চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাস চলে গেলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি আসেনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত তার মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
নভেম্বর পর্যন্ত এডিপির এই বাস্তবায়ন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কম। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এর চেয়ে কম বাস্তবায়নের কোনও তথ্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় সর্বনিম্ম ব্যয় হয়েছিল ২০১৫- ১৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে। ওই অর্থবছরে নভেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছিল বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের সর্বশেষ এই প্রতিবেদন রবিবার প্রকাশ করেছে আইএমইডি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বরাদ্দ থেকে মাত্র ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এই ব্যয় মোট বরাদ্দের মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময় পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছিল বরাদ্দের ১৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, এবার অন্যান্য বছরের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। কারণ দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার ঢালাওভাবে অর্থ খরচ করতে চায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আসলে এবার অন্যান্য অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করা উচিত হবে না। কারণ বর্তমান সরকার মানসম্পন্নভাবে সরকারি অর্থ খরচ করতে চায়। ইতোমধ্যেই মানসম্পন্ন উপায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যাচাই বাচাই করার উদ্যোগ নিয়েছে। ওই ধারাবাহিকতায় অর্থছাড়ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই বাস্তবায়নও কম হয়েছে। তবে ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী ছয় মাসে দেশের উন্নয়নের গতি বাড়িয়ে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।”
এডিপি বাস্তবায়ন শেষ পর্যন্ত খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন এই সচিব।
আইএমইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর অনেক প্রকল্পের ঠিকাদার প্রকল্প ছেড়ে চলে গেছে। এ কারণেও এডিপি বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ বরাদ্দ বা ৭ হাজার ৭১১ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিভাগটি ব্যয় করেছে ৬ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা; বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১৭ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকার বরাদ্দ থেকে এ মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রায় ১৬ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ ব্যয় করেছে।
এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ১৩ শতাংশ এবং সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ প্রায় ১১ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১০ দশমিক ২১ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
বড় মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং সেতু বিভাগের বাস্তবায়ন ১০ শতাংশের কম।