Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

দুটি ফ্ল্যাট, একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র; দুদক চেয়ারম্যানের সম্পদ এই

ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মোমেন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মোমেন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, স্ত্রীর সঙ্গে একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ নিজের সম্পদের হিসাব দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

মাত্র ১২ দিন আগে দুদকে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই নিজের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবেন।

রবিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সম্পদের হিসাব দেওয়ার পাশাপাশি সম্পদের উৎসেরও তথ্য তুলে ধরে তিনি। 

এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন জানিয়ে চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন বলেন, “আমরা সবাই সম্পদ বিবরণী দাখিল করব। আমি সাংবাদিকদেরও বলে যাচ্ছি। মৌখিকভাবে বলছি, প্রয়োজনে লিখিতভাবে দিবে পারব।”

চাকরি শুরু করা আগে স্কুল পাস করার পর থেকেই উপার্জন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের জানা দরকার। এ চাকরি থেকে চলে যাওয়ার পর আপনারা হিসাব করবেন সম্পদ কতটা বাড়ল বা কমল। তখন আপনারা ধরতে পারবেন, কী পরিমাণ বাড়তি কামাই করেছি বা করিনি।”

সম্পদ বিবরণী

নিজের সম্পদের তথ্য তুলে ধরে সাবেক সচিব আবদুল মোমেন বলেন, “ঢাকার বসিলায় আমার ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। সেখানে আরও ৭০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার ৫ কাঠার একটি খালি জায়গা (প্লট) আছে।”

বিসিএস প্রশাসন সমিতির সদস্য ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, সেই সমিতির আট সদস্য মিলে ১০ কাঠার একটি প্লট কিনেছেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এ প্লটের মধ্যে আমার ভাগে ১ দশমিক ২৫ কাঠা পড়বে। ২০০৭ সালে টাকা-পয়সা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত দখলে নেই, ফলে এটা অনিশ্চিত।”

এছাড়া রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন, এখন র্পযন্ত সেটার নিষ্পত্তি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “যেকোনো কারণে তৎকালীন সরকার আমাকে দেয়নি (রাজউক প্লট)। এটার ব্যাপারে আবার আবেদন করব।”

এর বাইরে আর স্থাবর সম্পত্তি নেই জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, “যদি আপনারা কখনও খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা যাবে, কিংবা আপনারা যেভাবে ডিসপোজাল করতে চান।”

অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ২৫ সেলফ ভর্তি দেশি-বিদেশি বই এবং বাসায় পাঁচ লাখ টাকার মতো আসবাবপত্র আছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।

দুটি সঞ্চয়পত্র রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “৩০ লাখ টাকার ৫ বছর মেয়াদী একটি সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর ২০ লাখ টাকার আরেকটি সঞ্চয়পত্র আছে। আমার জিপিএফের (সাধারণ ভবিষৎ তহবিল) টাকা এখনও তুলিনি, সেখানে আছে ১৭ লাখ টাকা আছে। সরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের এই ফান্ড থাকে।”

টাকার উৎসের ব্যাপারে চাকরি থেকে আয় এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থের কথা জানালেন দুদক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “এখন যে পান্থপথের শমরিতা হাসপতাল, এর একটি বড় অংশ আমাদের বাগান বাড়ি ছিল। আমরা অনেক ভাই-বোন, সবাই মিলে সেটা বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে একটা ফিক্সড ডিপোজিট করেছি।”

এছাড়া শিক্ষকতা, বক্তৃতা এবং লেখালিখি করে সম্মানির কিছু অর্থ পেয়েছেন বলেও জানান আবদুল মোমেন।

একসময় ঢাকার বেঁড়িবাধের বাইরে সাড়ে ৫ শতক জমি কিনেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটা বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছি। আর হাতে নগদ এবং ব্যাংক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার মত রয়েছে।”

২০০৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে ওএসডি হওয়ার পর চাকরি চলে যায় জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এখন যেহেতু চাকরি ফিরে পেয়েছি, সুতরাং পেনশন ও অন্যান্য বেনিফিট সবই পাব, হঠাৎ করে দেখা যাবে আমার টাকার অংক বেড়ে গেছে।”

বর্তমান দায়িত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন-ভাতা পান জানিয়ে তিনি বলেন, “মূল বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, বিশেষ ভাতা এবং অন্যান্য ভাতা পাই। এর বাইরে অন্য কোনও খাতে উপার্জেনের সুযোগ দেখি না।” 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ছকে কাজ করবে দুদক

মতবিনিময়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দুদকের নতুন চেয়ারম্যান।

এসময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য প্রভাবশালীদের সরাসরি হস্তক্ষেপে দুর্নীতি হয়েছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে দুদক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা?

জবাবে আবদুল মোমেন বলেন, “দুদক কীভাবে কাজ করবে এ বিষয়ে আইনগত একটি ছক আছে। সেই আইনের যতটুকু কভার করবে আমরা সবটুকুই করব।”

রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা থাকেন, তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন এক সাংবাদিক।

এ বিষয়ে দুদব চেয়ারম্যান বলেন, “এই মন্তব্যটি কোনও অসমীচীন বক্তব্য নয়। বাংলাদেশ অতীতে এটাই দেখে এসেছে। আপনারাই (সাংবাদিক) বলেছেন-যেহেতু রাজনৈতিক সরকার নেই, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যে সরকার জনপ্রত্যাশাকে লালন করার জন্য, বাস্তবায়ন করার জন্য জনগণই এ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে।”

৫ আগস্টের বিপ্লব না হলে নতুন কমিশন নিয়োগ পেত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি যে, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং বায়তুল মোকাররমের ইমাম পালিয়ে গেছে। এটা একটি উদ্ভুত ঘটনা। পৃথিবীতে অনেক আন্দোলন হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন। কিন্তু পোপ পালিয়ে গেছেন, এমন ঘটনা ঘটেনি।”

অনুসন্ধান ও তদন্তের ওপর একটি মামলার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে উল্লেখ করে কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, “আমরা নির্মহ ও নির্ভুলভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জাতির কাছে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে জানাতে চাই, কারও ভয়ভীতি বা অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে এ কাজটি করব না। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করব।”

আরেক কমিশনার (অনুসন্ধান) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, “সারাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, অঙ্গ-প্রতঙ্গে দুর্নীতি। দুর্নীতি এবং অন্যায়ের ব্যাপকতা এবং মাত্রার গভীরতা কী, এখনও আমরা বুঝতেই পারিনি। ইনশাল্লাহ আমরা জানতে পারব। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে চাই।”

তিনি বলেন, “আমরা দেখলাম দেশের নিলাম হয়ে যাওয়া মেরুদণ্ড কীভাবে জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবের মাধ্যমে পুনস্থাপন হল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ কিন্তু মহাবিপ্লবের ধারা বজায় রেখেই। অতএব বিজয় আমাদের আসতে বাধ্য।”

এ কমিশনের নাম দুর্নীতি দমন কমিশন, এটি দুর্নীতিগ্রস্ত দমন কমিশন নয়, উল্লেখ করে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের ফোকাস যদি থাকে দুর্নীতি, তাহলে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট যে কেউ হোক, দুর্নীতি টানলে সেও আসবে। এইটুকু সাহস আমাদের আছে, এই কমিশনের মধ্যে। আমাদের ভয়ভীতি শুধু মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে, পৃথিবীর কোনও মানুষের দাসত্ব এই কমিশন করবে না।”

মতবিনিময় সভায় দুদক বিটে কর্মরত সাংদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইস্ট করাপশন-র‌্যাকের একাধিক সদস্য বক্তব্য দেন। র‌্যাকের সভাপতি ও একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার জেমসন মাহবুব ও সাধারণ সম্পাদক শাফি উদ্দিন মতবিনিময় সভার সঞ্চালনা করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত