কোমরের ব্যথা ভুগে ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়ার উদাহরণ মিলবে দেশ থেকে বিদেশেও। যদিও ইউনিভার্সিটি অব সিডনি নতুন এক গবেষণা থেকে সবাইকে ভিন্ন সমাধানের পথ দেখাচ্ছে।
জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত এই গবেষণার বরাতে মেডিকেল এক্সপ্রেস ডটকম জানাচ্ছে, জীবন যাপনের ভারসাম্য ধরে রেখে কোমরে ব্যথার যত্ন নিলে সবভাবেই আরাম উপভোগ করা সম্ভব।
অস্ট্রেলিয়াতে ৩৪৬ জনের উপর এই জরিপ করে দেখা হয়েছে। এদের সবাই দীর্ঘদিন ধরে কোমরের ব্যথা ভুগছিলেন। পাশাপাশি এদের কারও না কারও স্থূলতা, বাজে খাদ্যাভাস, টানা বসে থেকে কাজ করা কিংবা ধূমপানের মতো কোনো না কোনো অভ্যাসও ছিল।
গবেষণায় অংশ নেয়া সবাইকে ছয় মাসের জন্য ছন্দময় জীবন যাপন মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়।
মোট অংশগ্রহণকারীদের দুটো দলে ভাগ করা হয়। এরমধ্যে একটি দল ছিল ‘হেলদি লাইফস্টাইল প্রোগ্রাম’, যেখানে জীবন যাপনের ভারসাম্যে গুরুত্ব দেয়া হয়। অন্য দলে ছিল ব্যথা কমাতে প্রথাগত ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি।
হেলদি লাইফস্টাইল প্রোগ্রামের সবাইকে সাইকোথেরাপিস্টের অধীনে রাখার পাশাপাশি পুষ্টিবিদের পরামর্শ এবং টেলিফোনে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের জীবন যাপনের অভ্যাসে নজর দেয়া হয়েছে। তাদের ওজন, বসে কাজ করার অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, ঘুমে ঘাটতি, ধূমপান ও অ্যালকোহলে আসক্তি কাটাতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
হেলদি লাইফস্টাইল পদ্ধতিতেই ভালো ফলাফল উঠে এসেছে গবেষণায়। এমনকি এই দলের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দেড় কেজিরও বেশি ওজন কমে আসতে দেখা গেছে।
সহকারী অধ্যাপক ক্রিস উইলিয়াম এ নিয়ে বলেন, “আমাদের শরীর মেশিনের মতো নয়। আমরা বরং বাস্তুতন্ত্রের মতো, যেখানে অনেকগুলো উপাদান একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করে নির্ধারণ করে আমাদের শরীর কীভাবে কাজ করবে এবং আমরা কেমন অনুভব করব। কোমরে ব্যথাও এর বাইরে নয়।
“সুতরাং কারো কোমরে ব্যথা ভালো না হলে, পুরো শরীরের নিয়ম নিয়ে ভাবতে হবে; শুধু মেরুদণ্ড নিয়ে ভাবলেই হবে না। এই কথাটা একেবারে উঁচু থেকে গলা চড়িয়ে জানানো দরকার।”
“এখন অনেক গবেষণা থেকেই দেখা যাচ্ছে, বালজিং ডিস্ক বা ডিস্ক নড়ে যাওয়া এবং হাড়ের জোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কোমরে ব্যথায় ভোগার সম্পর্ক নেই। অনেকের বেলাতেই অপারেশন ও ওষুধের পরামর্শ দেয়া হয়, যা খুব একটা কাজে লাগে না। বরং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি ডেকে আনে।”
এই গবেষণা ওষুধ ও থেরাপি থেকে নজর সরিয়ে জীবন যাপনের পদ্ধতিতে গভীর নজর দিতে পরামর্শ দিচ্ছে।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং ইউনিভার্সিটি অব সিনডিতে সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ড. এমা মড বলেন, “অনেক দিন ধরে ব্যথায় ভুগছেন এমন অনেকে আমাদের কাছে বলেছেন, তারা নিজেদের অভাগা মনে করেন। তাদের চিকিৎসা খরচ বেশি হয়, কিন্তু চিকিৎসা কাজে দেয় না। কিন্তু তাদের নিজের জীবন যাপনে বদল আনার বিষয়ে কিছুই বলা হয় না।
অথচ প্রতিদিনের জীবনে ছন্দ বজায় রাখলে প্রত্যেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন। আর এই পদ্ধতি তাদের ব্যথা নিরাময়েও কাজে দেবে বলে মনে করেন এমা মড।
পাশাপাশি গবেষকরা মনে করেন, হেলদি লাইফস্টাইল প্রোগ্রাম অনুসারে চললে দীর্ঘদিনের অনেক অসুখ থেকেই স্বস্তি মিলবে।
তবে এই গবেষণা এখনও আন্তর্জাতিক নির্দেশনা আকারে ঘোষণা হয়নি।
মড বলেন, “আমাদের গবেষণা হয়ত কোমরা ব্যথা নিরাময়ে নির্দেশনা ঘোষণায় সহায়ক হয়ে উঠবে।
“ক্লিনিকে যারা কোমরা ব্যথার চিকিৎসা দেন, তারা রোগীর প্রতিদিনের অভ্যাসে নজর দিতে পারেন। রোগীর কথা শোনা হলে তারা স্বস্তি খুঁজে পান”, বললেন সহকারী অধ্যাপক উইলিয়ামস।