Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

কোরিয়ায় ‘কম খরচে’ প্লাস্টিক সার্জারি : সৌন্দর্য নাকি বিপদ

‘কম খরচে প্লাস্টিক সার্জারি’ করাতে সাউথ কোরিয়া গিয়ে ঠকে আসার যত ঝুঁকি
[publishpress_authors_box]

অ্যালেক্স (ছদ্মনাম) নাকের সার্জারি করাতে চেয়েছিলেন। তখনই যুক্তরাষ্ট্র এবং সাউথ কোরিয়াতে রাইনোপ্লাস্টি করানোর খরচের বিশাল ব্যবধান চোখে পড়ে তার। সুতরাং নাকের সার্জারি করাতে এশিয়ার দেশটিতে উড়ে যাওয়াই অ্যালেক্সের কাছে কাছে ভালো মনে হয়।

“৩০ হাজার ডলার না কি ছয় হাজার ডলার – সিদ্ধান্ত নেয়া একেবারেই সহজ ছিল,” সার্জারিতে এক নম্বর হয়ে ওঠা সাউথ কোরিয়া নিয়ে আল জাজিরার কাছে অকপটে এই মন্তব্য করেন অ্যালেক্স।

কিন্তু বছর পার হতে না হতেই বিনোদন জগতে কাজ করা অ্যালেক্স নানা জটিলতার মুখে পড়েন।

নাকের সার্জারিতে কৃত্রিমভাবে বসানো উপাদান যেন ত্বক ভেদ করে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। উপায় না থেকে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে আবার সার্জারি করান তিনি।

“এখন যা বুঝতে পারছি তা যদি তখন বুঝতে পারতাম তাহলে তো আগের সার্জারি ওভাবে করাতাম না।”

সার্জারির পর সুন্দর দেখানোর বদলে এখন বেখাপ্পা নাক নিয়ে ব্রিবত অ্যালেক্স। তার নাকের গর্ত এখন আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে। আরেকবার অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো উপায় নেই তার কাছে।

তবে এজন্য ‘আবারও কোরিয়ায় ফিরে যেতে চাই না কোনোভাবেই’ বলে জানালেন অ্যালেক্স।

এক্সপার্ট মার্কেট রিসার্চ অনুসারে, বিশ্বের মধ্যে সাউথ কোরিয়াতেই প্লাস্টিক সার্জারির হার বেশি। ২০২৩ সালে দেশটি প্লাস্টিক সার্জারির ১৭০ কোটি ডলারের বাণিজ্য করেছে।

২০৩২ সালের মধ্যে এই খাতে ৫১৯ কোটি ডলারের বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই বিশাল ব্যবহার পেছনে বিশ্বজুড়ে কোরিয়ান পপ কালচার জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ভূমিকা আছে। ‘হালইউ’ বা এই ‘কোরিয়ান ওয়েভ’ থেকে সবার মধ্যে কোরিয়নদের মতো নিজেকে দেখানোর আগ্রহ বেড়েছে। এতে করে কোরিয়ান কসমেটিক পণ্যের বাজার ফুলে উঠেছে।

সাউথ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের ধনী এলাকা গাংনাম জুড়ে আছে ক্লিনিক এবং হাসপাতাল; যেখানে কসমেটিক চিকিৎসা এবং সার্জারি হয়ে থাকে। ডাবল আইলিড সার্জারি বা চোখের পাতায় ভাঁজ তৈরি, ফেসিয়াল কন্ট্যুরিং বা চিবুক-গাল উন্নত করে মুখের আকারে বদল, লাইপোসাকশন বা শরীরের মেদ ঝরানো এবং স্তনের আকার বাড়িয়ে নেয়া যায় এসব সেবা কেন্দ্র থেকে।

স্থানীয়রাই নিয়মিত গ্রাহক হলেও, বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য সৌন্দর্যপ্রেমী। বলতে গেলে এরাই সাউথ কোরিয়ার এই ধরনের সেবা কেন্দ্রগুলোর ব্যবসা চাঙ্গা করেছে।

মেডিকেল সেবা নিতে গত বছর ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৭৬৮ জন সাউথ কোরিয়া এসেছিল বিভিন্ন দেশ থেকে। এরমধ্যে জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং থাইল্যান্ড থেকেই বেশি এসেছে। সাউথ কোরিয়ার হেলথ এবং ওয়েলফেয়ার মন্ত্রণালয়ের বরাতে এই তথ্য জানাচ্ছে আল জাজিরা।

বিশ্বে এক লাখ ১৪ হাজার সার্জারির ১৬ দশমিক ৪ শতাংশই হচ্ছে প্লাস্টিক সার্জারি। ডার্মাটোলজি সেবার পরই প্লাস্টিক সার্জারির চাহিদা দেখা যায়।

যদিও চকচকে বিজ্ঞাপন আর সোশাল মিডিয়ার ভাইরাল ভিডিও দেখে আকৃষ্ট হয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের গ্রাহক ও রোগীরা প্রতিনিয়ত মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার মুখোমুখি হচ্ছেন। ফলাফল হিসাবে তাদের স্বাস্থ্য পড়ছে ঝুঁকির মুখে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, মেডিকেল সেবা নিয়ে আসা রোগীদের জন্য ভাষা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে খোঁজখবর করতে রোগী ও আগ্রহীরা নানা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে থাকেন। ওপেন চ্যাট গ্রুপ, রেডিট পেইজের পাশাপাশি ডিজাইনার হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে বিশেষ গ্রুপেও এরা থাকেন।

এসব গ্রুপে নামহীন অনেক ব্যবহারকারীও থাকেন। তারা ক্লিনিক ও চিকিৎসকের নাম সুপারিশ করেন, পরামর্শ দেন, ব্ল্যাকলিস্টেড ও অনুবাদকের তথ্য লেনদেন করেন।

সব তথ্য যাচাই করা রোগী ও আগ্রহীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। এই রোগীরা দালালদের কমিশন জোগাড়ের ভালো মাধ্যম হয়ে ওঠে নিজেদের অজান্তেই।

বিদেশি রোগীদের জন্য সেবার প্রচার অবৈধ কোনো কিছু নয়, তবে এর জন্য লাইসেন্স থাকতে হবে। লাইসেন্স পেতে হলে প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই কোরিয়াতে অফিস থাকতে হবে, সুনির্দিষ্ট পুঁজি এবং বীমা দেখাতে হবে।

রোগী সেজে আল জাজিরাও কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলে দ্রুতই কয়েকজন এগিয়ে আসে। তারা অবশ্য স্বীকার করে নেয় অনুমোদন না থাকার কথাও।

২০২০ সালে সিউলের একটি ক্লিনিকে লাইপোসাকশন করতে গিয়ে মারা যান হংকংয়ের ফ্যাশন সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী বনি এভিটা ল। ওই সময় সৌন্দর্য বর্ধনের চিকিৎসা সেবাগুলোর ঝুঁকির দিক আলোচনায় উঠে আসে।

এক অবৈধ দালালের খপ্পরে পরে ল যে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সেখানে একজন অপারেটিং সার্জন এই ঘটনায় অভিযুক্ত হন। পরে দেখা যায়, তিনি একজন অস্থি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এই মামলার রায় অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি।

কোরিয়ায় শুধুমাত্র সনদপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞরা তাদের ক্লিনিকের পরিচিতিতে ‘প্লাস্টিক সার্জারি ক্লিনিক’ বলার অধিকার রাখে। সাউথ কোরিয়ার চিকিৎসা আইন অনুসারে, যে কোনো লাইসেন্সধারী চিকিৎসকই বৈধভাবে কসমেটিক সার্জারি করতে পারেন। কারণ এই আইন চিকিৎসকদের শুধুমাত্র তাদের বিশেষত্বের মধ্যে কাজে সীমাবদ্ধ করে না।

লাইপোসাকশন করতে গিয়ে আরও একটি মৃত্যুর ঘটনার কথাও খবরে এসেছে। একজন চীনা নারী জানুয়ারিতে গাংনামের একটি ক্লিনিকে লাইপোসাকশন সার্জারি করার মাত্র কিছু সময়ের মধ্যেই মারা যান।

চীনে কসমেটিক সার্জারি করানোর রোগীদের প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হওয়ার সমস্যা এতটাই বিস্তৃত হয়ে উঠেছে যে, সিউলে চীনের দূতাবাস জানুয়ারিতে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, ‘বিজ্ঞাপন এবং ঝুঁকি নিয়ে সচেতন হতে’ এবং ‘মধ্যস্থতাকারী এজেন্টদের সাবধানে নির্বাচন করতে’ বলা হয়।

কোরিয়া হেলথ ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের সহায়তার কোরিয়ার স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি অভিযোগ কেন্দ্র পরিচালনা করে, যেখানে বিদেশি রোগীরা প্রতারণার তথ্য জানাতে পারবেন।

২০২১ সালে ১১টি অভিযোগ থেকে ২০২২ সালে ১৬টি এবং গত বছরে ৫৯টি অভিযোগ পাওয়া যায়; অর্থাৎ এ ধরনের প্রতারণা ও দুর্ঘটনা বাড়ছেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোরিয়া হেলথ ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, “সম্ভাব্য আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা এবং শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”

“যারা অবৈধ পরামর্শক হিসেবে প্রমাণিত হয়, তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়।”

কতগুলো মামলা আসলে তদন্তাধীন আছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জানাননি। তবে অভিযোগের তুলনায় মামলার সংখ্যা ‘অবশ্যই কম হবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাউথ কোরিয়ার শাসক দল পিপল পাওয়ার পার্টির সদস্য কাং কি-ইউন গত বছর এ ধরনের চিকিৎসা সেবার অস্পষ্টতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও পরে এর বিপরীতে তেমন জোরালো কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এসব ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে কাং বলেন, “বিশ্বমানের চিকিৎসা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বিদেশিরা এখানে আসেন। অথচ কতিপয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শিকার হন তারা, যা জাতীয় লজ্জা।”

প্রয়াত হংকংয়ের উত্তরাধিকারী বনি এভিটা ল -এর এক বন্ধু অজ্ঞাতনামা থাকার শর্তে আল জাজিরার কাছে বিদেশে সার্জারি করার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ জানান।

তিনি বলেন, “কোরিয়ার সৌন্দর্য শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরেছে সোশাল মিডিয়া। সুন্দর হতে সবাই তাই কোরিয়াতেই চিকিৎসা নেয়াকে স্বাভাবিক মনে করছে। গ্রাহকদের অবশ্যই ঝুঁকি এবং জটিলতা দেখা দিলে পুনর্বিবেচনা করার কষ্ট নিয়েও সচেতন থাকা উচিত।”

বিভ্রান্তিকর এবং প্রতারণামূলক রিভিউ আরেকটি উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

কোরিয়ার চিকিৎসা বিজ্ঞাপন আইন ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে প্রচারণা নিষিদ্ধ থাকলেও, বিদেশি রোগীদের আকৃষ্ট করতে এই চর্চা অবাধে চলছে। যা আইন প্রয়োগেও জটিলতা সৃষ্টি করছে।

একজন বিদেশি ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে এমন সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানের একটি চুক্তি পড়ে দেখেছে আল জাজিরা। চুক্তিতে ইনফ্লুয়েন্সারকে প্লাস্টিক সার্জারি ক্লিনিকের গুণগান গেয়ে একাধিক ভিডিও এবং সোশাল মিডিয়া কনটেন্ট বানাতে বলা হয়েছিল; যার বিনিময়ে ওই ইনফ্লুয়েন্সারকে বিনামূল্যে সার্জারি দেয়া হবে এমন প্রস্তাব ছিল চুক্তি। ভিডিও ও কনটেন্টে কী ধরনের ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল ক্লিনিকটি।

ইনফ্লুয়েন্সার নিজে সার্জারি করানো আগেই যেন কনটেন্ট বানিয়ে সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ করে এমনও শর্ত রেখেছিল ক্লিনিকটি। তবে প্রকাশের আগে সব কনটেন্ট তারা পর্যালোচনা করে দেখবে, সেই সঙ্গে বিনামূল্যে সার্জারির কথা গোপন রাখারও শর্ত দেয়া হয়।

ওই ইনফ্লুয়েন্সার ভিডিও বানালেও নির্দিষ্ট করে দেয়া শব্দের ব্যবহার নিয়ে ততটা সতর্ক ছিলেন না। কারণ নিজের সার্জারির ফলাফল নিয়ে তিনি নিজেই সন্তুষ্ট ছিলেন না।

পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন, চুক্তির শর্ত মেনে চলেননি ইনফ্লুয়েন্সার। এছাড়া সার্জারি বিনামূল্যে নয়, বরং সার্জারি, অন্যান্য এবং উড়োজাহাজের খরচ ওই ইনফ্লুয়েন্সার নিজেই বহন করেছিলেন এমন দাবিও করে প্রতিষ্ঠানটি।

অবশ্য আইনজীবীর মাধ্যমে হাসপাতালকে চিকিৎসা বিজ্ঞাপন আইন অনুযায়ী এসব প্রক্রিয়ার অবৈধতা সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর এসব অভিযোগ-দাবি বন্ধ হয়ে আসে।

আল জাজিরা তিন জন রোগীর সঙ্গে কথা বলেছে যারা বলেছেন, ডিসকাউন্টের বিনিময়ে তাদের ভালো রিভিউ দিতে বলা হয়।

চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে রোগীর জীবন, শরীরের কোন ক্ষতি হলে এমন মেডিকেল অ্যাক্সিডেন্টের ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায়; তবে এখানে দুই পক্ষেরই একমত হতে হবে।

নয়তো মামলার মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি হবে; যদিও এই প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুলও হতে পারে।

অনেক বড় ক্লিনিক তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করে যে তারা ‘দুর্ঘটনামুক্ত’।

এ ধরনের দাবি যাচাই করা কঠিন। কারণ যারা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা আবার সাউথ কোরিয়ার মানহানির আইন অনুযায়ী আইনি তোপের মুখোমুখি হতে পারেন। ভুক্তভোগী সত্য বললেও তিনি এই আইনে শাস্তি পেতে পারেন।

কোরিয়া গিয়ে রাইনোপ্লাস্টি সেবা নেয়া অ্যালেক্স একজন আমেরিকান নারী। আপত্তি তোলার পরও তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে সার্জারিতে যেতে বাধ্য করা হয়। এমনকি ভাষা বুঝতে তাকে কোনো তর্জমাকারীও দেয়া হয়নি।

“আমার নিজেকে পরিত্যক্ত বলে মনে হয়েছিল; কনভেয়র বেল্টে থাকলে যেমন মনে হয়”, অ্যালেক্স বলেন।

“সার্জারি শেষ করার পর তারা আর আমার দিকে ফিরে তাকায়নি। তারা বারবার বলছিল আমি এখনও সেরে ওঠার পর্যায়ে আছি, কিন্তু আমি জানতাম কোথাও একটা বড় ভুল হচ্ছে।”

হতাশ হয়ে এবং রিফান্ড পাওয়ার উপায় না দেখে ‘গাংনাম উনি’ অ্যাপে ছবি যোগ করে একটি রিভিউ লেখেন অ্যালেক্স।

প্লাস্টিক সার্জারি সেবার মান নিয়ে জানতে এই প্ল্যাটফর্ম সাউথ কোরিয়ার বাইরে ‘উনি’ নামে পরিচিত।

এরপর নেতিবাচক প্রচার এড়াতে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অর্থ ফেরতের প্রস্তাব রাখে অ্যালেক্সের কাছে। তবে তাদের শর্ত ছিল অ্যালেক্সকে ওই লেখা মুছে ফেলতে হবে এবং গোপনীয়তা বজায় রাখার চুক্তিতেও সই করতে হবে।

অ্যালেক্সের ওই চুক্তি যাচাই করে দেখেছে আল জাজিরা। অ্যালেক্স আর কোনো প্ল্যাটফর্মে নিজের সঙ্গে হওয়া সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে পারবে না। যদি অ্যালেক্স চুক্তির এই শর্ত ভঙ্গ করে তবে আর্থিক শাস্তি হবে তার।

গাংনাম উনি প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র ‘রিসেন্ট’ এবং ‘রিকমেন্ডেড’ পোস্টগুলো খুঁজে পেতে পারে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ রেটিং দিয়ে ফিল্টার করার কোনো সুযোগ নেই এখানে। এ কারণে নেতিবাচক রিভিউ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

এই অ্যাপের মালিক হচ্ছে হিলিং পেপার প্রতিষ্ঠানটি। আল জাজিরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। আল জাজিরা জানতে চেয়েছিল, নেতিবাচক রিভিউ তারা কীভাবে সামলায়? যদি নেতিবাচক মন্তব্য মুছে ফেলার জন্য চাপ আছে তাও বা কীভাবে সামলানো হয়?

হিলিং পেপার থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

কিছু ঝুঁকি থাকলেও অনেক রোগী সাউথ কোরিয়া থেকে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে ভালো আছে। এই খাতে নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।

এসব নিয়ে কাজ করছে গাংনাম মেডিকেল টুরিজম সেন্টার। সিউল শহরের গাংনাম জেলা অফিস থেকে এই উদ্যোগ পরিচালিত হয়।

এই কেন্দ্র কোনো অর্থ নেয় না। বরং বিদেশিরা এলে তাদের পেশাদার ও সনদপ্রাপ্ত হাসপাতাল, চিকিৎসক এবং তর্জমাকারী খুঁজে পেতে সহায়তা করে।

এজন্য একটি তালিকায় বৈধ মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের নাম সংগ্রহ করা আছে তাদের। এরসঙ্গে বিশ্বস্ত সেবা পাওয়ার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে তারা।

বিদেশি রোগীদের সেবা দেয়া হাসপাতালগুলোর নিবন্ধন, প্রতিটি বিভাগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বীমা সুবিধা, জরুরি পরিস্থিতি সামলাতে দক্ষ জনবল আছে কি না তা খতিয়ে দেখে এই কেন্দ্র।

এই কেন্দ্র থেকে হাসপাতালগুলোতে সরেজমিন পরিদর্শন এবং প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থাও করা হয়।

এই কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে রোগীকে অবশ্যই স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

“খরচ একটা বড় বিষয় এখানে, এরপরও সুরক্ষার চেয়ে তা বড় নয়।”

মেডিকেল টুরিজম সেবা দিতে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন জিত ধিন্ডসা। রোগীদের কেউ দালালের খপ্পরে পড়লে তাদেরও সেবা দেন তিনি।

আল জাজিরাকে জিত ধিন্ডসা বলেন, “মেডিকেল সেবা নিতে গেলে এরমধ্যে যারা সম্পৃক্ত তাদের সনদ যাচাই করে দেখা উচিত সব রোগীদের। যারা তথ্য বিষয়ে স্বচ্ছ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা নিরাপদ।”

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অ্যালেক্সের পরামর্শ হচ্ছে, “রোগীর সঙ্গে এমন কারও অবশ্য আলাপ থাকতে হবে যিনি খারাপ কিছু ঘটলে সার্বিক সহায়তা দিতে পারেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত