জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও এসব তথ্য গোপনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ এসব মামলা করা হয় বলে জানিয়েছেন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
গোপালগঞ্জের সন্তান বেনজীর দুই বছর পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে অবসরে যান। আইজিপির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র বেনজীরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়।
গত মার্চে সংবাদমাধ্যমে বেনজীরের ‘অবৈধ সম্পদের’ তথ্য প্রকাশ এবং তা অনুসন্ধানে হাইকোর্টে আবেদনের পর তার সম্পদ অনুসন্ধানে নামে দুদক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বেনজীরের সপরিবারে দেশ ছাড়ার খবর আসে গণমাধ্যমে।
রাষ্ট্র ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট নেওয়ার অভিযোগে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদকের নতুন চার মামলায় বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। মতিউর ও তার স্ত্রী শাম্মী আকখতার শিবলীর বিরুদ্ধে প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা হয়েছে দুটি মামলা।
মামলায় সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ করা হয়েছে।
বেনজীরের স্ত্রীর জিসান মির্জার বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়োছে।
তাদের দুই মেয়ে ফারহীন রিস্তা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজিরের ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এনবিআরের সদস্য মতিউর ছিলেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট। গত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারে ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।
ছেলের বিলাসী জীবনযাপনের সূত্র ধরে মতিউরের বিপুল সম্পদ অর্জনের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার মধ্যে দুদকের পক্ষ থেকে মতিউরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের কথা জানানো হয়। অপর দিকে মতিউরকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়।
পরে অবশ্য গণমাধ্যমে খবর আসে, এনবিআরের পদ হারানোর পর পেনশন সুবিধা না নিয়েই অবসর নিয়েছেন মতিউর। তিনি সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
মতিউরও সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের ছেলে ইফাত। এই সংসারের কথাও গোপন রাখেন তিনি।
মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
লায়লা কানিজ ছিলেন সরকারি কলেজের শিক্ষক। ২০২১ সালে ঢাকার তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপকের পদ থেকে সেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ছাগলকাণ্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যে তিনি বেশ কয়েক দিন উপজেলা পরিষদের কোনও কাজে অংশ নেননি। গত ২৭ জুন জনসমক্ষে আসেন তিনি।
মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার তথ্য গোপনসহ ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার শিবলীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তিনি ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে মামলায় বলা হয়েছে।