তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের রক্তাক্ত সংঘাতের জন্য মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের দায়ী করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম।
দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে না দিতে নতুন করে সংঘাতে না জড়াতে তাবলিগের বিবাদমান উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান রেখেছেন তিনি।
সারজিস বলেছেন, “আমরা যেন এটা মনে না করি যে এখানে জীবন দিয়ে দেব, শহীদ হয়ে জান্নাতে চলে যাব। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে এটা মনে করি যে এটা শহীদ হয়ে জান্নাতে যাওয়ার জায়গা হতে পারে না।”
ঢাকার অদূরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে মঙ্গলবার রাতে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ ও মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত দুজন নিহত হয়।
দুই পক্ষের বিবাদ এড়াতে আলোচনা যখন চলছিল, তখন এই সংঘর্ষের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বুধবার ফেইসবুকে এক ভিডিও বার্তায় এনিয়ে কথা বলেন সারজিস।
তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ কয়েক বছর ধরে চলছে। সেই কারণে ইজতেমাও দুই ভাগে হচ্ছে। মূল ইজতেমার আগে জোড় ইজতেমার জন্য মাঠ দখলের লড়াইয়ে মঙ্গলবার রাতে বাধে সংঘাত।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, তুরাগ তীরে ইজতেমা ময়দানে আগে থেকে অবস্থান করছিল মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে মাওলানা সাদের অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানে ঢুকলে সংঘর্ষ বাধে।
এবার ইজতেমার আগে বিরোধ প্রশমনে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে সারজিস বলেন, মাওলানা সাদের অনুসারীদের সঙ্গে যখন তারা আলোচনায় বসেছিলেণ, তখন তারা দুটি দাবি জানায়। তার একটি হলো ভারতের মাওলানা সাদের ভিসা নিশ্চিত করা, দ্বিতীয়টি হলো জোড় ইজতেমার জন্য ২০-২৫ ডিসেম্বর ৫ দিনের জন্য মাঠ তাদের বরাদ্দ দেওয়া।
তাদের সঙ্গে আলোচনার পর মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাকরাইল গিয়েছিলেন সারজিসসহ অন্যরা। তখনই খবর পান যে ইজতেমা মাঠে মাওলানা সাদের অনুসারীরা যাচ্ছে এবং তাতে সংঘর্ষ বেধেছে।
সারজিস বলেন, “শুনেই তাদের (সাদের অনুসারী) ফোন করি। তাদের বলি,আলোচনা চলাকালে আপনারা যদি মুভ করেন, তাহলে আমরা আপনাদের সাথে থাকব না।
“তারা কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে দখলের দিকে গেল। তাতে যে সংঘর্ষ ঘটল, তাতে ৩-৪ টি প্রাণ হারিয়েছি আমরা।”
সাদের অনুসারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা আমাদের মতের বাইরে গিয়ে, আলোচনায় শ্রদ্ধা বা সম্মানটুকুও করা হয়নি। এক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে সেখানে আক্রমণ ও রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে।”
জুবায়েরের অনুসারীদেরও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, যাতে সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি না হয়।
তাবলিগের সংঘাত নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “সাদপন্থী সমর্থিত ‘সচেতন ছাত্র সমাজের’ দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি এবং সকাল ১০টার মধ্যে মাওলানা সাদ সাহেবের ভিসার জন্য বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণার কারণে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সাদপন্থীদের সাথে আলোচনার জন্য টঙ্গী যাই।
“সেখানে আলোচনা শেষে তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন এবং মাওলানা সাদ সাহেবের ভিসা জটিলতা নিরসনে পুনরায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে তারা টঙ্গী ময়দানে জোড়ের শর্ত দেন এবং ২৫ তারিখ মাঠ ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। টঙ্গীতে এই তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়।”
হাসনাতে লিখেছেন, তারা সাদের অনুসারীদের বলে এসেছিলেন যে জুবায়েরের অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনার পর এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
“এই উদ্দেশ্যে রাত ২টায় কাকরাইলে আলোচনার জন্য যাই। সেখানে মাওলানা মাহফুজুল হক ও মাওলানা মামুনুল হকসহ অন্যান্য আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর সাদপন্থীদের একজন মুফতি সাহেবের একটি পোস্ট আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়, যেখানে খণ্ডিত ভিডিও প্রচার করে বলা হয়েছে আমরা নাকি তাদের জোড় (ইজতেমা) করার অনুমতি দিয়েছি। এটি আমাদের সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিপরীত।”
তখন সাদের অনুসারীদের ফোন করে ময়দানে না ঢুকতে বারণ করা হয়েছিল জানিয়ে হাসনাত লিখেছেন, “কিন্তু এর আগেই এই নির্মম ঘটনা ঘটেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।”
তাবলিগের দ্বন্দ্বের বিষয়ে আলেমদের আলোচনার মাধ্যমেই সুরাহার আহ্বান জানান হাসানাত।
এদিকে রাতের সংঘর্ষের পর টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। দুই পক্ষের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা বৈঠকও করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।