Beta
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

টি-টোয়েন্টিতে উইন্ডিজকে প্রথম হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশের

Bangladesh
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

[publishpress_authors_box]

হোয়াইটওয়াশের জবাবে হোয়াইটওয়াশ! ক্যারিবিয়ানরা বাংলাদেশ দলের প্রিয় ওয়ানডে ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ করেছে এক সপ্তাহ আগে। এবার উইন্ডিজকে তাদের প্রিয় ফরম্যাটে হোয়াইটয়াশ করে জবাব দিলো বাংলাদেশ দল। সিরিজের শেষ ম্যাচে একপেশে লড়াইয়ে ৮৫ রানে জিতেছেন লিটন দাশরা।

দারুণ এই জয়ে ২০০৯ সালের পর আবারও উইন্ডিজে স্মরণীয় সফর শেষ করল বাংলাদেশ। এবার টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইট করার আনন্দ এসেছে।

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই দুর্দান্ত সফর কেটেছে এবার। টেস্ট জয়, ওয়ানডেতে হারলেও ব্যাটারদের রানে ফেরা আর টি-টোয়েন্টিতে এই ফরম্যাটের সমীকরণ ধরে ফেলা, সবকিছুই বাংলাদেশ দলকে দারুণ স্মৃতিতে বছর শেষ করার আনন্দ দিলো।

এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুধু নয়, পুরো সফরেই বাংলাদেশের নায়ক জাকের আলি। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ ইনিংসে ৪০৯ করেছেন জাকের। ফিফটি ছিল চারটি। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা স্কোর এসেছে তার। সিরিজের শেষ ম্যাচে দারুণ শক্তিতে দেখালেন ব্যাটিং পাওয়ার।

জাকেরের ব্যাটিং স্ট্যান্স এমনিতেই বোলারদের বিভ্রান্ত করে। কোন জায়গায় বল ফেলবেন তা নিয়ে দ্বিধা তৈরি করে। বোলারদের সেই দ্বিধায় ফেলে জাকের দারুণ সুবিধা নিয়েছেন। ফিল্ডিং প্লেসিং বুঝে বাউন্ডারী হাঁকানো। স্ট্রেইট ব্যাটে জোরের সঙ্গে শট নেওয়া সব কিছু নতুন রপ্ত করেছেন জাকের।

সেই সঙ্গে অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে মিড উইকেট বা মিড অনের ওপর দিয়ে বল সীমানা ছাড়া করার শক্তি আগেই থেকেই ছিল তার। আজও স্টেডিয়ামের বাইরে ফেলেছেন কিছু বল। শুরুর ১৩ বলে ১৮ রান ছিল জাকেরের। রান আউট হয়ে ঘঠনাচক্রে আবার ফিরলেণ ক্রিজে। এরপর ঝড় তুলে মাত্র ২৮ বলে ৫৪ রান তুলেছেন।

জাকেরের ৭২ রানের পাশাপাশি শুরুতে পারভেজ হোসেন ইমনের ২১ বলে ৩৯ রানে বিশাল স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ।

ব্যাটাররা নিজেদের কাজ করেছেন এবার বোলারদের সামলানোর পালা। ওয়ানডে সিরিজে বড় রান সামনে পেয়েও তা ডিফেন্ড করতে ব্যর্থ ছিলেন বোলাররা। সেই ভুল শুধরে টি-টোয়েন্টিতে অসাধারণ তারা সবাই।

কোন একক বোলারের ওপর ভরসা নয়। সবাই মিলে দলগত পারফরম্যান্সে ছোট রান যেমন ডিফেন্ড করেছেন তেমনি বড় রানও। তাসকিন আহমেদ ও মেহেদি হাসান জুটি সিরিজের প্রতি ম্যাচে দলকে দ্রুত উইকেট এনে দিয়েছেন। তিন ম্যাচে দুজনেরই সাতটি করে উইকেট।

তাদের আঘাতে তিন ম্যাচেই পাওয়ার প্লেতে পথহারা হয়েছে উইন্ডিজ টপঅর্ডাররা। মাঝের ওভারে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কীর্তি দেখালেন হাসান মাহমুদ ও তানজিদ হাসান সাকিব। ওবল সিমে ডিলেভারি, শর্ট বাউন্সে ব্যাটারদে বিভ্রান্ত করা, পিচ থেকে এক্সট্রা বাউন্স আদায় করা কিংবা স্লোয়ারে রান আটকে দেওয়া সব কিছু একদম পারফেক্ট ছিল হাসান-তানজিমের। শেষ ম্যাচে তাদের সঙ্গে উইকেট নেওয়ায় যোগ দেন রিশাদ হোসেন।

সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নসি ট্রফির আগে নিঁখুত একটি সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ। সঙ্গে নিয়ে আসছে আত্মবিশ্বাস। টি-টোয়েন্টির ইতিবাচকতা পুঁজি করে পরের আন্তর্জাতিক আসরের ছক কষতে পারবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১৮৯/৭; ২০ ওভার (ইমন ৩৯, জাকের ৭২*, মিরাজ ২৯, সাকিব ১৭*; মোতি ২/২৫, শেফার্ড ২/৩০, চেজ ১/১৫)। উইন্ডিজ : ১০৯/১০, ১৬.৪ ওভার (শেফার্ড ৩৩, চার্লস ২৩, নিকোলাস ১৫; তাসকিন ২/৩০, মেহেদি ২/১৩, হাসান ১/৯, রিশাদ ৩/২১)। ফল : বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : জাকের আলি। সিরিজ সেরা : মেহেদি হাসান।

পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে উইন্ডিজ

সিরিজের শেষ ম্যাচে উইন্ডিজকে কোনঠাসা করে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাটিংয়ে জাকের আলির পাওয়ার হিটিংয়ে স্বাগতিকদের বিশাল লক্ষ্য দেওয়া গেছে। বোলিংয়েও দাপট দেখিয়ে উইন্ডিজ ইনিংসের শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ।

পাওয়ার প্লেতে ৩ ও সপ্তম ওভারে আরও দুই উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বিপদে ফেলেছে বাংলাদেশ। সপ্তম ওভার শেষে ৫ উইকেটে ৪৭ রান স্বাগতিকদের। অফস্পিনার মেহেদি হাসানের জোড়া উইকেটে এই সাফল্য বাংলাদেশের।

সিরিজে তৃতীয়বারের মতো নিকোলাস পুরানের উইকেট নিয়েছেন মেহেদি। এবার ১০ বলে ১৫ রান করা পুরান শর্ট বলটিতে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হলেন। এর আগে লংঅন দিয়ে বড় শট খেলতে যাওয়া জাস্টিন গ্রিভসকে ফেরান মেহেদি। মেহেদির মতো তৃতীয় ম্যাচে একই ব্যাটারকে নিজের শিকার বানিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। তার বলে তিন ম্যাচে আউট হয়েছেন ব্র্যান্ডন কিং। সপ্তম ওভারে হাসান মাহমুদকে লফটেড শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ০ রানে থাকা রস্টন চেজ। একই ওভারে রান আউট হয়ে ফিরেছেন ১৮ বলে ২৩ রান করা জনসন চার্লস।

অবিশ্বাস্য পাওয়ার হিটিংয়ে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহ এনে দেন জাকের। ছবি : উইন্ডিজ ক্রিকেট

জাকেরের পাওয়ার হিটিংয়ে বাংলাদেশের বিশাল স্কোর

স্বপ্নের মতো একটি সিরিজ কাটিয়েছেন জাকের আলি। উইন্ডিজের এই সফর তার আজীবন মনে থাকবে অবশ্যই। অনেক বড় তারকা হলেও ক্যারিয়ার শুরুর এই সফরে নিজের ব্যাটিং স্বত্বার আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে জাকের। টেস্টে, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে সমান সফল ছিলেন এই ব্যাটার।

সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে আরও একবার পাওয়ার হিটিংয়ের ঝলক দেখালেন জাকের। মাত্র ৪১ বলে ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৭২ রান তার ক্যারিয়ার সেরা। এর মধ্যে তিনটি ছক্কা মেরেছেন আলজারি জোসেফের শেষ ওভারে।

তাতে এই মাঠে নিজেদের সর্বোচ্চ ৭ উইকেটে ১৮৯ রান করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এই স্কোর দলটির বিপক্ষে তাদের মাটিতে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

অষ্টম উইকেট জুটিতে ১৭ রান করা তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়েম মাত্র ২৭ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েছেন জাকের। মাত্র ১৮ রানে রান আউটে কাটা পড়া এবং নাটকীয় ভাবে ফিরে আসার পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে দলকে বিশাল স্কোর এনে দিয়েছেন এই ব্যাটার।

নাটকীয় ঘটনায় ড্রেসিংরুম থেকে জাকেরকে ফেরানো হলো ক্রিজে

ড্রেসিংরুম থেকে আউট হওয়া ব্যাটারকে ফিরিয়ে আনা হলো ক্রিজে। আম্পায়ার নিজে গিয়ে ডেকে আনলেন। এমন ঘটনা আগে কখনও হয়েছে কি! অতীত ঘেটে দেখার বিষয়। তবে যেটা হয়েছে সেন্ট ভিনসেন্টে তা সত্যিই নাটকীয়।

১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট মিডউইকেটে বল ঠেলেই সজোড়ে এক রান নিলেন জাকের আলি। দ্বিতীয় রানের জন্য ফিরতি রান নিতে ছুটলেন। ওদিকে অপর ব্যাটার শামীম হোসেন দ্বিতীয় রানের দৌড় শুরু করেও ফিরে গেলেন নিজের প্রান্তে। ততক্ষণে জাকেরও একই প্রান্তে চলে গেছেন।

অপরপ্রান্তে উইন্ডিজ ফিল্ডাররা স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দিয়েছেন। খালি চোখে জাকের রান আউট। দ্বিতীয় রান নেওয়ার পথে বারবার উইকেট ছাড়তে বলেছিলেন শামীমকে কিন্তু অনুজ তা মানেননি। রানআউট হয়ে রাগে গজ গজ করতে একেবারে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান জাকের।

কিন্তু এমন অবস্থায় সবসময়ই ব্যাটাররা অপেক্ষা করেন কে রান আউট হয়েছেন তা জানতে। কিন্তু জাকের তা করেননি। ওদিকে টিভি আম্পায়ারের রিপ্লেও দেখা শেষ হয়নি। রিপ্লেতে দেখা যায় উইন্ডিজ বোলার রস্টন চেজ স্ট্যাম্পের বেল ফেলে দেওয়ার আগে অপরপ্রান্তে শামীমের আগেই পপিং ক্রিজে ব্যাট রাখেন জাকের। পরে ব্যাট ফেলেন শামীম।

তাই আম্পায়ার গ্রেগরি ব্র্যাথওয়েট ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়ে জাকেরকে ডেকে আনলেন ক্রিজে। শামীম ফিরলেন ড্রেসিংরুমে।

অবশ্য এই ঘটনার পরের বলেই আরেকটি রান আউট হজম করতে হয় বাংলাদেশকে। আরও একবার দৌড়ে রান নিতে গিয়ে রভম্যান পাওয়েলের দারুণ ফিল্ডিং ও থ্রোতে রান আউট হয়েছেন মেহেদি হাসান।

জাকেরের ২৫ বলে ৩২ রানে ৬ উইকেটে ১৩০ রান বাংলাদেশের।

ভালো পিচে রানের দেখা

আগের ম্যাচগুলোতে ১২ ওভার শেষে কোনরকমে ৬০-৭০ রানের ঘরে ছিল স্কোর। সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে তা ছাড়িয়ে গেল। ১২ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৯৮ রান বাংলাদেশের।

সিরিজের শেষ ম্যাচে বেশ ভালো পিচে খেলা হচ্ছে। লিটন, ইমনদের বড় শটের ভুলগুলো না হলে উইকেটের সংখ্যা আরও কম থাকতো। লিটনের ফেরার পর মাত্র ২১ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরেছিল উইন্ডিজ।

মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাটে আবারও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের। ২১ বলে ২৭ রান নিয়ে উইন্ডিজ সফরে আরও একবার দলকে ভালো অবস্থানে রেখেছেন মিরাজ।  

লিটন থামলেন অল্পতেই পাওয়ার প্লেতে বিধ্বংসী ইনিংস ইমনের

ছয় ইনিংস পর দুই অঙ্কের ঘরে রান পেয়েছিলেন লিটন দাস। তিনটি দুর্দান্ত চারের মার ছিল ব্যাটে। অবশ্য রানে ফেরার এই ইনিংস খুব বেশি দূর নিতে পারেননি। মাত্র ১৩ বলে ৩ চারে ১৪ রান করে পুল শট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন।

লিটন ফিরলেও পাওয়ার প্লের পুরোটা সময় বিধ্বংসী ছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। মাত্র ২১ বলে ২ ছক্কা ও ৪ টি চারে ২১ বলে ৩৯ রান তার।সিরিজের শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন ইমন। পুরো সময় ইমনের প্রতিটি শটেই ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ।

পাওয়ার প্লেতে ইমনের ঝড়ো ইনিংসেই প্রথমবার চল্লিশ ছাড়ানো স্কোর এসেছে। উদ্বোধনী জুটি ছিল ২৮ বলে ৪৪ রানের। ৬ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৫৪ রান বাংলাদেশের।   

টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ লিটনের দু’অঙ্কের ঘরে রান

টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে টস ভাগ্যে জিতেছেন লিটন দাস। আগের দুই ম্রাচের মতো এবারও আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তিনি।

টস ভাগ্যের সঙ্গে রানের ভাগ্যও হয়তো ফিরেছে লিটনের। টানা ছয় ইনিংস পর দুই অঙ্কের ঘরে রানের দেখা পেয়েছেন এই ব্যাটার। ব্যাট করছেন ৯ বলে ১০ রানে। সঙ্গে সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া পারভেজ হোসেন ইমন ব্যাট করছেন ৮ বলে ১৬ রানে।

বাংলাদেশ একটি পরিবর্তন ছাড়া একাদশ অপরিবর্তিত রেখেছে। উইন্ডিজ একাদশে দুই পরিবর্তন নিয়ে খেলছে। আন্দ্রে ফ্লেচার ও আকিল হোসেনের জায়গায় খেলছেন জাস্টিন গ্রিভস ও জেডন সিলস।

বাংলাদেশ : তানজিদ তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস (অধিনায়ক), মেহেদি হাসান মিরাজ, শামীম হোসেন, জাকের আলি, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব, মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ।

উইন্ডিজ : ব্র্যান্ডন কিং, জনসন চার্লস, নিকোলাস পুরান, জাস্টিন গ্রিভস, রভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), রোমারিও শেফার্ড, রস্টন চেজ, জেডন সিলস, গুদাকেশ মোতি, আলজারি জোসেফ, ওবেদ ম্যাকয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত