যাত্রার নতুন এক সূচনা।
“আমরা আরও দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাবো, আরও বেশি বিনিয়োগ করবো এবং উদ্ভাবন চালিয়ে যাবো, যাতে এর মাধ্যমে আমরা দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তর ও টেকসই উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী অবদান রাখতে পারি।”
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেন, “হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যাত্রায় বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই দেশের প্রতি হুয়াওয়ের অবিচল প্রতিশ্রুতি তাদের বড় পরিসরের বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সহায়তা, পরামর্শ ও উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।
“প্রতিষ্ঠানটির একনিষ্ঠ সহযোগিতা আমাদের টেলিযোগাযোগ খাতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে সংযোগ সম্প্রসারণে হুয়াওয়ের অবদান প্রশংসনীয়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমি মনে করি, চীন ও বাংলাদেশ দীর্ঘসময় ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং তা আরও উন্নত হচ্ছে। ঢাকায় হুয়াওয়ের দক্ষিণ এশিয়ার সদর দপ্তর দেখে আমি আনন্দিত হয়েছি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য হুয়াওয়েকে আমি অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। এটি আমাদের উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বাংলাদেশের তরুণদের উন্নতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”
আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “হুয়াওয়ে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নানাবিধ সফল উন্নয়নে অন্যতম ভিত্তি হিসাবে কাজ করে আসছে। বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন চীনের মতো একটি দেশ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
“একই সঙ্গে হুয়াওয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের সহযোগিতা করছে। উন্নত আইসিটি সেবা ও প্রযুক্তি বিষয়ে হুয়াওয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণ, আমাদের গবেষকদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিউদ্দিন বলেন, “এই আয়োজন আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আইসিটি খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
“১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে হুয়াওয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের নেটওয়ার্ক ডিভাইস, নেটওয়ার্ক নির্মাণ সেবা ও মোবাইল ফোন সরবরাহ করেছে, যা আমাদের আইসিটি খাতের দ্রুত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে হুয়াওয়ের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। স্মার্ট ক্যাম্পাস তৈরির সরঞ্জাম প্রদান করায় হুয়াওয়েকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
“দক্ষতার অভাব, পুরানো সিস্টেম ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মতো চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে এই ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, হুয়াওয়ে বাংলাদেশে শুধু প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা প্রদান করছে না বরং বাংলাদেশ যাতে প্রযুক্তি, শিক্ষা, ও অর্থনেতিক খাতে প্রকৃতভাবে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য কাজ করছে। এই অনুপ্রেরণায় তরুণদের জন্য হুয়াওয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, ল্যাব, ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে।
হুয়াওয়ে সিডস ফর দ্য ফিউচার, আইসিটি কম্পিটিশন, বুয়েটে জিএসএম ল্যাব, আইসিটি একাডেমি, ইউ আই ইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক সোলার ল্যাব স্থাপন, আইসিটি ইনকিউবেটর আয়োজন এবং এই নতুন তিনটি উদ্যোগ তারই কিছু উদাহরণ।