ড্রেসিংরুমে বিরাট কোহলির পাশে বসে কাঁদছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অশ্বিন তাকে কিছু একটা বলছিলেন। তাকে জড়িয়ে ধরেন কোহলি। এরপর বেশ কিছুক্ষণ দু’জনকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যায়। তখন অশ্বিনের কাঁধে ছিল কোহলির হাত। কোহলি সেখান থেকে উঠে যাওয়ার পরে কোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় অশ্বিনকে।
তখনই বোঝা গিয়েছিল বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন ভারতীয় এই স্পিনার। বৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের ব্রিসবেন টেস্ট ড্রর পর সত্যি হলো সেটাই।
অশ্বিন জানিয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক তিন ফরম্যাট থেকেই অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত। সিরিজের শেষ দুই টেস্টে তাকে আর পাবে না ভারত।
রোহিত শর্মার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে অশ্বিন জানালেন, ‘‘ এখানে আমার আসার কথা ছিল না। একটা কথা সবাইকে জানাতে এসেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই আমার শেষ দিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আমি অবসর নিচ্ছি।”
টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি ছাড়লেও আইপিএলে অবশ্য খেলতে দেখা যাবে অশ্বিনকে। এ নিয়ে বললেন “মনে হয়ে এখনও কিছুটা ক্রিকেট আমার মধ্যে বাকি রয়েছে। সেটা ক্লাব স্তরের ক্রিকেটে দেখাতে চাই।’’
চেন্নাইয়ের রাস্তায় টেনিস বলে বোলিং শুরু করা অশ্বিন স্তম্ভই হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় স্পিন বোলিংয়ের। ১০৬ টেস্টে নিয়েছেন ৫৩৭ উইকেট, যা ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট তারই। ১১৬ ওয়ানডেতে ১৫৬ উইকেট আর ৬৫ টি-টোয়েন্টিতে তিনি নেন ৭২ উইকেট।
টেস্টে অশ্বিন ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন ১১ বার, যা সর্বোচ্চ। ৩৭বার নিয়েছেন ইনিংসে ৫ বা বেশি উইকেট যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। টেস্টে ৬ সেঞ্চুরিসহ তার রান ৩৫০৩। বিপদের সময় একা দলকে বাঁচিয়েছেন বহুবার। এজন্যই আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে তিনি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অলরাউন্ডার।
এমন একজন কিংবদন্তিকে কন্ডিশনের জন্যই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলানো হয়েছে তিন টেস্টের কেবল একটিতে। পরের দুই টেস্টেও জায়গা অনিশ্চিত ছিল ৩৮ বছর বয়সী অশ্বিনের। বাস্তবতাটা মেনে নিজেই তাই বিদায় বললেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে।
বিদায় বেলায় কয়েকজন সতীর্থের নাম নিয়ে অশ্বিন বললেন, “আমরা সবাই মিলে অনেক মজা করেছি। সঙ্গী হিসেবে বিরাট, রোহিত, রাহানে, পুজারাদের পেয়েছি। ওরা ব্যাটারের চার দিকে দাঁড়িয়ে আমার বলে ক্যাচ ধরে আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে।” ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন অশ্বিন।
অশ্বিনের বিদায়ী টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ৮৯ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ২৭৫ রান। তবে ভারতের ইনিংসে ২.১ ওভার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হলে ড্র মেনে নেয় দুই দল।