Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

‘আজব কারখানা’ তে যেভাবে গান হয়ে উঠে হেলাল হাফিজের কবিতা

কবি হেলাল হাফিজ, শবনম ফেরদৌসী, আজব কারখানা সিনেমা
২০২৪ সালের জুলাইয়ে মুক্তি পাওয়া 'আজব কারখানা' চলচ্চিত্রটি নানা আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়।
[publishpress_authors_box]

কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন কবি হেলাল হাফিজ। প্রেসক্লাবে শনিবার কবির শেষ বিদায়ক্ষণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী।

কবির সঙ্গে তার ছিল আত্মিক যোগ। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র আজব কারখানা -তে কবির চারটি কবিতা গানে রুপান্তরিত হয়েছে।

কবির জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণেরও ইচ্ছে ছিল শবনম ফেরদৌসীর। নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তবে, যে কথা কখনো কেউ ভাবতে পারেনি, কবির বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলে এর অমর কবিতাগুলো থেকে যে গান হতে পারে, তা ভাবতে পেরেছিলেন এই নির্মাতা।

“আমাদের ফিল্মের চরিত্রটি ছিল একজন রকস্টারের। রকস্টারের কণ্ঠে অনেকগুলো গানের প্রয়োজন ছিল আমাদের। গানের লিরিকগুলো কেমন হবে ভাবতে ভাবতে কবির কবিতাগুলো সামনে এল। শতবার পড়া কবিতাগুলো আবারও পড়ে মনে হলো, কেন নয়?

“প্রথমে মনে হয়েছিল, এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। পরে অবশ্য এই কবিতাটি করা হয়নি। আমরা চারটা কবিতা বাছাই করেছিলাম। কষ্ট নেবে কষ্ট, কেউ জানে না, তোমাকেই চাই, একবার ডাক দিয়ে দেখো ; এই কবিতাগুলো থেকে গান করার প্রস্তাব নিয়ে আমরা কবির কাছে যাই। তিনি সবসময়ই খুব ওয়েলকামিং ছিলেন। রাজি হয়ে গেলেন,” জানালেন শবনম।

‘একবার ডাক দিয়ে দেখ ,আমি কতটা কাঙাল’ গানটি করেছেন লাবিক কামাল গৌরব। ‘কষ্ট নেবে কষ্ট’ সহ থেকে বাকি তিনটি গান তৈরি করেছে ভাইকিংস। ব্যান্ডের গায়ক তন্ময় তানসেন এতে কণ্ঠ দিয়েছেন।

“গানগুলো শুনে তিনি বেশ আনন্দিত হলেন। বললেন, ভালো হয়েছে, ঠিক আছে। তোমাদের ভালো লাগলেই আমি তৃপ্ত,” জানালেন শবনম।

আজব কারখানা ২০২৪ সালের ১২ জুলাই মুক্তি পায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারি অনুদান ও সামিয়া জামানের প্রযোজিত চলচ্চিত্রটি নানা আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়।

সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তার ঠোঁটে ও অভিনয়েই হেলাল হাফিজের কবিতা থেকে গানগুলো পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়।

সিনেমা মুক্তির আগে গণমাধ্যমের সামনে এসেছিলেন হেলাল হাফিজ। তখন তিনি বলেছিলেন, “চলচ্চিত্র কবিতার মতোই দূরহ একটি শিল্পমাধ্যম। পৃথিবীর যেকোন ধ্রুপদী শিল্পকর্মের দিকে তাকালেই আমরা দেখবো, সেটা গান, হোক কবিতা হোক, চলচ্চিত্র হোক-আমরা দেখবো, সেটা বিরহে মোড়ানো। বিরহ ছাড়া উৎকৃষ্ট শিল্প রচনা অসম্ভব। দেখা যাক শবনম কেমন বিরহের চাষাবাদ করেছেন তার চলচ্চিত্রে। আশা করছি যথাযথ নৈপূন্যের সাথেই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন শবনম।“

দুই পাশে সিনেমার দুই অভিনেত্রী দোয়েল ও ইমির মাঝে বসে চিরপ্রেমিক হেলাল হাফিজ বলেছিলেন, “আজকের সন্ধ্যায় বিদূষী এবং রূপসীদের মাঝে বসে আমি কিছুটা দিশেহারা। কিন্তু লক্ষ্য করবেন, আমি বিদূষী শব্দটি আগে ব্যবহার করেছি। বিদূষীর সৌন্দযের সামনে রূপসীর সৌন্দয গৌণ। আমার অপার আনন্দ হচ্ছে আজ, এই সন্ধ্যা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার যে চারটি কবিতা এ ছবির প্রযোজক ও পরিচালক এ ছবিতে ব্যবহার করেছেন তা থেকে একটি কবিতার চারটি লাইন আমি পড়ব।”

হেলাল হাফিজ তার কষ্ট নেবে কষ্ট কবিতাটি থেকে আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন সেই সন্ধ্যায়। এখন পর্যন্ত এই গানটিই উন্মুক্ত হয়েছে ইউটিউবে।

শবনম বলেন, “কবির মৃত্যুতে আমরা খুবই শোকাহত। শনিবার সন্ধ্যায় আজব কারখানা তে ব্যবহৃত তার সবচেয়ে প্রিয় একবার ডাক দিয়ে দেখ গানটি লাবিক কামাল গৌরবের কন্ঠে আনঅফিসিয়ালি প্রকাশ করা হবে। খুব শিগগিরই এই গানটিসহ বাকিগানগুলোও তার সম্মানে রিলিজ করবো আমরা।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত