‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সভা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কবে, কীভাবে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে- সভায় সে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সবাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে একমত। ঘোষণাটি কবে এবং ভেতরে কী কী কনটেন্ট থাকবে- তা নিয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। আগামী বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় একটি বৈঠক হবে। আমরা আশা করি, আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে দলিলটি প্রণীত হবে।
“আমরা কবে এই ঘোষণাপত্রটি ঘোষণা করব এবং সরকার কীভাবে তা জারি করবে- তার সিদ্ধান্ত হবে। ঘোষণাপত্রের অধিকাংশ জায়গায় সবাই একমত। সেখানে কিছু দ্বিমত আছে। সেগুলো তারা তাদের পার্টির ভেতরে আলোচনা করে ঠিক করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।”
গত ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছিল। তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। তখন পিছু হটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
৩১ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশে সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই ঘোষণাপত্র দ্রুত তৈরির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এবিষয়ে সমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে ৬-১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচি নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে এই নাগরিক কমিটি গঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, “ছাত্রদের পক্ষ থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর এই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা ছিল। তারপর সরকার সকল পক্ষের সাথে কথা বলে এই ঘোষণা করার উদ্যোগ নেয়। ছাত্রদের যেই ঘোষণাপত্র সেটার অবলম্বনে আমরা ঘোষণাপত্র তৈরির চেষ্ঠা করেছি।
“বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিংবা পক্ষের কাছ থেকে এই ঘোষণাপত্র নিয়ে তাদের অভিমত নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা সকলের সাথে কথা বলতে পারি নাই। কিন্তু বিএনপি, জামায়াত, গণসংহতি আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিভিন্ন নারী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠনের সাথে কথা বলা হয়েছে।”
বিএনপির দ্বিমতগুলো জানতে চাইলে এই উপদেষ্টা বলেন, “আমরা জানি না তাদের দ্বিমতগুলো। আমরা মনে করি, তারা তাদের পার্টির এক্সপার্টদের সাথে কথা বলছেন- একটি ঘোষণাপত্রে কী থাকতে পারে এসব নিয়ে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের সভার মাধ্যমে এই জটলতা মিটবে। সর্বদলীয় সভার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠা হবে এবং এই ঘোষণাপত্রটিও ফলপ্রসূ হবে।”
ঘোষণাপত্র সংবিধানে লিপিবদ্ধ হবে কি না- এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, “এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে একটি আইনি ডকুমেন্ট জারি করা নিয়ে সরকারের মধ্যে পর্যালোচনা-আলোচনা আছে। এটা মূলত আমাদের সরকারের ন্যায্যতা তৈরির জন্য। এটা আমাদের নিজেদের করা ঠিক না।
“তাই সবাই মিলে যেই ঘোষণাপত্র তৈরি করবে, আমরা তার সূত্র ধরে করব। সংবিধানে সংযুক্ত হবে কি না- এটা নির্ধারণ হবে গণপরিষদ কিংবা সংবিধান সংশোধনীর ওপর। আমরা আশা করি, সামনের নির্বাচনে যারাই জিতবে তারা অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকবেন। এই ঘোষণাকে তারা ধারণ করবেন। এটাকে সামনে নিয়েই তারা জনগণের কাছে যাবেন এবং নির্বাচিত হয়ে আসবেন।”
ঘোষণাপত্রের পাঠের দিন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টামণ্ডলীর অনেকেই উপস্থিত থাকবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান মাহফুজ আলম।