Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

এবার বিস্কুটসহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ভ্যাট নিয়ে আন্দোলনের হুমকি

bapa-press-Con
[publishpress_authors_box]

হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে এ খাতের ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পর এবার কম দামের বিস্কুট, কেকসহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক-কর বাড়ানো ভোক্তার স্বার্থবিরোধী। বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনে নামার এই হুমকি দেন বাপা নেতারা।

তারা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর করের বোঝা চাপানো হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যে হারে ভ্যাট বাড়ানোর হয়েছে, তাতে বিস্কুট, কেক, জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আর ভোক্তারা ক্রয়ক্ষমতা হারালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাপা সভাপতি এম এ হাশেম, সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এসিআই অ্যাগ্রি বিজনেস বিভাগের প্রেসিডেন্ট এফ এইচ আনসারি, স্কয়ার ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পারভেজ সাইফুল ইসলাম, আকিজ ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক সৈয়দ জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, কিষোয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায়। সেখানে মেশিনে উৎপাদন করা বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা, কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংকসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

এনবিআরের শুল্ক ও কর বৃদ্ধির এই উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রেস্তোরাঁ, তৈরি পোশাক, মিষ্টি, নন–এসি হোটেল, গ্যারেজে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।

সংবাদ সম্মেলনে বাপা সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, “আমরা এমন একটি খাতে ব্যবসা করি, যার সঙ্গে শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে প্রান্তিক কৃষকেরা সরাসরি জড়িত। শুল্ক–কর বাড়ানোর পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দামের ওপর বড় প্রভাব পড়বে না।

“তবে বাস্তবতা ভিন্ন। নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ সকালে চায়ের দোকানে এক কাপ চা, একটি বিস্কুট কিংবা কেক খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এখন যদি বিস্কুট ও কেকে ভ্যাটের পাশাপাশি গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়, তাহলে ৫ টাকায় একটি বিস্কুট কিংবা এক প্যাকেট বিস্কুট পাওয়া যাবে না। তাতে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ সহজে ক্ষুধা নিবারণের সুযোগ হারাবেন।”

তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে কোনও আলাপ না করে ক্যালকুলেটর টিপে গরিব মানুষের ৫ টাকা, ১০ টাকার খাবার পণ্যে ভ্যাট ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় করার বুদ্ধি যারা দেয়, তারা এ সরকারের ভালো চায় না। তারা এ সরকারকে বিপদে ফেলতে চায়। কারণ এভাবে ভ্যাট বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ে না।”

বাপা সভাপতি বলেন, “সরকারকে বোঝানো হয়েছে ট্যাক্স বাড়লেই রাজস্ব বাড়বে- এ কথা ঠিক নয়। এতে করে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায় ক্ষতি হতে দেখলে হয় পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেবেন, না হয় ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন। তাতে কেনাবেচা কমবে। সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পাবে না। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ, আমাদের শিল্পকে বাঁচান। এই সরকার অসংখ্য মানুষের আশা ভরসার সরকার।”

এসময় হুমকি দিয়ে এম এ হাশেম বলেন, “ভ্যাট-ট্যাক্স যদি প্রত্যাহার না করেন, আমরা রাস্তায় নামব। আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দেব। যদি ভ্যাট-ট্যাক্স বেড়েই যায়, এমনিতেই আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, তার চেয়ে বরং আমরাই বন্ধ করে দেব।”

সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী সরকারের উদ্দেশে বলেন, “খাবারের ওপর ভ্যাট বাড়াবেন না। তাতে মানুষের কষ্ট হবে।”

তিনি বলেন, “দেশে উৎপাদিত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিস্কুটের দাম ৫, ১০ ও ১৫ টাকার মধ্যে। এসব বিস্কুট বড়লোক খায় না। অথচ কম দামের এসব পণ্যের ওপর ৩০০ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাট না কমালে ছোট প্যাকেট থেকে দুটি বিস্কুট কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন উদ্যোক্তারা।”

আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯-১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৬ শতাংশ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোর কথা বলা হয়। মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টার মধ্যে ভ্যাটের বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী সাত দিন আমরা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করব। তারপরও বিষয়টির সমাধান না হলে রাস্তায় নামব।’

তিনি আরও বলেন, “আমরা ব্যবসায়ী। আমরা রাস্তায় নামতে চাই না। তবে ব্যবসা না থাকলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। আমাদের রাস্তায় নামাবেন না।”

এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলে ভোগ কমতে থাকে। সেটি হলে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি দূরে থাক, টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। পণ্যের দাম বাড়ালে বিক্রির পরিমাণ কমে যাবে। তাহলে সে ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব বাড়বে কীভাবে?

মানুষের মেজাজ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “অনর্থক ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে ব্যবসা ধ্বংস করবেন না। সাধারণ মানুষ, কৃষক, যুবসমাজ ও ব্যবসায়ীদের পালস বুঝে কাজ করুন।”

রেস্তোরাঁ মালিদের আন্দোলনের পর বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে জানিয়ে সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “দাবি না মানলে কী করতে হবে, তা আমাদের জানা আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অবদান ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এ খাতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সহস্রাধিক। তবে বাপার সদস্য প্রায় ৪০০। এসব প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাতের একটি।

হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে এই খাতের ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবারই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মূসক অনু বিভাগের দ্বিতীয় সচিব (মূসক আইন ও বিধি) বদরুজ্জামান মুন্সী। সম্প্রতি যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর মধ্যে দুয়েকটার কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলেও জানান তিনি।

মূল্যস্ফীতি যখন দুই অঙ্কের কোঠায়, তখন শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-কর বাড়ানোর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ী মহল থেকেও উঠেছে বিরোধিতা। বাংলাদেশে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি তা ঠেকাতে সেদিনই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুমকি দেয়।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশ করা না হলে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা প্রথমে মানববন্ধন করবেন। তাতে দাবি মানা না হলে সারা দেশে একদিনের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হবে। এরপরও দাবি মানা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

দাবি আদায়ে হোটেল-রেস্তারাঁর মালিক-কর্মচারীরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন করে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছিলেন তারা।

এমন প্রেক্ষাপটে রেস্তোরাঁ খাতের ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের ডেকে জানান এনবিআর কর্মকর্তা বদরুজ্জামান মুন্সী। এসময় তিনি হোটেল-রেস্তোরাঁর আন্দোলনরত মালিক-কর্মচারীদের কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত