বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও জানানো হবে শ্রদ্ধা।
রবিবার দলটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
তবে এসব কর্মসূচিতে কারা অংশ নেবেন বা দলের কোন নেতা এসবের সমন্বয় করছেন সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। সেদিনের পর থেকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি দলটির কোনও শীর্ষ নেতাকে, যাদের বেশিরভাগের নামেই রয়েছে অসংখ্য মামলা। কিছু মামলায় সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা এ মুহূর্তে রয়েছেন কারাগারে।
সবশেষ গত ১৭ অক্টোবর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু হলে, তার জানাজাতেও অংশ নিতে দেখা যায়নি দলটির পদধারী কোনও নেতাকে। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। যদিও কোনও স্থানেই খুব বেশি সময় অবস্থান করেননি নেতাকর্মীরা।
মামলা-হামলা ও জনরোষের ভয়ে পালিয়ে যখন দলের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে, ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।
ঘোষণা অনুযায়ী, বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এখানে কোনও সময় উল্লেখ করা না হলেও বরাবর আওয়ামী লীগ প্রথম প্রহরেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
এছাড়া ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর (পুরোনো) সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের কবরেও ফুল দেবে আওয়ামী লীগ।
বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সেটি কোথায় হবে, কে প্রধান অতিথি হবেন কিংবা কারা পরিচালনা করবেন তা স্পষ্ট করেনি টানা ১৬ বছর দেশের ক্ষমতায় থাকা দলটি।
সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিজয় র্যালি ও বিজয় মেলার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একই ধরনের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একসূত্রে গাঁথা, একটি অন্যটির পরিপূরক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করা যাবে না। যে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি মহান বিজয় অর্জন করেছে সেটার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র বাঙালি জাতির মুক্তির স্পিরিটকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিল উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়, “বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজ্জ্বল অর্জন চির আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সমগ্র জাতি যে চেতনার শক্তিতে বলীয়ান হয়েছিল স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা ও আদর্শ আজ সংকটের সম্মুখীন। বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতির পতাকা খামচে ধরেছে পুরোনো শকুনেরা।”
অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়, “দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দমিত করার অপচেষ্টার মধ্য দিয়ে বাঙালির সম্মিলিত শক্তি ও সামর্থ্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। আজ বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, সংবিধান দিবস এবং জাতীয় শোক দিবস রাষ্ট্রীয় আচার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যে রণধ্বনি বাঙালি মায়ের বীর সন্তানদের দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রাখতে নির্ভীক করে তুলেছিল সেই ‘জয় বাংলা’-কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হাইকোর্টের রায়ও স্থগিত করা হয়েছে।”
এসব পদক্ষেপ কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করে না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ থেকে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।”