Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৭ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী।
[publishpress_authors_box]

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর নামে থাকা ৫৬ কোটি ৬৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২ টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে রয়েছে ১৯ দশমিক ৮২ একর জমি, তিনটি বাড়ি, দুটি ফ্ল্যাটও ১৬টি গাড়ি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদের আবেদনে রবিবার (১২ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। শুনানিতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. রেজাউল করিম রেজা।

শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসা হেনরী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হন। তিনি ২০০৮ সালে সহকারী শিক্ষক থেকে সরাসরি সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ব্যাপক সাড়া ফেললেও বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদের কাছে হেরে যান তিনি।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হেনরী হন সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। সেসময় ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য ঘটনায় তার নাম আলোচনায় আসে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে দুদুক তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হেনরী ও তার স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. লাবু তালুকদার মৌলভীবাজারের এক বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।

সেখান থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর র‌্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ সদরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলায়।

এর আগে ২০ আগস্ট হেনরীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় হেনরী ও তার স্বামী লাবুর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৭৮ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।

দুদক বলছে, হেনরী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ২২৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার স্বামীর ২০ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ২১৫ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।

হেনরীর জব্দের নির্দেশ দেওয়া স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জের মুজিব সড়কের ৭তলা বাড়িসহ জমি, ভূতেরদিয়ারে জমিসহ বাড়ি, সদানন্দপুরে জমিসহ ফ্ল্যাট, রাজধানী ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট ও সিরাজগঞ্জের রতনকান্দির বাহুবায় দুইতলা ভবন। এসব সম্পত্তির দলিলমূল্য ৫ কোটি ২২ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা।

সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার ১৯ দশমিক ৮২ একর জমি জব্দ করতে বলা হয়েছে। ৪০টি দলিলে কেনা এসব জমির দলিলমূল্য ১১ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার ৬২৯ টাকা।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, হেনরী ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৯টি একাউন্ট পাওয়া গেছে; যাতে মোট ৫৬ কোটি ৬৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২ টাকা রয়েছে। নিজ ও যৌথ নামে অর্জিত এসব জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এবং অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ যাতে হেনরী হস্তান্তর না করতে পারেন সেজন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তার একাউন্ড অবরুদ্ধ করা হয়।

দুদকের তদন্তে হেনরীর নামে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত চারটি লিমিটেড কোম্পানিতে মালিকানা/বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া যায়। এসবের মালিকানা হস্তান্তর ঠেকানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে হেনরি অপটিক্যাল ফাইবার লিমিটেডের ৩৫ হাজার শেয়ার, এরআরএল ইকু ব্রিকস লিমিটেডের ৫০ হাজার শেয়ার, জেসমিন কনস-টেক লিমিটেডের ৩৪ হাজার শেয়ার ও ইআরএলএ লিমিটেডের ১ হাজার ৫০০ শেয়ার। এসব বিনিয়োগের মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা।

হেনরীর নামে থাকা যে ১৬টি গাড়ি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মূল্য ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, মামলার এজাহারনামীয় আসামি সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হেনরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ২২৩ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও নিজ ভোগ দখলে রাখার অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া ৩৫টি ব্যাংক একাউন্টে ২ হাজার ২ কোটি ৬৬ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৭৭ টাকার ও ১৩ কোটি ৭৮ লক্ষ ৪৬ মার্কিন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন তিনি।

আবেদনে আরও বলা হয়, মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে এসবের রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় হেনরীর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে।

নবগঙ্গা ট্রেডিংয়ের পরিচালক শম্পা রানীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নবগঙ্গা ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের পরিচালক শম্পা রানীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

রবিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনে এ আদেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়, শম্পা রানী সাহার নবগঙ্গা ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড কর্তৃক উত্তরা ফাইন্যান্স লি. থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। তিনি বিদেশে পালাতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশযাত্রা ঠেকানো প্রয়োজন।

দুদকের পক্ষে আইনজীবী রেজাউল করিম রেজা শুনানি করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত