Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

সোশ্যাল মিডিয়া ‘বার্নআউট’ কী?

Burnout feature
[publishpress_authors_box]

সোশ্যাল মিডিয়ায় হুট করে একটা ট্রেন্ড আসে। আবার হুট করে চলেও যায়। আর এই ট্রেন্ডের সঙ্গে মানিয়ে চলতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। বার্নআউটে ফুরিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

সোশ্যাল মিডিয়া এমন ভাবে ডিজাইন করা যেখানে ট্রেন্ডগুলো দ্রুত পালটে যায়। সামাজিক যোগাযোগের অ্যালগোরিদম প্রতিনয়ত নতুন ও আকর্ষণীয় কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দিতে থাকে। যার ফলে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা অবিরত নতুন নতুন কন্টেন্ট তৈরির চাপের মধ্যে থাকেন।

টিকটক এর কথাই ধরা যাক। নাচের কোন ট্রেন্ডের স্থায়িত্ব টিকটক এ বড়জোর এক সপ্তাহ। কারণ এক সপ্তাহের মধ্যেই তার জায়গা নিয়ে নেবে রান্নার কোনও টিপস। এ এক অপ্রতিরোধ্য চক্র। যেখানে ট্রেন্ড হলো হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা, আর ইঁদুর হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। নদীতে ঝাঁপ দিয়ে হাবুডুবু খাওয়াই যাদের নিয়তি।

সিনিয়র মনোবিদ এবং মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী ড. অরবিন্দ ওটার মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডগুলির দ্রুত পরিবর্তন মানুষের মনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রতিনিয়ত আপডেইট থাকার ভয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের আনন্দ কেড়ে নেয়।” তার মতে, পরিবর্তনশীল ট্রেন্ডে খাপ খাইয়ে নিতে চাওয়ার প্রবণতা প্রায়ই ক্লান্তি এবং হতাশার জন্ম দেয়।

এ ব্যাপারে গ্লেনিগলস বিএসজি হাসপাতালের মনোবিদ সুমালথা বাসুদেব জানান, ক্রমাগত আপডেট থাকার প্রয়োজনীয়তা ক্লান্তি সৃষ্টি করে, যা কিনা ব্যক্তিকে বার্নআউটের দিকে নিয়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে যারা দীর্ঘদিন যুক্ত তাদের ভেতর প্রাসঙ্গিক থাকার একটা চাপ আছে। এই প্রাসঙ্গিক থাকতে চাওয়া তাদের বিভিন্ন পোস্ট এবং ট্রেন্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে বাধ্য করে। অনেকের মতে, এই প্রাসঙ্গিক থাকার চাপ তাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে ফেলে।

অল্প কিছুদিন আগেই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় ‘দুবাই কুনাফা চকলেট’। সবাই চাইছিল এক টুকরো ‘কুনাফা’ চেখে দেখতে। সেটা যেহেতু কঠিন, মানুষ তাই নিজের মতো করে কুনাফা বানিয়ে ছবি কিংবা ভিডিও পোস্ট করতে থাকে। অসংখ্য মানুষের মধ্যে তৈরি হয় হুজুগ, ‘কুনাফা’ বানানো চাই-ই চাই।

সামাজিক যোগাযোগে ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রতিদিন, তাদের ফলোয়ারদের জন্য নতুন নতুন মেকআপ, অ্যাক্সেসরিজ, ব্যাগ বা নিত্য নতুন গহনা উপস্থাপন করেন। এখন লক্ষ লক্ষ ইনফ্লুয়েন্সার প্রতিদিন যদি নিত্য নতুন ট্রেন্ড চালু করে, আর তাতে যদি ফলোয়াররা গা ভাসায়, তবে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়? এই চক্রের তো কোন শেষ নেই। একজন মানুষ এভাবে কতদিন চালিয়ে যেতে পারবে?

শেষ পর্যন্ত এটার চাপ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গিয়েই পড়ে।
  

সোশ্যাল মিডিয়া বার্নআউট: একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বার্নআউট (ক্লান্তি) একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে উঠেছে।

ডাঃ ওটা ব্যাখ্যা করেন, এইসব বার্নআউটের লক্ষণ কী কী উপায়ে প্রকাশ পায়। যেমন- চাপ বোধ করা, আগ্রহ হারানো, এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হওয়া ইত্যাদি। শারীরিক উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত।

এইসব সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা বিচ্ছিন্নতা, এবং অনলাইন উপস্থিতি নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন থাকেন।

মনোবিদ বাসুদেব জানান, বার্নআউটে ভোগা ব্যক্তি সারাক্ষণ অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে থাকেন। তিনি বলেন, “মানুষ এ সময় ক্লান্ত এবং নিজেকে বেঠিক মনে করতে থাকে। একটি আদর্শ অনলাইন ইমেজ তার মাথায় সব সময় ঘুরতে থাকে।

বোসের মতে, বার্নআউটের লক্ষণগুলো হলো:

  • ক্রমাগত আত্মতুলনা
  • বিরক্তি বা মনে অশান্তি
  • বাড়তি স্ক্রিন টাইম এবং অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি
  • বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা

কিন্তু এই ট্রেন্ড তাড়া করবার প্রবণতা থেকে মুক্তি ঘটবে কিভাবে?

বিশেষজ্ঞরা একমত যে ট্রেন্ড তাড়া করার এই চক্র ভাঙতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো-

সীমা নির্ধারণ: স্ক্রিন টাইম ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে নজরদারী অ্যাপ ব্যবহার করা যায়।

নিউজ ফিড নিয়ন্ত্রণ: এমন অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করা যার কর্মকান্ড অনুপ্রাণিত করে এবং মূল্যবোধের সাথে মিলে যায়।

ইচ্ছার প্রাধান্য: ট্রেন্ড অনুসরণের বদলে নিজের আগ্রহ আছে এমন পোস্ট ফলো, শেয়ার এবং পোস্ট করুন।

অফলাইলে সক্রীয় থাকা:  নিজের শখগুলো আবারও নেড়েচেরে দেখতে হবে।ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া হতে পারে দারুণ কিছু।

মননশীল চর্চা: যে কোন কিছু পোস্ট করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভাবতে হবে এবং এটি কী নিজেকে প্রকাশের জন্য নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য এতে আছে তা ভেবে দেখতে হবে।  

ডিজিটাল ডিটক্স: ধীরে ধীরে ডিজিটাল ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে এবং দিনের নির্দিষ্ট সময় পর এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত