Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

আওয়ামী লীগের বিচারের আগে নির্বাচন নয় : উমামা

March_For_Unity_4
[publishpress_authors_box]

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে দেশে কোনও নির্বাচন হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট করার পরদিন ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশে এ হুমকি দিয়েছেন তিনি।

আগামী দেড় বছরের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে ইঙ্গিত এরই মধ্যে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন গতকাল সোমবার বলেন, সরকার কিংবা আদালত যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে তাহলে দলটির আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই।

মঙ্গলবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে উমামা ফাতেমা বলেন, “আমরা রীতিমতো বাধ্য হয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। ৫ আগস্টের পর পাঁচ মাস পর এই ঘোষণাপত্রের উদ্যোগ নিতে হলো। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই- গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে কোনও নির্বাচন হবে না।”

দুদিনের নাটকীয়তার পর সোমবার গভীর রাতে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা থেকে সরে এসে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পছন্দে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও এই অভ্যুত্থানের কোনও ঘোষণাপত্র ছিল না।

মার্চ ফর ইউনিটি’ নামের এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে মঙ্গলবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-জনতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে। সমাবেশ শুরুর আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকা।

সমাবেশে বাহাত্তরের সংবিধানকে মুজিববাদী সংবিধান আখ্যা দিয়ে সেটি পরিবর্তনে গণপরিষদ গঠনের দাবি জানায় গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্মটি।

তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ (জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র) ঘোষণার এবংজুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিও জানিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মঙ্গলবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ অনুষ্ঠিত হয় ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মঙ্গলবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ অনুষ্ঠিত হয় ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি। ছবি : হারুন-অর-রশীদ

আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত একটি দল। ফলে ভোট করতে তার বাধা নেই। তবে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটি এখন দেশের রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয়।

আওয়ামী লীগকে পুনরায় সক্রিয় হতে দিতে বাধা দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে তারা রিট আবেদন নিয়ে একবার আদালতে গেলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।

অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করলেও মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোও কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার পক্ষেই অবস্থান জানিয়েছে।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে অনেকে মেনে নিতে পারে নাই। তাই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সচিবালয় থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও মতকে শেখ হাসিনা দমন করেছে। আমাদের নেতৃত্বে মানুষ মাঠে নেমে এসেছে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, তার পুর্নবাসন এই দেশে হবে না।”

তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে। পিলখানা, শাপলা চত্বরের ঘটনাসহ বিচারবহির্ভূত কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নাই। এসবের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের গুম-খুন-নিপীড়নের বিচার করতে হবে। এ সব দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “এই ঘোষণাপত্র আমাদের নায্যতার কথার প্রতিফলন না হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা আবার ফ্যাসিবাদ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি চাই না। সরকারকে হুঁশিয়ার করতে চাই অতিদ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে সক্রিয় হোন। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের বাংলাদেশে এনে তাদের বিচারের প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। তার দল আওয়ামী লীগের বিচার শেষে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মার্চ ফর ইউনিটি সমাবেশের সংগঠক মোল্লা ফারুক এহেসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সমাবেশে আসার পথে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাসে হামলা হয়েছে।

সমাবেশে এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ভাইদের খুন করেও উন্মুক্তভাবে ঘুরছে।

“অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, যে সব খুনিরা বিদেশে পালিয়ে গেছে তাদের ফেরত আনতে হবে, তাদের পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে হবে। গোপালগঞ্জে লুকিয়ে থাকা তাদের দোসরদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত