Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

হত্যা নয়, এবার ‘হত্যাচেষ্টা’র মামলা বিএসএমএমইউর

বিএসএমএমইউতে গত বছরের ৪ আগস্ট সংঘর্ষের সময় কয়েকটি মোটরবাইক ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ফাইল ছবি
বিএসএমএমইউতে গত বছরের ৪ আগস্ট সংঘর্ষের সময় কয়েকটি মোটরবাইক ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

আগস্টে সরকার পতনের আগের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) যে সহিংস ঘটনা ঘটেছিল, তার পাঁচ মাস পর ১৫ জন চিকিৎসক-কর্মচারীকে বরখাস্তের আদেশে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। যদিও সেদিন বিএসএমএমইউতে সংঘর্ষে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। 

এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। তবে আবারও মামলা দেওয়া হয়েছে।    

এবার আর হত্যা নয়, হত্যাচেষ্টা উল্লেখ করে মামলা করেছে বিএসএমএমইউ। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন।

মামলায় ঘটনাস্থল সর্ম্পকে লেখা হয়েছে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ভেতরে ও ১ নম্বর গেইটের সামনে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ওয়ার্ড নং ২১, শাহবাগ থানা।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, হাসপাতালের ২৫ থেকে ৩০ জন চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের। সেখানে বলা হয়েছে, বেআইনি জনতাবদ্ধ হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা, সাধারণ ও গুরুতর জখম, ক্ষতিসাধন ও আগুনে পোড়ানোর অপরাধ।

বিএসএমএমইউর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘বিএসএমএমইউতে হত্যার অভিযোগে বরখাস্ত ১৫; কিন্তু কাকে হত্যার জন্য’ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এ মামলা করা হয়েছে।

“এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিএসএমএমইউর সিন্ডিকেট নড়েচড়ে বসে। সেখানে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বরখাস্ত করা কেন হয়েছে এ নিয়ে আলোচনা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রো ভিসি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারকে তলব করার পর আজ এই মামলা দায়ের করা হয়।”

আজ কিসের ভিত্তিতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে মামলা হলো জানতে চাইলে প্রক্টর শেখ ফরহাদ সকাল সন্ধ্যাকে প্রথমেই বলেন, “আপনি খবর পেয়ে গেছেন…।”

‘হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নতুন করে মামলার বাদী আপনি’ এ কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, “ঠিক আমি না, এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত।”

তাহলে কীসের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ চিকিৎসকসহ অন্যদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলো- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে। আমরা তো তদন্ত কমিটি ছিলাম, তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছি। কিন্তু শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য ও রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম আবার বলেছেন, তারা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ১৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।”

নতুন করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় যে হত্যার সঙ্গে জড়িত স্পষ্ট করে বলে ১৫ জনকে বরখাস্ত করল, তার কী হবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটাতো সাময়িক বরখাস্ত ছিল।

“যদি রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হয়, যদি তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না যায়, তাহলে তারা ‘ওভারকাম’ করবে।”

কিন্তু তাদের যে মানহানি হলো, প্রমাণিত না হওয়ার পরও যে তাদের হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে বরখাস্ত করা হলো- এ প্রশ্নে এবার তিনি বলেন, “আপনি কি ভিডিওটা দেখেছেন, কী নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে, ছেলেটা যে মারা যায়নি তার প্রমাণ কী?”

‘কিন্তু আপনি তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন, আপনি নিজে বলেছিলেন সে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিল, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পর তার মৃত্যু হয়। ইসমাইল হোসেন রাব্বি নামে কেউ এ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি’- এ তথ্য উল্লেখ করলে তিনি কিছু বলতে পারেননি। 

সেইসঙ্গে যে রাব্বির কথা বলা হচ্ছে, সে গুলিতে মারা গিয়েছে, পেটানোর কারণে কারও মৃত্যু হয়নি- এ কথা বললে তিনি বলেন, “এর কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই যে সে মারা যায়নি। সেতো পেটানোতে মারা গিয়েছে।”

রাব্বির বোন সকাল সন্ধ্যাকে বলেছেন, তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে এবং এটা প্রমাণের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এবং এটা সেটা হলে তারাই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে- এ প্রশ্নে শেখ ফরহাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ বডি সিন্ডিকেট…সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত দিয়েছে।”

“আর আমিতো বললামই, যদি আমাদের প্রথম রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সেটা শোধরানো হবে।”

তাহলে কেন তাদের হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে বরখাস্ত করা হলো – এ প্রশ্নে প্রক্টর শেখ ফরহাদ বলেন, “আমি এখন ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) আছি, আপনার সঙ্গে পরে কথা হবে।”

ওটিতে থাকার কথা উল্লেখ করলেও তার আগেই তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ১১ মিনিট কথা বলেন।

জুলাই আন্দোলন তখন উত্তুঙ্গ; শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক আগের দিন ৪ আগস্ট বিএসএমএমইউতে ঘটেছিল সংঘর্ষ; হাসপাতালের ‘ডি’ ব্লকে (কেবিন ব্লক) ভাংচুর হয়েছিল ব্যাপক, আগুনও ধরানো হয়েছিল হাসপাতাল প্রাঙ্গণের বেশ কয়েকটি মোটরবাইক, গাড়িতে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা সেদিনও ছিল শাহবাগ মোড়ে, তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পাশের বিএসএমএমইউতে ঢুকে পড়ে। তাদের সঙ্গে বিএসএমএমইউর শিক্ষার্থী চিকিৎসক, কর্মচারীরাও যোগ দিয়েছিল।

প্রবল আন্দোলনে পরদিনই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। সরকারের পতন ও সংসদ ভেঙে দেওয়া হলে তিন দিন পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সরকার আসার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব বদলে যায়, বিএসএমএমইউ প্রশাসনেও 

৪ আগস্টের ঘটনা নিয়ে বিএসএমএমইউর শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভিডিও ফুটেজে পেটানো পেয়েছি। সে বারডেমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।”

আপনারা এই মৃত্যু নিয়ে নিশ্চিত কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা শিওর না, শুনেছি।” 

হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে কেন করা হলো- এ প্রশ্নে প্রক্টর এবং রেজিস্ট্রার দুজনই আজকের করা মামলা হত্যাচেষ্টা মামলার কথা বলেন। কিন্তু বিএসএমএমইউর গত ৫ জানুয়ারিতে করা অফিস আদেশে ১৫ জনকে বরখাস্ত করার কথা এড়িয়ে যান বারবারই।

৪ আগস্টের ঘটনা তদন্তের পর গত ৫ জানুয়ারি বিএসএমএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরে ১৫ জনকে বরখাস্তের আদেশ হয়।

সেদিন বিএসএমএমইউতে সংঘর্ষে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে বরখাস্তের আদেশে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর।

যে ভিডিও দেখে তদন্ত কমিটি হত্যাকাণ্ড ধরে নিয়ে শাস্তির সুপারিশ করেছে, সেখানে এক যুবককে মারধর করতে দেখা গেছে। নাম না জানা ওই যুবক মারা যাননি বলে প্রত্যক্ষদর্শী একজন দাবি করেছেন।

কিন্তু বারডেমে সেদিন কিংবা তার পরের দিন আন্দোলনে আহত কেউ মারা যাননি কিংবা সহিংসতায় মৃত অবস্থায় কাউকে নেওয়া হয়নি বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

পুলিশের খাতায় সেদিন শাহবাগে এক আন্দোলনকারীকে খুনের কথা লেখা আছে, তবে তা বিএসএমএমইউর ঘটনায় নয় বলে ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ইসমাইল হোসেন রাব্বি নামে ওই যুবককে বারডেমে নেওয়া হয়নি। গুলিবদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন, এ কথা লেখা আছে তার পরিবারের করা মামলার এজহারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত