Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

পিলখানা হত্যা : ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন

আ ল ম ফজলুর রহমান।
আ ল ম ফজলুর রহমান।
[publishpress_authors_box]

দেড় দশক আগে বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাতে নেতৃত্ব দেবেন এই বাহিনীর এক সময়ের প্রধান আ ল ম ফজলুর রহমান।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের চার দিন পর সোমবার এই কমিশন গঠনের খবর দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

এদিন পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে বিজিবির পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। গতকাল (রবিবার) রাতে ফাইলে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করেছেন।”

তিনি জানান, এ এল এম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিশনে সামরিক বাহিনীর দুজন, সিভিল সার্ভিসের একজন ও পুলিশের একজন কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক থাকবেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ফজলুর রহমান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল হিসাবে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিডিআরের মহাপরিচালক ছিলেন।

২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি বিডিআরের মহাপরিচালক থাকার সময় টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীদের সংঘর্ষ ছিল আলোচিত ঘটনা।

২০০৯ সালে বিডিআরে বিদ্রোহের সময় পিলখানায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে পাক্ষিক চিন্তায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ফজলুর রহমান বলেছিলেন, “আমি তো অফিসারদের সাথে কথা বলেছি, সেখানে কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন আমার জানা যে ইতিহাস, সেখানে এত অল্প সময়ে এত অফিসারকে মেরে ফেলেছে তাদের সোলজাররা, এই দৃষ্টান্ত কিন্তু নাই। পৃথিবীর ইতিহাসে নাই।

“তাদের দেহগুলোকে বিকৃত করা, লুটপাট করা, এটা সোলজারদের কাজ হতে পারে না। এটা অসৈনিকসুলভ কাজ। সন্ত্রাসী কাজ। প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার যে কাজ, এই কাজ সেই পর্যায়ে পড়ে। একটা সৈনিকের দ্বারা একাজ হতে পারে না।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌথুরী সোমবার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি দিবসের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পরের মাসেই সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিডিআরে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। তাতে পিলখানায় বাহিনীর সদর দপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়।

২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ওই রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। বিডিআর বা বাংলাদেশ রাইফেলস থেকে পরিবর্তিত হয়ে এই বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

তখন বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়।

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। বর্তমানে এ মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেড় দশক পর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা পড়েছে।

তাতে আসামি হিসাবে শেখ হাসিনা, মইন উ আহমেদের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ ৫৮ জনকে।

আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে অভিযোগে।

ওই অভিযোগ জমা পড়ার চার দিন পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম ওই ঘটনারে তন্তে কমিশন গঠনের খবর জানালেন।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম বিডিআর বিদ্রোহের সময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) পদে কর্মরত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত