উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে আনার উদ্যোগের পর এবার মিয়ানমার থেকে সরকারি চুক্তির (জিটুজি) মাধ্যমে এক লাখ টন আতপ চাল ১০টি জাহাজে আনা হচ্ছে, যার সব আসতে সময় লাগবে মার্চের মধ্যভাগ। এসব চাল সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে।
২২ হাজার টন চাল নিয়ে প্রথম জাহাজটি আসবে ১৪ জানুয়ারি। ইয়াঙ্গুন বন্দর থেকে সেটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছতে সময় লাগবে ৪ দিন।
মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি বেশ নাজুক। দেশটির জান্তা সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ে আরাকান আর্মি অনেকগুলো রাজ্য দখলে নিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ পাশ্ববর্তী বেশিরভাগ অঞ্চলই আরাকান আর্মির দখলে আছে। সীমান্তে গোলার শব্দে প্রতিদিনই কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ সীসান্ত। দুদেশের সীমান্ত যে নদী দিয়ে বিভক্ত, সেই নাফ নদীতে জাহাজ চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে আরাকান আর্মি।
এমন জটিল পরিস্থিতিতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ দুই দেশের সরকারের উদ্যোগে চাল আমদানি করা হচ্ছে। যদিও দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে চাল আমদানিতে প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তারা।
অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় পাঁচ মাসের মাথায় সরকারি উদ্যোগে প্রথম চাল আমদানি করা হয়েছে ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। শুধু তাই-ই নয়; চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি উদ্যোগে উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানির নজিরও ছিল সেটিই প্রথম।
অন্তর্বর্তী সরকার উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানির যে উদ্যোগ নেয়, তাতে দুটি পৃথক দরপত্রে ভারতের দুটি প্রতিষ্ঠান ৫০ হাজার টন করে মোট এক লাখ টন চাল আমদানির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমোদনের পর পাত্থাবি এগ্রো ফুড প্রডাকশন লিমিটেডের প্রথম চুক্তির বিপরীতে প্রথম চালানটি এসেছে ২৫ ডিসেম্বর। ‘এমভি তানাইস ড্রিম’ জাহাজে প্রায় ২৫ হাজার টন সেদ্ধ চাল ছিল। মাত্র ৮ দিনে সেই চাল জাহাজ থেকে খালাস করে সরকারি গুদামে নেওয়া হয়। সেই চুক্তির দ্বিতীয় চালানে আরও ২৭ হাজার টন চাল নিয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে আসছে এসডিআর ইউনিভার্স নামের জাহাজটি।
উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাল সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান এসএইএল অ্যাগ্রি কমোডিটিজ লিমিটেডের প্রথম চালান চট্টগ্রাম পৌঁছবে আগামী ১৭ জানুয়ারি।
এখন মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন আতপ চালের চালান আসা শুরু হচ্ছে ১৪ জানুয়ারি। গোল্ডেন স্টার নামের জাহাজটি ২২ হাজার টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছবে। এরপর জাহাজ থেকে চাল নামিয়ে সরকারি গুদামে নেওয়া হবে। ভারতের দুটি চালানে এক লাখ টন এবং মিয়ানমারের একটি চালানে এক লাখ টন চালের জাহাজ আসা থেকে শুরু করে নমুনা সংগ্রহ, সরকারি দপ্তরের অনুমতি নেওয়া, পণ্য খালাসের দায়িত্ব পেয়েছে সেভেন সিজ শিপিং লাইনস। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি আগে থেকেই সরকারি গম, চাল খালাসের দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
সেভেন সিজ শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আকবর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে এই পেশায় কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এক ধরনের দক্ষতা তৈরি হয়েছে। সরকারি খাদ্যপণ্য খালাস প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল; সবাই সেই কাজ করতে পারে না। আমি সেই জটিল কাজ নির্বিঘ্নে করছি।
“ফলে দেখা গেছে ২৫ হাজার টন চাল জাহাজ থেকে নামাতে সময় লেগেছে মাত্র ৮দিন। জাহাজটি বহির্নোঙরে এসেছিল ২৫ ডিসেম্বর বিকালে। বন্দর কাস্টমসসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের যাবতীয় অনুমতি আগেই আমি করে রেখেছি। ফলে জাহাজকে বহির্নোঙরে এক ঘণ্টা বাড়তি সময় বসে থাকতে হয়নি। এবারও আশা করছি, সবগুলো চাল দ্রুততার সাথে বন্দরে আসা জাহাজ থেকে নামাতে পারব।”
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের ১১টি জেলার ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে ১০ লাখ ৮৭ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। পরে অবশ্য সেই পর্যবেক্ষণ কমিয়ে ৮ লাখ টনে নামিয়ে আনা হয়।
সেই ঘাটতি পূরণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জরুরিভাবে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বাড়িয়ে সরকারি বিতরণ-ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে উন্মুক্ত দরপত্র ও জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আমদানি করা হচ্ছে।