Beta
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫

সবজির স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে চাল

ss-bazar-rice-07092024
[publishpress_authors_box]

শীতের সবজিতে বাজার সয়লাব। দাম কমায় স্বস্তির হাসি ক্রেতার মুখে। কিন্তু মাসের শুরুতে বস্তা ধরে চাল কিনতে গিয়ে বাড়তি দাম শুনে তাদের অনেকেরই হাসি ফুরিয়ে গেছে।

তাদেরই একজন রাজধানী ঢাকার কলাবাগানের বাসিন্দা মো. সোহেল রানা। শুক্রবার বাজার করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ২০ কেজি চালের এক বস্তায় দাম বেড়েছে ২০০ টাকা।

এই ক্রেতা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার ছোট পরিবার। প্রতি মাসে ২০ কেজির এক বস্তা করে চাল কিনি। বৃহস্পতিবার বেতন পেয়ে শুক্রবার বাজারে এসেছি এক বস্তা চাল কিনব। কিন্তু দেখি ২০০ টাকা বেশি চাচ্ছে। বস্তার দাম পড়ছে ১৮৫০ টাকা। গত মাসে এই চালের বস্তা কিনেছিলাম ১৬৫০ টাকায়।”

বাজারের একটি তালিকা দেখিয়ে এই ক্রেতা বলেন, “হিসাব করে বাজারে এসেছি। এখন তো দেখছি টাকায় কম পড়ছে।”

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের আমদানি শুল্ক কমানো, ভর্তুকি মূল্যে বিক্রিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। মোটা চালের দামও কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। আমন মৌসুমেও চালের বাজারে চলছে এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।

চিকন চালের মধ্যে বাংলামতি (মিনিকেট) ও নাজিরশাইল অন্যতম। মোটা চালের মধ্যে পাইজাম ও আঠাশ অন্যতম।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের নাজিরশাইল চাল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯৩-৯৪ টাকা। ১০-১২দিন আগে এর দর ছিল ৮৪-৮৫ টাকা। মিনিকেট চালের কেজি বর্তমানে ৮৪-৮৫ টাকা। আগে যা ছিল ৭৮-৮০ টাকা।

কারওয়ান বাজারে পাইজাম ও আঠাশ জাতের চালের কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি। এক মাসে এই চালের কেজি ২-৩ টাকা কম ছিল। 

বাজারের এই দামের সঙ্গে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের পার্থক্য রয়েছে।

সংস্থাটি শুক্রবার চিকন চালের সর্বোচ্চ দর দেখিয়েছে ৮৪ টাকা কেজি। গত ২৯ ডিসেম্বর এ ধরনের চালের সর্বোচ্চ দর ছিল ৮০ টাকা।

টিসিবি মোটা চালের সর্বোচ্চ দর দেখাচ্ছে ৫৮ টাকা। গত ৫ জানুয়ারি এই দর ছিল সর্বোচ্চ ছিল ৫৫ টাকা।

সেই হিসাবে টিসিবির তথ্যও বলছে সম্প্রতি চালের দাম বেড়েছে।

চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেন অনেকে।

ঢাকার মুদি দোকানের বিক্রেতারা বলছেন, তারা নিজেরাই জানেন না চালের দাম কেন বাড়ছে।

নর্দার সততা জেনারেল স্টোরের মালিক মনিরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরবরাহকারীরা ১০-১২ দিন আগে চালের দাম বাড়িয়েছে। একারণে আমরাও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বাড়িয়েছি। তবে কি কারণে চালের দাম বেড়েছে তা জানি না।”

চালের দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমন মৌসুমে চালের বাজারের অস্থিরতার পেছনে বড় কারণে হতে পারে মজুতদারি।

গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। বাজারে চালের ঘাটতি নেই। ফলে চালের যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা অযৌক্তিক। দাম বাড়ার পেছনে সাময়িক মজুতদারি হয়েছে।

চালকল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের নেতারা বলছেন, মজুতের দায় বড় কর্পোরেট বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর। মিল মালিক বা সাধারণ ব্যবসায়ীরা এজন্য দায়ী নয়।

গত বছর দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে আমন উৎপাদন কম হয়েছে বলে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি আমন মৌসুমে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বন্যায় কিছু এলাকার জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে আবাদ সম্ভব হয়নি। আবাদ হওয়া ৫৬ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ৫৩ লাখ হেক্টরের ধান কাটা হয়েছে।

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। মিয়ানমার থেকে সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এক লাখ টন চাল আমদানি চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শীতকালীন সবজি অনেক সস্তায় মিলছে এক সপ্তাহের বেশি। একটি বড় আকারের ফুলকপিও ঢাকার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। টমেটোর কেজি নেমে এসেছে ৫০ টাকায়। পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও আলু ৪০-৪৫ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছে।

অথচ কিছু দিন আগেও পেঁয়াজের কেজি ছিল ১২০-১৩০ টাকা। আলুর দাম উঠেছিল ৮০ টাকা। ডিমের ডজন উঠেছিল ১৯০ টাকা, যা এখন ১৩৫-১৪০ টাকায় নেমে এসেছে। এমনকি সারা বছর বেশি দাম থাকলেও এখন ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ বাজারে। ফলে তরি-তরকারি-মাংসে কিছুটা স্বস্তি দেখছেন ক্রেতারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত