শীত মানে হলো একেতো দিন ছোট হয়ে আসে, উপরন্তু সূর্যের আলোতে তেজ কমে আছে। এই সময় বাগানিদের চিন্তা আর ব্যস্ততা বেড়ে যায় শখের গাছগুলো নিয়ে।
বিশেষ করে শহরে যারা বারান্দায় বাগান করেন, শীতে তারা পর্যাপ্ত আলো পাওয়া নিয়ে মুশকিলে পড়ে যান।
শীতে অনেক গাছই বৃদ্ধি একেবারে থামিয়ে দেয়; যাকে বলে শীতনিদ্রায় চলে যাওয়া। অনেক গাছের পাতা হলুদ হয়ে আসে, পাতা ঝরে গাছ একেবারে ন্যাড়া হয়েও যায়।
আবার ঝলমল করে ফুল-ফল দিচ্ছে এমন শীতের সৌখিন গাছ এবং সবজিও আছে।
গরম ও বর্ষায় জৈব সার, তরল সার দিলে গাছ সহজেই তা খাদ্য হিসাবে নিয়ে তরতর করে বেড়ে ওঠে। কিন্তু শীতে কী সার দেবেন? আর কোন গাছে সার দেবেন?
এসব নিয়ে ঘর, বারান্দা থেকে ছাদে গাছ রাখা বাগানিরা হিমশিম খেয়ে বাগানের অনেক প্রিয় গাছ হারাতে বসেন।
শীতে কি বাগানের গাছে সার দেয়া যায়?
এক কথায় এর উত্তর হচ্ছে, হ্যা।
তবে তার আগে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখে নিন। মাটিতে কোনো ধরনের পুষ্টির অভাব আছে তা জেনে সার দিলে, শীতে শিকড় পচার হাত থেকে প্রিয় গাছটিতে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন।
বড় টব হলে সহজেই ঝরঝরে জৈব সার দেয়া যায়। বাড়িতে সবজির খোসা কুচি করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া যায়। মাঝে মাঝেই ডিমের খোসা গুঁড়া করে দেয়া যায়।
সবজি ও ফলের গাছ থাকলে বাগানে রাসায়নিক সার একেবারে এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো।
শীতে যেসব গাছের পাতা ঝরে গেছে, বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে তাতে অতিরিক্ত সার দেয়ার দরকার নেই। বরং দিনের বেলা একটু আলো আসে এমন জায়গায় রেখে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানি দিলে এই মৌসুমে গাছটি ঠিক মতো টিকে থাকবে; শীত শেষ হতেই আবার নতুন পাতা-ডালে ভরে উঠবে এই গাছ।
কিন্তু যেসব গাছ শীতে ফুল-ফল দিচ্ছে, বেড়ে উঠছে তাতে অবশ্যই সার দিতে হবে।
শীত আসি আসি করা নভেম্বর মাস বাগানিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে প্রয়োজন মতো সার দিয়ে রাখা যায় বাগানের প্রায় সব গাছেই। এতেই বাংলাদেশে শীতের দুই-আড়াই মাস ভালো ভাবে পার করতে পারবে আপনার বাগান।
বারান্দা ও ছাদের টবের জন্য তরল সার হলো খুবই ভালো খাবার। সবজি পচিয়ে বেশি করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে তা মাটিতে দিলে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি শুষে নিতে পারবে। বিশেষ করে শীতে বাড়ন্ত সবজি, ফুল-ফল গাছের জন্য প্রতি সপ্তাহে তরল সার দেয়া যেতে পারে।
সার অবশ্যই শুকনো মাটিতে এবং পড়ন্ত আলোয় দিতে হবে।
সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন সরিষার খৈল ভিজিয়ে রেখে পরে তা বালতি ভরা পানিতে মিশিয়ে নিন। অর্থ্যাৎ এই তরল সার যত পাতলা করে দেয়া যায় তত ভালো; নয়তো গাছের শিকড় পচে যেতে পারে।
এভাবে নিম খৈল দেয়া যেতে পারে দুয়েক মাসে একবার। আর এপসম সল্ট পানিতে গুলে গাছে দেয়া যেতে পারে ১৫ দিন পর পর অথবা মাসে একবার।