Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

নতুন বছরে সুখী হতে বিজ্ঞান বলছে ৮ তরিকা

নতুন বছরে বিজ্ঞান মেনে সুখী হওয়ার ৮ তরিকা
ছবি: ব্লগ ফিটনেস
[publishpress_authors_box]

সেই কবে মান্না দে গেয়েছিলেন ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’, যা এখনও সময়ে-অসময়ে লোকে গুনগুন করে ওঠে। নতুন বছর এলেই পেছনের অসফলতা থেকে বেরিয়ে ভালো থাকার শপথ নেন সবাই।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, বিজ্ঞানের পরামর্শ মেনে চলছে জীবনে সুখ আর আনন্দ একটু বেশিই মিলবে নতুন বছরে।

বয়স এবং বন্ধুত্ব বাড়ুক এক সঙ্গে

সব বয়সেই বন্ধুত্বের ভালো দিক আছে। বয়স যত বাড়কে বন্ধুত্বের উপর নির্ভরতার মাত্রা উপলব্ধি করা যাবে আলাদা ভাবেই। আনন্দের প্রকৃত উৎস হয়ে উঠবে নির্মল বন্ধুত্ব।

যদিও বয়স্ক লোকেরা এক পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে দেন; একেবারে ঘনিষ্ট কয়েকজনের মধ্যেই জীবন সীমিত করে রাখেন। গবেষকরা বলছেন, বয়স যতই বাড়ুক নতুন বন্ধুত্বের দরজা সব সময় খোলা রাখতে হবে। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ও নির্ভরতা অনেক ক্ষেত্রেই রীতি মাফিক হতে যায়, কিন্তু বন্ধুত্ব মানে খোলা বই।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালো বন্ধু বেছে নেয়া ও যোগাযোগে থাকার মানসিকতা ধরে রাখলে মানসিক ও কগনিটিভ স্বাস্থ্যে এর সুখকর ছাপ পড়ে। এ কারণেই গবেষকরা বলছেন, পরিবারের মতই বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রশংসা করুন মন খুলে

সহমর্মী হওয়া সত্যিকার বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে ওঠে। দুঃখ ভাগাভাগি করে নিলে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। এর উল্টো পিঠে আনন্দ ভাগ করে নিতেও ডেভিড রবসনের বরাতে বলছে বিবিসি।

অনেক গবেষণাও এর সমর্থন দিচ্ছে। বন্ধুর সফলতার খবর জেনে আরও খোঁজখবর নিলে সত্যিকারের উৎসাহ দেয়া হয়। এতে করে বন্ধুত্বের মধ্যে নির্ভরতা গড়ে ওঠে এবং মনোমালিন্য দূর হয়।

কারও জন্য ভালো কিছু করা

কারও উপকার করলে শান্তি পাওয়া যায়; বহু যুগ পুরনো এ কথা শুনতে এখন যতই ক্লিশে লাগুক, গবেষণাও এর সমর্থন করে।

কারও ভালোর জন্য কাজ করলে নিজের অবসাদ, বিষণ্ণতা, শারীরিক যন্ত্রণার প্রশমন হয়। ২০০২ সালের এক গবেষণায়, শারীরিক যন্ত্রণার দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন এমন একদলের উপর দায়িত্ব দেয়া হয় কয়েকজনকে সাহায্য করার। কাজ শেষে স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, তারা আগের মতো ব্যথা অনুভব করছেন না।

কোনো কোনো গবেষণা বলছে, প্রাণিকূলের সেবায় কাজ করলে মানুষের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক ছাপ পড়ে। একই ভাবে বাগানে সময় কাটালে নিজেও তরতাজা থাকা যায়। এ কারণে বয়সকালেও বাগান করার চর্চা ধরে রাখতে হবে।

পূর্বজদের কথা ভাবুন

গবেষণা বলছে, পূর্বজদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, পারিবারিক ঐতিহ্য জানা, তাদের মনে করার মধ্যে মানসিক তৃপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। পূর্বজদের জীবন সংগ্রাম পরের প্রজন্মের জন্য প্রেরণা ও শিক্ষা হয়েও দেখা দেয়।

মেলবোর্নের সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মনোবিজ্ঞানের ইমেরিটাস অধ্যাপক সুসান এম মুর বলছেন, পারিবারিক ইতিহাস যারা জানেন তাদের মধ্যে সন্তুষ্টির মাত্রা বেড়ে যায়।

পূর্বজদের কাজ নিয়ে জানলে পরের প্রজন্ম নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে। এমনকি বিশ্বে মানব প্রজাতির অগ্রগতিতে নিজের অবস্থান নিয়েও গভীর ভাবে ভাবার অবকাশ খুঁজে পাওয়া সম্ভব এই পথে।

ডায়েরিতে লিখুন স্মরণীয় দিন

জীবনের আনন্দদায়ক মুহূর্তকে টুকে রাখুন। অবসরে বসে পাতা উল্টে দেখলে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তালিকায় লেখা তিনটি অর্জনের দিনে হাত বুলিয়ে নিমিষেই মনের মধ্যে সন্তুষ্টি জমা হবে। হতে পারে তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হাওয়ার দিন, সন্তান হওয়ার ক্ষণ, পুরনো বন্ধুর সঙ্গে হুট করে দেখা হওয়ার ঘটনা। গবেষণা বলছে, এসব ছোট ছোট মুহূর্ত পরে আবার মাঝে মাঝে মনে করা জীবন যাপনে সুস্থ ধারার পথ দেখায়

আনন্দে মেতে থাকুন

হুট করে গাড়ি নিয়ে দূরে ঘুরে আসার মধ্যে আলাদাই মজা আছে। বাতাসে চুল উড়বে, গান বাজবে চলতি পথে – এমন সময় জীবনের উপর নেমে আসা চাপ হালকা করে দেবে নিমিষেই। মানুষের মস্তিষ্ক এই অভিজ্ঞতা থেকে আরও আশাবাদি হয়ে ওঠে।

মাঝে মাঝে বিরতি নিন

সুখী থাকতে অনেক কিছু করতে হবে এই চাপে নিজেকে ব্যস্ত রাখায় মাঝে মাঝে নিজের লাগাম টেনে ধরতে হবে। গবেষণা বলছে, সুখী হওয়ার দৌড়ে নিজেকে টানাটানি করলে বরং প্রকৃত সুখ দৃষ্টির আড়ালে রয়ে যায়।

কোনো সিনেমা দেখা, বই পড়া কিংবা পার্টিতে যোগ দেয়ার আগে যদি অতিরিক্ত আশা পোষণ করা হয়, তবে পরে সে আশা ভঙ্গ হলে বিষণ্ণতার মাত্রা বেড়ে যায়। অর্থ্যাৎ প্রত্যাশার মাত্রা অতিরঞ্জিত হলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।

বারকেলির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সাইকোলজিস্ট আইরিশ মুউস ব্যাখ্যা করে বলেন, সুখী হওয়ার দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে আশা ভঙ্গ হলে একাকীত্ব আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে।

আর তাই জীবনের উত্থানের মতো জীবনের পতনকেও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেওয়ার আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। তাহলে জীবনে নতুন পথে হেঁটে পুনরায় সুখের সঙ্গে বসবাস সম্ভব হবে।

ক্যাফেইনে আসক্ত হওয়া যাবে না

একটু শীত অনুভব হলেই কফির কাপ হাতে বসলে মস্তিষ্ক ও শরীরে চাপ কমে যায় বলে মনে হয়। শরীরের অ্যাডেনোসিন কেমিকেল আমাদের ক্লান্ত অনুভব করায়। আর ক্যাফেইন দ্রুতই রক্তে মিশে গিয়ে এই কেমিকেলের প্রভাব কমিয়ে আনে।

ক্যাফেইনের আরও অনেক উপকারিতা উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। ক্যানসার, হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়বেটিস, অবসাদ ঝুঁকি কমাতে এবং শারীরিক সামর্থ বাড়াতে ক্যাফেইনের ভূমিকা পাওয়া গেছে।

কিন্তু কখন কফির কাপে চুমুর দেয়া হচ্ছে তা বলে দেবে ক্যাফেইন উপকার ডেকে আনবে বা অপকার। বিজ্ঞানিরা বলছেন, ঘুমাতে যাওয়ার আট ঘণ্টা ৪৮ মিনিট আগে সবশেষ কফি পান করা যাবে। একই সঙ্গে ঘন ঘন কফি পানের অভ্যাস করা যাবে না। ৪০০ মিলিগ্রাম অথবা দুই থেকে তিন কাপের বেশি কফি একদিনে পান করা উচিত হবে না। তাহলেই ঘুমের ব্যঘাত, মাথাব্যথা, অস্থিরতা, মাথা ঘোরার মতো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এড়ানো যাবে।

সব কথার শেষ কথা

প্রতিদিন পাঁচ মিনিট হলেও নিজের দিকে মনোযোগ দিয়ে অস্থিরতা, অবসাদ কাটানো সম্ভব। ঘরে বসে থেকে, অফিসে কাজ করার ক্লান্তি কাটাতে প্রকৃতি বেছে নিন। প্রকৃতি শরীর ও মনে ওষুধের মতো কাজ করে। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ না মেলে, তাহলে পাখি, বৃষ্টির শব্দের অডিও বাজিয়ে মন দিয়ে শুনুন। শান্তি অনুভবে এই পন্থাও জাদুর মতো কাজ করে।

কোনো কোনো গবেষণা বলছে, বাস্তবে সম্ভব না হলে ভার্চুয়াল পন্থায় সমুদ্রের তলদেশ ঘুরে আসুন। এতেও মন-মেজাজে আমূল পরিবর্তন টের পাবেন। কমপিউটার ও ফোনের স্ক্রিনে প্রকৃতির ছবি দিয়ে রাখুন। তাহলে কাজের ফাঁকে সবুজের কথা মনে পড়বে। ভার্চুয়াল প্রকৃতি কখনই বাস্তবের সবুজের বিকল্প হতে পারে না। তবে এভাবে অন্তত বারবার সবুজের কথা মনে হবে, তাতে মনে পড়বে কখন একটু বিরতি নেয়া শরীর ও মনের জন্য জরুরি হয়ে উঠছে। সেই সময় নিজের প্রতি নজর দিলেই বাড়বে মনের শান্তি ও সুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত