Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

লন্ডনে আরেক ফ্ল্যাট নিয়ে বিতর্কে টিউলিপ

টিউলিপ সিদ্দিক
টিউলিপ সিদ্দিক
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশে গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের কয়েকদিনের মধ্যেই তার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াবাবদ পাওয়া আয় নথিভুক্ত না করার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে, যার তদন্ত এখনও চলছে। এবার টিউলিপের বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল লন্ডনে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে, যে ব্যবসায়ী আবার তার খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করা হচ্ছে।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি মোকাবিলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত টিউলিপ ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় দুই বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বুঝে নেন, তবে তার জন্য কোনও অর্থ পরিশোধ করেননি তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ বলছে, ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ নামে একজন আবাসন ব্যবসায়ী, যিনি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, যে দলটির নেতৃত্বে আছেন টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা।

৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা টিউলিপের মা শেখ রেহানার বড় বোন, যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে টানা ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করা শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও বোন শেখ রেহানার পাশাপাশি বোনের মেয়ে টিউলিপের নামও আসছে।

গত আগস্টে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট থেকে ভাড়ার আয় নথিভুক্ত না করার অভিযোগ ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্তের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অন্যের মালিকানায় থাকা একটি বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাসের অভিযোগও ওঠে।

২১ লাখ পাউন্ড দামের বাড়িটির মালিক আব্দুল করিম নামে বাংলাদেশি এক ধনকুবের। শেখ হাসিনা ওই ব্যবসায়ীকে সিআইপি ঘোষণা করে ভিআইপির মর্যাদা দিয়েছিলেন।

ডেইলি মেইল অনলাইন টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে তখন জানতে চেয়েছিল, আব্দুল করিমের বাড়িতে থাকার জন্য তিনি কত টাকা ভাড়া দেন। কিন্তু বারবার প্রশ্ন করা সত্ত্বেও টিউলিপ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি।

এরপর গত মাসে জানা যায়, বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের চারজন সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে, যেখানে টিউলিপের নামও আছে। অবশ্য টিউলিপের ঘনিষ্ঠজনেরা এই অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

সপ্তাহ দুয়েক আগে টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে রূপুপুর প্রকল্পের অর্থ আত্মাসতের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করেছে বলে খবর দেয়। যদিও টিউলিপ তা অস্বীকার করেন বলেও জানায় সংবাদমাধ্যমটি।

সে সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও টিউলিপের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, সিটি মিনিস্টারের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে তার। টিউলিপের বিরুদ্ধে অ্যাপার্টমেন্ট উপহার নেওয়ার নতুন অভিযোগ আসার পর শুক্রবার রাতেও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে, টিউলিপের বিষয়ে সরকারের অবস্থান আগের মতই আছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা।

এদিকে, ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া সম্পর্কিত সর্বশেষ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন টিউলিপ। এছাড়া তার ওই সম্পত্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, লন্ডনের ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে কেনা হয়েছিল, যা এখনও টিউলিপের মালিকানাতেই রয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, “টিউলিপের বাবা-মা তাদের এক বন্ধুর কঠিন সময়ে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন এবং তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ওই বন্ধু পরে তার মালিকানাধীন সম্পত্তিটি টিউলিপের নামে স্থানান্তর করেন।”

আব্দুল মোতালিফ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন, ফ্ল্যাটটি তিনিই কিনেছিলেন, তবে এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

ভূমি নিবন্ধনের সাম্প্রতিক নথি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ওই সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়েছে এবং ২০১৮ সালে ৯০ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে লিজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ থেকে বোঝা যায়, সম্পত্তিটি বর্তমানে ভাড়া দেওয়া রয়েছে এবং এটি নিয়ম ও বিধি মেনেই করা হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে পরিচিত ববি হাজ্জাজের করা একটি আবেদনের সূত্র ধরে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করে।

এরপর দুদক জানায়, রূপপুর প্রকল্পের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখবে তারা। এর সপ্তাহখানেকের মধ্যে খবর বেরোয়– রূপপুর প্রকল্পের ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যেল মন্ত্রিপরিষদ দপ্তর, যদিও টিউলিপ তার অস্বীকার করে বলে জানায় টেলিগ্রাফ।

সে সময় টিউলিপের দল লেবার পার্টিও তাকে জড়িয়ে ওঠা অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার বিরোধীপক্ষ এই অভিযোগ তুলেছে বলেও দাবি করেন লেবার পার্টির কর্মকর্তারা।

গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হওয়া টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে দেশটির ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যার মূল কাজ যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি নির্মূল করা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ ২০২১ সাল থেকে লন্ডনের ‘দ্য সিটি’ নামে লেবার পার্টির আর্থিক পরিসেবা শিল্পের নীতির প্রণয়নে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এর আগে তিনি লেবার পার্টির ছায়া শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।

১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যুক্ত হওয়া টিউলিপ সিদ্দিক ২০১০ সালে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরে ২০১৫ সালে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনের এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থি ডন ইউলিয়ামসকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত