বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী।
উপদেষ্টামণ্ডলীর সভা সাধারণত বুধবার হয়। কিন্তু এবার বড়দিনের উৎসবের কথা মাথায় রেখে একদিন আগেই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার উপদেষ্টামণ্ডলীর সভা শেষে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্ঠার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিকাল ৪টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, “সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ- ২০২৪ এর খসড়া অনুমোদন হয়েছে। আগের আইনটি (সাইবার নিরাপত্তা আইন) এতটাই বিতর্কিত ছিল যে সেটা নিয়ে কাজ করাই অসম্ভব।
“স্বৈরাচারী হাসিনা এটা ব্যবহার করেছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের ভোকাল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। দেশে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করার জন্য। কেউ যেন তার মতামত ব্যক্ত করতে না পারে।”
তিনি বলেন, “এই নতুন অধ্যাদেশের মূল হলো, আমরা সাইবার স্পেসকে সবার জন্য নিরাপদ করতে চাই। সাইবার স্পেইসে অনেক ক্রাইম হয়, অনেকে প্রতারিত হন। মা-বোনরা অনেক রকমের বুলির শিকার হন। সাইবার স্পেইসকে নিরাপদ করা সরকারের দায়িত্ব।”
সংবাদমাধ্যমসহ সব নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সাইবার সুরক্ষা আইনে সমুন্নত থাকবে বলে জানান শফিকুল আলম।
অনেক আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এলে ‘কালাকানুন’ হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন সংস্কার বা বাতিলের দাবি ওঠে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে গত ৭ নভেম্বর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেদিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় সাইবার নিরাপত্তা আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পদবঞ্চিত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে পদবঞ্চিতদের ব্যাপারে করা কমিটি রিপোর্ট দিয়েছিল সরকারের কাছে। সেখান থেকে ১,৫৪০টি আবেদনের মধ্যে ৭৬৪টি ঘটনা ঠিক বলে জানিয়েছে কমিটি। ১১৯ জন সচিব যাদের মধ্যে ৪১ জন গ্রেড-১, ৫২৮ জন অতিরিক্ত সচিব, ৭২ জন যুগ্ম সচিব, ৪ জন উপসচিব পদে নিযুক্ত হবেন। তাদের জন্য এককালীন ৪২ কোটি টাকা এবং পেনশন হিসেবে বছরে ১৩ কোটি টাকা অনুমোদনের সিদ্ধান্তও হয়েছে সভায়।
‘আমি সমন্বয়কের সরকারের না, আমার সরকারের কথা বলছি’
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর নামে অভিযোগ এসেছে সময় টেলিভিশনে ১০ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করানোর জন্য চাপ প্রয়োগের।
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “আমি আমার সরকারের কথা বলতে পারি। প্রাইভেট সিটিজেন কে কী করছে তা তো আমি বলতে পারি না। আমি সমন্বয়কের সরকারের না। আমার সরকারের কথা বলছি। সরকারের কেউ যদি কোথায় গিয়ে এমন বলে, কারও চাকরি খাওয়ার কথা বলে তখন আপনি আমাকে বলবেন।
“আমার সরকারের বাইরে বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক তাদের দায়-দায়িত্ব তো আমার না। এইটা যারা করছে আপনি উনাদের প্রশ্ন করেন। উনাদের প্রশ্ন করেন উনারা কতটুকু গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আমরা এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সঠিক লোক না।”