Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট

Sook Yun Korea
[publishpress_authors_box]

টানা এক মাসের নাটকীয়তার পর গ্রেপ্তার হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা।

আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি গ্রেপ্তার হলেন।

বুধবার সকালে তদন্তকারীদের সঙ্গে নিজ বাসভবন থেকে উনকে বের হতে দেখা যায়। এরপর তাকে তদন্তকারীরা গাড়িতে করে নিয়ে যান। তাকে গ্রেপ্তার অভিযানে এক হাজারের বেশি পুলিশ অংশ নেয়।

অবশ্য বুধবার ভোরেই উনকে গ্রেপ্তার করতে মই ও তার কাটা যন্ত্র ব্যবহার করেন তদন্তকারীরা। কারণ প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষীরা বাসভবনের চারপাশে বাধা তৈরি করে রেখেছিল।

উনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। আর এই অপরাধের শাস্তি আজীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

উনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আগে থেকেই তিনি নিজ বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। এসময় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা রক্ষীরা তার বাসভবন ঘিরে রেখেছিল। বিভিন্ন কায়দায় তিনি গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছিল ততই তার ওপর আইনি চাপ বাড়ছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার দুর্নীতি তদন্ত দপ্তর (সিআইও), পুলিশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একযোগে উনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। এই মাসের শুরুতে প্রথমবার তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা হয়েছিল। তবে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা রক্ষীরা তদন্তকারী দল ও পুলিশকে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ করতে দেয়নি।

গ্রেপ্তারের পর উনের আগেই রেকর্ড করে রাখা একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ হয়। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্তগুলোকে আবারও ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় আইন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।

তিন মিনিটের ওই ভিডিও বার্তায় উন বলেন, “রিপাবলিক অব কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংবিধান ও আইন রক্ষার দায়িত্ব আমার। তাই এই ভুল ও বেআইনি কাজগুলো মেনে নিচ্ছি না। তবে অপ্রয়োজনীয় রক্তপাত বন্ধের জন্য এসবের জবাব দিচ্ছি।”

তদন্তকারীরা উনকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আটক রাখতে পারবে। এরচেয়ে বেশি সময় আটক রাখতে হলে সিআইওকে নতুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করতে হবে।

জিজ্ঞাসাবাদের পর উনকে সিউল ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে। এটি গিয়ংগি প্রদেশের উইওয়াং শহরে সিআইও’র দপ্তর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

বুধবার উনকে গ্রেপ্তারের সময় তার বাসভবনের বাইরে সমর্থক ও বিরোধীরা জমায়েত হয়েছিল। রয়টার্স ও সিএনএন এর সহযোগী চ্যানেল ওয়াইটিএন এর ভিডিওতে দেখা যায়, শূণ্যের নিচে তাপমাত্রার মধ্যেও বিক্ষোভকারীরা বাসে করে এসে উনের বাসভবনের চারপাশে অবস্থান নেয়।

জমায়েত হওয়া জনতার একাংশের মধ্য থেকে ‘পদত্যাগ করো’, ‘আপনার সময় শেষ’, ও ‘দায়িত্ব নাও’ এর মতো স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। আর উনের সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছিল ‘অবৈধ অভিশংসন’, ‘মুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার জয় হোক’, ‘আমরা জয়ী’ বলে।

উনের পিপল পাওয়ার পার্টি তার গ্রেপ্তারকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করেছে। পার্টির নেতা কওন সেং-ডং বুধবারের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এটি ‘দুঃখজনক’।

অন্যদিকে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা পার্ক চান-ডে বলেন, ইউনের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে যে ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনও ন্যায়বিচার আছে’।

বর্তমানে দেশটি পরিচালনা করছেন অর্থমন্ত্রী চই স্যাং মোক। তিনি অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু পার্লামেন্টের অভিশংসনের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপরই দায়িত্ব পান চই স্যাং মোক।

প্রেক্ষাপট

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট গত ৩ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারি করলে দেশটি ১৯৮৭ সালের পর সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে।

প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণা দেশটির সবাইকে হতবাক করে দেয়। কারণ, দেশটি গত চার দশক ধরে নিজেকে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র হিসাবে গড়ে তুলেছে।

দেশটিতে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদের অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতার সুরক্ষা রয়েছে, যা রক্তাক্ত স্বৈরাচারী শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস অতিক্রম করে অর্জিত হয়েছে।

প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির ঘোষণার দুই ঘণ্টার মধ্যেই সংসদ সদস্যরা জাতীয় পরিষদে একত্রিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ১৯০ জন সংসদ সদস্য সামরিক বাহিনী ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ইয়েলের আদেশের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ফলে ঘোষণার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ৪ ডিসেম্বর সকালে ইয়েল তার সামরিক আইন জারির ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

এরপর, প্রেসিডেন্টকে অপসারণে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়াও শুরু হয়। নানা নাটকীয় ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে অবেশেষে গত ১৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ইয়েলকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।

৩০০ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ২০৪ জন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস হতে ২০০ ভোট প্রয়োজন হয়। প্রস্তাবটি পাস করাতে ইয়েলের নেতৃত্বাধীন পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) আটজন পার্লামেন্ট সদস্যকে পক্ষ পরিবর্তনের জন্য রাজি করায় বিরোধীরা।

দেশটির এর আগের ৭ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে ৪ জনই দুর্নীতির অভিযোগে অভিশংসিত বা কারাবন্দি হয়েছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত