‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আগামী সপ্তাহেই অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে বসবে। কীভাবে, কখন এই ঘোষণাপত্র ঘোষিত হবে- আগামী সপ্তাহেই সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রদের থেকে একটি ঘোষণা আসে যে তারা ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র দিবেন। সরকার তখন অনুভব করে যে যদি ছাত্ররা একা এই ঘোষণা দেয় তাহলে দেশের ঐক্য ও স্থিতি অবস্থা নষ্ট হতে পারে। সরকার তখন দায়িত্ব নেয় যে সকল পক্ষের সাথে কথা বলে এই ডকুমেন্ট রেডি করবে।
“শুধু রাজনৈতিক দল নয়, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকল পক্ষের সাথে কথা বলে ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে। কীভাবে, কখন কোথায় ঘোষণা হবে- তারও সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে আগামী সপ্তাহে জানাবে।”
গত ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছিল। তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। তখন পিছু হটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
৩১ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশে সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই ঘোষণাপত্র দ্রুত তৈরির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এবিষয়ে সমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে ৬-১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে এই নাগরিক কমিটি গঠিত হয়।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আল্টিমেটাম প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি ১৫ তারিখের মধ্যে করার জন্য। কিন্তু সরকারের যেহেতু সবার সাথে কথা বলতে হবে। এজন্য কিছু সময় বেশি লাগতে পারে। এতে খুব বেশি দেরি হবে না। কয়েকদিনের মধ্যেই এটা হয়ে যাবে।
“সরকার সবার মতামত নিয়ে এই ঘোষণাপত্র করতে চায়। আমরা আশা করি, শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধৈর্য ধারণ করবেন। এটা যদি সর্বসম্মতিক্রমে হয় তাহলেই মনে হয় এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সংবিধান বাতিলের দাবি ঘোষণাপত্রে থাকবে কিনা- এ প্রশ্নে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “এটা শিক্ষার্থীদের একটি দাবি। ৭২ সালে সংবিধান যখন প্রণীত হয়েছে তখন থেকেই একে অনেক রাজনৈতিক দল ক্রিটিক্যালি দেখেছে।
“গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের একটি জিনিসই দরকার। তা হলো ঐক্য। ফলে ঐকমত্যে যদি আমরা পৌঁছাতে পারি সংবিধান প্রশ্নে তাহলে ভালো। শিক্ষার্থীদের বাতিলের দাবি যেমন আছে, তেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্ন বক্তব্য আছে। এটাতে যেহেতু বিতর্ক আছে, সেহেতু আমরা এসব বিষয়ে সবার সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিব।”
জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “প্রশাসক দিয়ে আমরা জনগণের কাছে সেবা পৌঁছাতে পারছি না। আপনি সিটি কর্পোরেশন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের দিকে তাকালে দেখবেন অনেক সেবাই নাগরিকরা পারছে না। এটা একটা প্রস্তাবনা আকারে স্যার (ড. ইউনূস) বলেছেন।
“স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি হয় তাহলে নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত হবে। আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা অগ্রসর হতে পারব।”
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।