বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসেবে মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম উচ্চারণ করেন অনেকে। পাশাপাশি দীর্ঘশ্বাসে বুক ভারিও করেন প্রতিভার নিদারুণ অপচয় করা এই ক্রিকেটার। অতীত হয়েও তিনি বারবার ফিরে আসেন অন্য কোনও ক্রিকেটারে ভর করে। সবচেয়ে বেশি এসেছেন সম্ভবত লিটন দাসের সৌজন্যে। বলা হয়, আশরাফুলের পর টেকনিক্যালি সবচেয়ে সেরা লিটন।
আশরাফুল হারিয়েছেন জুয়ার অন্ধকারে ডুবে। লিটনের এ জাতীয় সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিভার অপচয় তিনিও করছেন ম্যাচের পর ম্যাচ, সময়ের পর সময় ধরে। এই উইকেটকিপারের ব্যাটে নাকি থাকে শিল্পের ছোঁয়া। মাঠকে যিনি ক্যানভাস করে ব্যাটকে তুলি বানিয়ে এঁকে চলেন আপনমনে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় ক্যানভাসে তার তুলি যতটা সুন্দর চিত্রকর্ম সাজিয়েছে, তার চেয়ে বেশি নষ্ট করেছে।
লিটনের প্রতিভা নিয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তার এফোর্টলেস শট মুগ্ধতা ছড়ায়, চোখে আরাম দেয়। কিন্তু অহেতুক শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার ঘটনাও নেহাত কম নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির কথাই ধরা যাক। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হলেন। শট নির্বাচনের এমন ভুল তার ক্যারিয়ারজুড়ে নতুন নয়। যার চরম খেসারত দিচ্ছেন দিনের পর দিন।
লিটন কি অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী নাকি তার অ্যাটাকিং ক্রিকেট এখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? দুটোই হতে পারে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। দিনে দিনে তার অভিজ্ঞতা তো কম হলো না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করেছেন ৯ বছর। দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় একই ভুল করেও কেন নিজেকে শুধরাতে পারছেন না এই উইকেটকিপার ব্যাটার? লিটনের এই প্রতিভা বড় রহস্যময়!
সাদা বলের ক্রিকেটে তার সমস্যা প্রকট। সাদার মধ্যেই অন্ধকারে ডুবছেন বেশি। সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরি দূরে থাক, দুই অঙ্কের ঘরে পর্যন্ত যেতে পারছেন না লিটন! গত ১২ অক্টোবরের পর সাদা বলের ক্রিকেটে খেলেছেন ৫ ম্যাচ। ওয়ানডেতে ৩ ও টি-টোয়েন্টিতে ২- এই ৫ ম্যাচে ডাবল ডিজিটের স্কোরেও পৌঁছাতে পারেননি তিনি।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ওয়ানডেতে। টানা ৭ ম্যাচে ডাবল ডিজিটে যেতে পারেননি লিটন। এই সংস্করণে সবশেষ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছিলেন ঠিক এক বছর আগে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর। সবশেষ ৭ ওয়ানডেতে তার ইনিংসগুলো যথাক্রমে- ৬, ১*, ০, ০, ২, ৪, ০।
লিটনের অবস্থা কতটা করুণ, স্পষ্ট করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সাদা বলের ম্যাচগুলোর দিকে তাকানো যাক। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচের একটিতেও ডাবল ডিজিটের ইনিংস নেই। বাজে ফর্মের এই লিটনের কাঁধেই দেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব। এমনিতেই ফর্মহীনতার চাপে নাভিশ্বাস ওঠা লিটন নেতৃত্বের ভারে-চাপে আরও চ্যাপ্টা! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শূন্য রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে আউট ৩ রানে।
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ৬ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন লিটন। ২০০৪ সালে রাজিন সালেহর (৮ ইনিংস) পর সর্বোচ্চ ‘ডাক’ মারার লজ্জার ডুবেছেন তিনি। শূন্যের সংখ্যাটা যদি ওয়ানডেতে হিসাব করা যায়, সেখানে লিটন নিজেই লজ্জায় মুখ লুকাবেন! এ বছর খেলা ৫ ওয়ানডের তিনটিতেই আউট হয়েছেন শূন্য রানে!
ব্যাটিং পজিশনের কারণেই কি এই সমস্যা? এই অজুহাত দাঁড় করার সুযোগ নেই। এ বছর খেলা ৫ ওয়ানডের যে দুটিতে ওপেন করেছেন, দুটিতেই ‘ডাক’। ওপেনিংয়ে যেহেতু হচ্ছে না, ওয়ান ডাউনে দেখা যাক। নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় তিনে নামার সুযোগ হয়। সেখানেও ডাবল ডিজিটে যেতে পারেননি।
টি-টোয়েন্টিতেও একই অবস্থা। প্রথম ম্যাচে ওয়ান ডাউনে নেমে শূন্য করলেন। ফর্ম ফেরাতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে নেমে আউট ৩ রানে। অর্থাৎ, পজিশন পাল্টেও ভাগ্য বদল হচ্ছে না। সাদা বলে শুধু অন্ধকারেই হারাচ্ছেন লিটন।
তাই বলে টেস্টে ভালো আছেন, সেটাও-বা বলার সুযোগ কোথায়! সবশেষ ১০ ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান ৪০। ৫ ইনিংসে যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। লিটনের স্বস্তি খোঁজার জায়গা কোথাও নেই!