বিদ্রোহীদের হাতে গত সপ্তাহে পতন ঘটে দামেস্কের। পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। তিনি কোথায় গেছেন, এনিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। পালাবার আগে কাউকে কিছু বলে যাননি বাশার।
এমনকি তার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালিও এনিয়ে অন্ধকারে ছিলেন। ৮ ডিসেম্বর রাজধানী শহর পতনের সময় বেশ কয়েকবার তিনি বাশারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
বাশার দেশ ছেড়ে কোথাও গেছেন, এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই ৯ ডিসেম্বর রুশ সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, রাশিয়ায় তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখন পর্যন্ত আসেনি।
এরপর কেটে গেল আট দিন। এসময় বাশার সম্পর্কে রাশিয়ায় পরিবার নিয়ে অবস্থান করা ছাড়া আর কোনও তথ্য সংবাদমাধ্যম দিতে পারেনি।
সোমবার তারা বাশারের একটি বিবৃতি সামনে আনল, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, রাশিয়ায় পালানোর কোনও ইচ্ছা তার ছিল না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বাশারের ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। চ্যানেলটি এখন কে নিয়ন্ত্রণ করছে, তা জানা যায়নি। বিবৃতিটি বাশার নিজে লিখেছেন কি না, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরবি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা বিবৃতিতে দামেস্ক পতনের দিন কী ঘটেছিল, কীভাবে রুশ একটি সামরিক ঘাঁটিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ২৪ বছর দেশ শাসনের পর সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার রাজধানী বিদ্রোহীরা দখলে নেওয়ার সময় দেশটির লাতাকিয়া প্রদেশে রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে যান বাশার। সেখানে সিরিয়ার কোনও সেনা ছিল না, সবাই ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায়।
ওই প্রদেশের আরেক বিমান ঘাঁটিতে তখন অনবরত ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছিল। রুশরা তখন তাকে উড়োজাহাজে করে মস্কো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, লাতাকিয়া প্রদেশের সামরিক ওই ঘাঁটি থেকে বের হওয়ার কোনও পথ না থাকায় মস্কোর অনুরোধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে দ্রুত রাশিয়ায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয় ঘাঁটিটির কমান্ড।
বাশার বলেন, “দামেস্ক পতনের সময় যা কিছু ঘটেছিল, তা দেখে আমি পদত্যাগ বা কোথাও আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবিনি। কোনও দল বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনও প্রস্তাবও পাইনি।
“দেশ যখন সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়ে এবং সে পরিস্থিতিতে অর্থপূর্ণ অবদান রাখা আর সম্ভব হয় না, তখন রাষ্ট্রীয় পদে থাকা অর্থহীন।”
বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বললেও সিরিয়ার জনগণ বাশার আল-আসাদকেই দেখে একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসাবে; যিনি নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে লাখ মানুষ হত্যার জন্য দায়ী।