বিজয়ের মাসের আয়োজনের শিরোনাম ‘ডিসেম্বরের উৎসব’ দিয়েছিল শিল্পকলা একাডেমি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই নামবদল নিয়ে উঠেছিল সমালোচনা। এরপর বিজয় দিবসের দিনে আগের মতোই ‘বিজয়ের উৎসব’ নামে ফিরল এই আয়োজন।
দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে হারিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসাবে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগের শাসনকালে বিজয়ের এই মাসজুড়ে বিজয় উৎসব আয়োজন করে আসছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার শিল্পকলা একাডেমি আয়োজনের শিরোনাম করেছিল ‘ডিসেম্বরের উৎসব’। তা নিয়ে বেশ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল, যা তুলে ধরে গত শনিবার ‘শিল্পকলার ‘বিজয়ের উৎসব’ কেন হয়ে গেল ডিসেম্বরের উৎসব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এরপর সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ‘ডিসেম্বরের উৎসব’ নাম বদলে আগের নামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
বিজয় দিবসে সোমবার সকালে ‘বিজয়ের উৎসব’ লিখিত টাইপোর মাধ্যমে এক ভিডিও প্রোমো সকাল সন্ধ্যার প্রতিবেদককে পাঠান সৈয়দ জামিল আহমেদ নিজেই। ঘণ্টাখানেক পর ভিডিও প্রোমোটি প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায়ও প্রকাশ করা হয়।
ডিসেম্বরের উৎসব’ কেন নাম দিয়েছিলেন, সকাল সন্ধ্যাকে দুদিন আগে সেই যুক্তিও তুলে ধরেছিলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এখন সেই নাম পরিবর্তন নিয়ে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি জনবান্ধব এবং নমনীয়। একই সময়ে, আমরা শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের মনোলিথিক জায়গা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাই।
“যদি মানুষ বিজয়ের উৎসব দেখতে চায়, আমরা সেই ধারণাকে সাদরে গ্রহণ করি, কিন্তু একই সঙ্গে আমরা সকল শিল্পকর্ম এবং পরিবেশনায় নিজেদের উপস্থাপনার মাধ্যমে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র মনোভাবের বিরোধিতা করি। আসুন, আপনারাও পরিবেশনাগুলো উপভোগ করুন।”
তার আগে জামিল আহমেদ বলেছিলেন, ‘বিজয়ের মাস’ শব্দটি আওয়ামী লীগ তার রাজনীতির পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করে আসছিল, তা থেকে এই উৎসবকে মুক্তি দিতে চাইছিলেন তারা।
বিজয় দিবসে শিল্পকলার আয়োজন
বিজয় দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি রয়েছে। দিনের আয়োজন শুরু হয় সকাল ১০টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে।
একাডেমির সংগীত, নৃত্য এবং আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে সন্ধ্যা ৬টায় নন্দনমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংগীত ও নৃত্য আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দের সমবেত যন্ত্রসংগীত ‘দেশের গান’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। সঙ্গীত পরিচালনায় থাকবেন ফাহাল হোসাইন অন্তু। এরপর সমবেত সংগীত ‘ও আলোর পথযাত্রী’ এবং দেশাত্মবোধক গানের ম্যাশআপ- ‘সবকটা জানালা’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘বিপ্লবের রক্তে রাঙা’, ‘একতারা লাগে না আমার’ এবং ‘ও আমার দেশের মাটি’ পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীরা; একক আবৃত্তি ‘ছবি’ (আবু হেনা মোস্তফা কামাল) করবেন মাহিদুল ইসলাম মাহি।
তারপর সমবেত নৃত্য ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা, নৃত্য পরিচালনায় থাকবেন লায়লা ইয়াসমিন লাবণ্য এবং কণ্ঠে দেবেন রোখসানা আক্তার রূপসা; একক সংগীত ‘যে মাটির বুকে’ ও ‘মাগো ভাবনা কেন’ পরিবেশন করবেন পিয়াল হাসান।
সমবেত নৃত্য পরিবেশন করবে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা এবং ‘এসো বাংলাদেশের যত বীর জনতা’ ও ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ পরিবেশন করবে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ফেরদৌস আরা; সমবেত নৃত্য ‘বিপ্লবী জনতা’ পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা, পরিচালনায় থাকবেন ইমন আহমেদ, সহযোগী নৃত্য পরিচালক হিসেবে থাকবেন জাহিদুল ইসলাম সানি, গীতিকার- কফিল উদ্দিন মাহমুদ, সুরকার- ফাহাল হোসাইন অন্তু। একক আবৃত্তি করবেন দি রেইন।
সবশেষে ব্যান্ডদল ‘আর্টসেল’ এবং ‘লালন’-এর কনসার্ট হবে।
সন্ধ্যা ৭টায় চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ‘২০২৪: ঐ নূতনের কেতন ওড়ে’ মাসব্যাপী পোস্টার, পেইন্টিং, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।