ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি টেক জায়ান্টদের আনুগত্যকে ব্যঙ্গ করে আঁকা একটি কার্টুন প্রকাশে অস্বীকৃতি জানানোয় ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন কার্টুনিস্ট অ্যান টেলনেস।
পুলিৎজারজয়ী এই নারী কার্টুনিস্ট রাজনৈতিক কার্টুনের জন্য খ্যাতিমান। তিনি ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্রটিতে কাজ করছিলেন, যার মালিক ধনকুবের জেফ বেজোস।
সম্প্রতি তিনি একটি কার্টুন প্রকাশের জমা জমা দেন, যেখানে দেখানো হয় ট্রাম্পের ভাস্কর্যের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে ডলারের বস্তা সাধছেন টেক জায়ান্টরা।
তার মধ্যে রয়েছেন অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস, যিনি ওয়াশিংটন পোস্টেরও মালিক; মেটার মালিক মার্ক জাকারবার্গ এবং ওপেন আইর মালিক স্যাম অল্টম্যান।
এই কার্টুনটি প্রকাশে ওয়াশিংটন পোস্টের এডিটোরিয়াল বোর্ড সায় না দেওয়ায় টেলনেস পদত্যাগের ঘোষণা দেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন জানিয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে টেলনেস লিখেছেন, “আমি যে কার্টুনটি প্রকাশের জন্য জমা দিয়েছিলাম, তা নিয়ে সম্পাদকীয় কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে, তার কিছুটা গঠনমূলক, কিছু মতপার্থক্যও বেরিয়ে এসেছে।
“তবে আমি কখনোই আমার আঁকা কার্টুনের চরিত্রের জন্য কোনও কার্টুনকে হত্যা করিনি, এখনও সেই অবস্থানেই রয়েছি।”
নিজের আঁকা কার্টুনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে টেলনেস বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিলিয়নেয়ার টেক জায়ান্ট এবং সংবাদমাধ্যমের নির্বাহীরা তাকে তোষামদের যে ভূমিকা নিয়েছে, তাই চিত্রিত করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ধনকুবের ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বেজোস, জাকারবার্গসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা তার সঙ্গে দেখা করতে লাইন দেন।
টেলনেস বলছেন, সরকারি কাজ পাওয়া আর নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যই তাদের ট্রাম্পের রিসোর্ট মার-এ লাগোতে নিয়ে গিয়েছিল।
এই কার্টুন প্রকাশ করতে ওয়াশিংটন পোস্টের সিদ্ধান্তকে মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য বিপজ্জনক ঘটনা হিসাবে দেখছেন টেলনেস।
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কার্টুনিস্টদের সংগঠন দি অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকান এডিটোরিয়াল কার্টুনিস্ট। শনিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, এর মধ্যদিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের সেন্সরশিপ আরোপের পাশাপাশি কাপুরুষোচিত আচরণের প্রকাশ ঘটেছে।
টেলনেস যে খসড়া কার্টুনটি এঁকেছেন, তা সম্পূর্ণ করে অনলাইনে ছড়িয়ে দিতে অন্য কার্টুনিস্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিষয়টি জটিলত হওয়ার মধ্যে ওয়াশিংটন পোস্টের মতামত বিভাগের সম্পাদক ডেভিড শিপলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি টেলনেসের অবস্থানকে শ্রদ্ধা করেন। তবে টেলনেস যেভাবে বিষয়টি তুলে ধরছেন, তার সঙ্গে তিনি একমত নন।
তার দাবি, যে বিষয়টি নিয়ে টেলনেস কার্টুনটি এঁকেছেন, তা নিয়ে এরই মধ্যে একটি কলাম প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তাই একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি এড়াতেই টেলনেসের কার্টুনটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানে কার্টুনের বিষয়বস্তু কারণ ছিল না, পুনরাবৃত্তি এড়ানোই ছিল কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন কাঁপিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টকে। ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থনের একটি প্রক্রিয়া বেজোস আটকে দেওয়ার পর সংবাদপত্রটি থেকে জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন, তার মধ্যে সম্পাদকীয় বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনও রয়েছেন।
বেজোস যে শুধু ট্রাম্পের সঙ্গে দেখাই করেছেন, তা নয়; তিনি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য ১০ লাখ ডলার চাঁদাও দিয়েছেন।
বেজোসের এসব সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটন পোস্টের কাটতি পড়তে শুরু করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় আড়াই লাখ পাঠক হারিয়েছে প্রভাবশালী এই সংবাদপত্রটি।