Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

পূর্বাচলের প্লট : প্রথম মামলায় আসামি শেখ হাসিনা ও পুতুল

শেখ হাসিনা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
শেখ হাসিনা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
[publishpress_authors_box]

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে রাজউকের পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

রবিবার করা এই মামলায় শেখ হাসিনার মেয়ে পুুতুলের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের ১৬ কর্মকর্তাকে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জানা যায় যে তার পরিবারের ছয় সদস্যকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

সেই বরাদ্দ বাতিলে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশনও তদন্তের উদ্যোগ নেয়। এরপর রবিবার এনিয়ে প্রথম মামলা হলো।

কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে সংস্থার মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নিজের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট সুবিধা থাকার পরও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আইন, বিধি ও নীতিমালা লংঘন করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।

“এতে তার মা শেখ হাসিনা সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।”

দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৭ বছর কারাদণ্ড।

অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি। তার মেয়ে পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক, তার দপ্তরও ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে।

গত ২৭ ডিসেম্বর পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামার কথা জানায় দুদক।

অভিযোগ রয়েছে, মেয়ে পুতুলের পাশাপাশি ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তিকে পূর্বাচলের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেন শেখ হাসিনা।

মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের ঘটনায় পুতুলেরটি নিয়ে প্রথম মামলার পর অন্যগুলো নিয়েও মামলা হবে বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পুতুলের প্লটের মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে এই মামলায়।

আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন- রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি- চ. দা) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম ও সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম।

দুদকের ডিজি আক্তার হোসেন বলেন, “এই প্লট বরাদ্দের সঙ্গে যে যে পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সুবিধাভোগী আছেন, সকলকেই এখানে আসামি হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তকালে যদি তদন্ত কর্মকর্তা এখানে আরও কারও সম্পৃক্ততা খুঁজে পান, তাহলে তাদেরকেও এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”

রাজউকের এই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য ২০০৮ সালে রাজউক থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। আবেদনের শেষ সময় ছিল ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর।

তখন ক্ষমতায় ছিল ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠন করেছিলেন শেখ হাসিনা।

দুদকের মামলায় বলা হয়, ১০ কাঠার ওই প্লট পেতে পুতুল রাজউকের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবং নির্ধারিত ফরমেও আবেদন করেননি। তারপরও শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়েকে ওই প্লট পাইয়ে দেন।

এজাহারে বলা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের স্বাক্ষরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর পত্র দেওয়া হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পুতুলকে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় ১০ কাঠা আয়তনের ওই প্লট বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে রাজউককে ওই প্লট বরাদ্দ দিতে বলা হয়।

মামলায় বলা হয়, পুতুলের আয়কর বিবরণীতে ধানমণ্ডির সুধা সদনের (বাবা ওয়াজেদ মিয়ার সূত্রে প্রাপ্ত) কথা রয়েছে। তাছাড়া গুলশান-১ এর ৭ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়িটিও তার।

এই মামলায় আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার ছেলে জয়, বোন শেখ রেহানা, তার সন্তান আজমিনা ও রাদওয়ানের নামেও রাজউক এলাকায় প্লট রয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

গত ২২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।

তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়েক বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জয় এই দুর্নীতির প্রমাণ দিতে দুদকের প্রতি চ্যালেঞ্জও জানিয়েছেন।

দুর্নীতির পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে নিহতের ঘটনাগুলোর জন্য শেখ হাসিনার বিচারের উদ্যোগও নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণহত্যার অভিযোগের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট নূপুর আখতারকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ৯৩ জনের মামলাটি এজাহার হিসাবে গ্রহণে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার আদালত।

রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাইফুর রহমানের আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে অভিযোগটি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

নূপুরের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বিকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় আক্রান্ত হন তিনি। হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করা হয়েছিল। তার বাম হাতে একটি গুলি এবং মাথায় আরেকটি গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেও সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তারা ঢুকতে দেয়নি।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১৭ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলির বিচ্ছিন্ন অংশ বের করা হয় বলে নূপুর জানান।

মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকারকেও আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত