Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

বিডিআরের চাকরিচ্যুতরা কেন ১৬ বছর পর আন্দোলনে

‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ ব্যানারে শাহবাগে কর্মসূচি পালনের সময় চাকরিচ্যুত জওয়ানদের কয়েকজন সড়কে শুয়ে পড়েন। ছবি : হারুন অর রশীদ
‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ ব্যানারে শাহবাগে কর্মসূচি পালনের সময় চাকরিচ্যুত জওয়ানদের কয়েকজন সড়কে শুয়ে পড়েন। ছবি : হারুন অর রশীদ
[publishpress_authors_box]

রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী থেকে চাকরি হারিয়েছিলেন ৬ হাজারের বেশি সদস্য। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এখন চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার তারা শাহবাগে অবস্থান নিলে যান চলাচল ব্যাহত হয়ে দুপুর বেলায় রাজধানীতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে চলা মামলার শুনানি শুরুর দিনে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসে।

এর আগে দুই দিন ‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের কর্মসূচি চলছিল। বৃহস্পতিবার ‘শাহবাগ ব্লকেড’ নামে কর্মসূচি পালনে আসে তারা। চাকরিচ্যুতদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

এদিকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী আদালতে এদিন অগ্নিকাণ্ড ঘটায় বিস্ফোরক মামলাটির শুনানি শুরু করা যায়নি। কবে এই শুনানি শুরু হবে, তাও এখন অনিশ্চয়তা পড়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরের মাসেই ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে জওয়ানদের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। পরে তা দেশের অন্যান্য স্থানেও বাহিনীর সেক্টরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

দুদিনের সেই বিদ্রোহে পিলখানায় বাহিনীর সদর দপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। তার মধ্যে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদও ছিলেন। অন্যান্য সেক্টরে বিদ্রোহ হলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এরপরই সীমান্ত রক্ষী বাহিনী খোলনলচে বদলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) থেকে বাহিনীর নাম বদলে হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বাহিনীর পোশাকেও পরিবর্তন আসে।

আওয়ামী লীগ আমলে তদন্তে বেরিয়ে আসে ‘ডাল-ভাত’ কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ থেকে বিডিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করেছিল। তবে এর পেছনে অন্য ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছর আগের বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানায় অর্ধ শতাধিক সেনা কর্মকর্তা হত্যার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছে। এর প্রধান করা হয়েছে দুই যুগ আগে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া আ ল ম ফজলুর রহমান।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকার নতুন চোখে দেখতে চাওয়ার পর তখন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা আন্দোলন শুরু করেছেন।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রচলিত আদালতে চললেও বিদ্রোহের বিচার বাহিনীর বিশেষ আদালতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাতে এই বাহিনীর ৬ হাজারের বেশি সদস্য চাকরিচ্যুত হন।

চাকরিচ্যুত সেই সদস্যরাই এখন আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের স্লোগানে বাহিনীর নাম আগের মতো বিডিআর করার আওয়াজও ওঠে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত চেয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে চাকরিচ্যুত সদস্যরা।

আন্দোলনকারীরা চান কী

‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ এ অংশগ্রহণকারীরা তিন দফা দাবি তুলেছেন। দাবিগুলো হচ্ছে- পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত বিডিআর সদস্যদের মুক্তি, তাদের মামলা বাতিল; চাকরিচ্যূতদের ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বহাল; পিলখানা হত্যা মামলায় পুনঃতদন্ত করা।

এই দাবি আদায়ে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন মো. আনোয়ার হোসেন। বিডিআরে সৈনিক হিসাবে ৫ বছর ১০ মাস ১৪ দিন চাকরি করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে বিদ্রোহের সময় যশোরের ঝুমঝুমপুর ক্যাম্পে তিনি কর্মরত ছিলেন।

শাহবাগ মোড়ে বসে আনোয়ারের সঙ্গে যখন কথা হয় তখন, ‘তুমি কে আমি কে, বিডিআর বিডিআর’; ‘বিজিবি না বিডিআর, বিডিআর বিডিআর’; ‘তোমার আমার ঠিকানা, পিলখানা পিলখানা’ স্লোগানে মুখর শাহবাগ।

আনোয়ার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিদ্রোহের দিন ঝুমঝুমপুর ক্যাম্পে একটি গুলি ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় সেখানে গোলাগুলির মিথ্যা খবর প্রকাশিত হয়। সেই মিথ্যা খবরের ভিত্তিতে কোনও তদন্ত ছাড়াই ঝুমঝুমপুর ক্যাম্পের আমার মতো আরও অনেককে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। কোনও ধরনের আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।

“তাই আমার চাওয়া, পুরো ঘটনা আবার তদন্ত করা হোক। আমার মতো নির্দোষ যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের পুনর্বহাল করা হোক।”

বিডিআরের চাকরিচ্যুত সৈনিক আবদুল মোমিন কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন সিরাজগঞ্জ থেকে। ১৬ বছর ১ দিন বিডিআরে থাকার পর চাকরি হারিয়েছিলেন তিনি।

মোমিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “১৬ বছর দেশের সেবা করার পর কোনও দোষ না করেও আমাকে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। সেই থেকে দুর্বিষহ জীবন কাটছে আমাদের। আমি এই জীবনের অবসান চাই।”

বিদ্রোহের সেই ঘটনার নতুন করে তদন্ত চেয়ে তিনি বলেন, “নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হোক। যারা অপরাধী ছিল, তাদের সাজা হোক। কিন্তু যারা অপরাধী নয়, তাদের কেন শাস্তি হবে?”

চাকরিচ্যুত এই বিডিআর সদস্যরা তাদের পরিবারকেও কীভাবে ভুগতে হচ্ছে, তাও জানান।   

এক বিডিআর সদস্যের মেয়ে এক তরুণী নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “যখন বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সময়, তখন আমি জেলখানার শিক ধরে কান্না করেছি। বিনা দোষে আমার নিরাপরাধ বাবা সাজা পেয়েছেন। তার সঙ্গে আমাদের পুরো পরিবারই গত ১৬ বছর ধরে সাজা ভোগ করে চলেছি।

“সেদিন শুধু সেনাসদস্যদেরই হত্যা করা হয়নি। একইসঙ্গে নিরীহ অনেক বিডিআর সদস্যকেও ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এই প্রহসনের বিচার মানি না। তাই পুনঃতদন্ত দাবি করছি আমরা।”

চাকরিচ্যুত আরেক বিডিআর সদস্য বলেন, “আমি বিনা দোষে জেল খেটেছি, চাকরি হারিয়েছি। এত কিছুর পরও আমাদের ভোগান্তি শেষ হয়নি। আমার ছেলে নৌবাহিনীর চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েছিল, কিন্তু আমার কারণে তাকে ভেরিফিকেশনে বাদ দেওয়া হয়েছে।”

পুলিশের ব্যারিকেড ঠেলে শাহবাগে অবস্থান নেয় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। ছবি : হারুন অর রশীদ
পুলিশের ব্যারিকেড ঠেলে শাহবাগে অবস্থান নেয় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। ছবি : হারুন অর রশীদ

এখন কেন আন্দোলন?

ফরিদপুর থেকে আসা মো. জুবায়ের ও মাহমুদুল হাসান সোহাগ নামে চাকরিচ্যুত দুজন বিডিআর সদস্য তাদের এই বিপদে পড়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করেন।

জুবায়ের বলেন, “তারা নিজেদের অপরাধ বিডিআরের সাধারণ সদস্যদের ওপর চাপিয়েছে। গত ১৬ বছর ধরে বিচারের নামে প্রহসন করেছে তারা।”

এখন কেন আন্দোলনে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সোহাগ বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। তাই এখন সুবিচার পাব বলে আশা করছিলাম। কিন্তু এখনও আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।”

গাইবান্ধা থেকে তিনটি বাসে প্রায় ১৫০ জন বিডিআর সদস্য ও তাদের স্বজন ঢাকায় এসেছেন।

তাদেরই একজন মাহবুবুর রহমান মণ্ডল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় এসেছি। এরপর থেকে শহীদ মিনারেই অবস্থান করছি আমরা। তীব্র শীতের মধ্যেও গতকাল রাতে প্রায় ৭-৮ হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে ছিল।

“কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উপদেষ্টা আমাদের কাছে আসলেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।”

বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালত পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখন সঠিক বিচারের জন্য আন্দোলন করছি, তখন বিচারালয়ই পুড়িয়ে দেওয়া হলো। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

“আদালত পুড়লে আমরা বিচার পাব কোথায়? এটা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অনেকেই চায় না বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রকৃত বিচার না হোক। এটা তাদেরই ষড়যন্ত্র।”

‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। ছবি : হারুন অর রশীদ
‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদ’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। ছবি : হারুন অর রশীদ

বিচার-সাজা-চাকরিচ্যুতি

সারাদেশে বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের নিজস্ব আইন দেশব্যাপী বাহিনীর সেক্টরগুলোতে বিচার হয়েছিল।

ওই সময় বিডিআর আদালতে ৫৭টি মামলায় সেই বিচারের আওতায় নেওয়া হয়েছিল ১১ হাজার ৩০৬ জন জওয়ানকে।

বিডিআর আইনে বিদ্রোহের ন্যূনতম শাস্তি ছিল ৪ বছর কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল সাত বছরের কারাদণ্ড।

চার বছর পর বিচার শেষে বিজিবির পক্ষ থেকে পরে জানানো হয়েছিল, বিদ্রোহের ঘটনায় ১০ হাজার ৮৭৮ জওয়ানের শাস্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ হাজার জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ফৌজদারি মামলায় যারা আসামি, সেই ৮৫০ জনও চাকরিচ্যুত হন।

আর বিচারের মুখোমুখি হয়ে যারা খালাস পেয়ে যান, তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।

বিদ্রোহের বিচার শেষের পর বিজিবির তৎকালীন মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ বলেছিলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, আমরা চেষ্টা করেছি তাদের শনাক্ত করতে।”

পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার বিচার চলে ঢাকার আদালতে। তবে আসামির সংখ্যা হাজারের মতো হওয়ায় বিচার নির্বিঘ্ন করতে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী আদালত।

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মামলায় এত সংখ্যক আসামির মৃত্যুদণ্ড আর কখনও হয়নি। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় দেয় হাই কোর্টে, সেই রায়ও ছিল ২৯ হাজার পৃষ্ঠার।

হাই কোর্ট ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। বর্তমানে এ মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

তবে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনও চলছে ঢাকার মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। এই আদালতই এই মামলার শুনানি নিচ্ছে বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতে।

এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পিলখানার বিদ্রোহের ঘটনাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ জমা পড়েছে।

তাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ ৫৮ জনকে।

আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে অভিযোগে।

গত মাসে ওই অভিযোগ জমা পড়ার চার দিন পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম ওই ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত জানান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত