Beta
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

কেটে গেল জাকির হুসেনের জীবনের তাল

ওস্তাদ জাকির হোসেন।
ওস্তাদ জাকির হোসেন।
[publishpress_authors_box]

সঙ্গীতে সঙ্গত দেয় তবলা, কিন্তু শুধু তবলা বাজিয়েই যে শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট রাখা যায়, তা দেখিয়েছিলেন জাকির হুসেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সেই ওস্তাদ আর নেই।

কিংবদন্তি এই তবলা বাদক সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন জাকির হুসেন।

তার ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, জাকির হুসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন। ফুসফুসজনিত অসুস্থতার জন্য দুই সপ্তাহ আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রাণপুরুষ জাকির হুসেনের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে সারাবিশ্বে কোটি কোটি ভক্তপ্রাণে।

শোক প্রকাশ করে উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান এক্স এ এক পোস্টে লিখেছেন, “জাকির ভাই ছিলেন একজন অনুপ্রেরণা। অসামান্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যিনি তবলাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। ওর চলে যাওয়া আমাদের সকলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”

জাকির হোসেনের সঙ্গে নতুন করে কাজ করতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করে এ আর রহমান লিখেছেন, “একসঙ্গে একটা অ্যালবাম করার পরিকল্পনাও করেছিলাম আমরা। যদিও কয়েক দশক আগে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তোমাকে সত্যিই মিস করব।”

ওস্তাদ জাকির হুসেন কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লারাখার প্রথম সন্তান। আল্লারাখাকে সর্বকালের সেরা তবলা বাদক হিসেবে গণ্য করা হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’এ অংশ নিয়েছিলেন আল্লারাখা। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওস্তাদ আল্লারাখাকে সম্মাননা জানিয়েছিল বাংলাদেশ। বাবার সম্মাননা স্মারক নিতে ২০১১ সালে ঢাকায় এসেছিলেন জাকির হুসেন।

জাকির হুসেনের জন্ম ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে। ৩ বছর বয়স থেকে বাবার কাছে তবলায় তার হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে প্রথম কনসার্ট। সেই থেকে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। তিনি তার বাদ্যশৈলীর মধ্য দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতজগৎকে খুব কাছাকাছি আনতে পেরেছেন।

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন জাকির হুসেন। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। শুরু হয় তার আন্তর্জাতিক সঙ্গীতাঙ্গনে বিচরণ। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি। তার পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা বাজিয়েছেন তিনি।

তার সঙ্গীতজীবনের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত। তবলায় তিনি সঙ্গত করেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকে।

১৯৯২ সালে জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’৷ এর মাধ্যমে তিনি সঙ্গীতানুরাগীদের উপহার দিয়েছেন ভারতের ধ্রুপদী সঙ্গীতের খ্যাতিমান শিল্পীসহ সমকালীন বিশ্বসঙ্গীত।

ভারত সরকার তাকে ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ ও ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ পদকে ভূষিত করে জাকির হুসেনকে।

জীবদ্দশায় গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে পুরস্কারের জন্য সাতটি মনোনয়ন পান জাকির হুসেন, যার মধ্য থেকে চারটি পুরস্কার অর্জন করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত