শ্রেয়াস আইয়ার ও ইশান কিশান রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) বিরুদ্ধে। বোর্ড তাদের ঘরোয়া লিগ খেলতে বললেও চোটের দোহাই দিয়ে মাঠে নামছিলেন না তারা। ঘরোয়া লিগ না খেললে নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান তখন ছিল না। তবে বিসিসিআই এখন নিয়ম করতে যাচ্ছে। শুধু ঘরোয়া লিগে খেলা না, সব মিলিয়ে ১০টি নির্দেশনা থাকছে বিসিসিআইয়ের। আর সেই নিয়ম যদি ভাঙা হয়, তাহলে আইপিএলে পর্যন্ত নিষিদ্ধ হতে পারেন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মরা।
ভারত জাতীয় দলের সাম্প্রতিক সময়টা ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে, অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট সিরিজ হার খুব করে হতাশ করেছে বিসিসিআিইকে। অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে টানা দুইবার বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জিতে ফেরা দলটি এবার হেরেছে ৩-১ ব্যবধানে। এই হারের ব্যাটারের দায় সবচেয়ে বেশি। বোলাররা দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও হতাশ করেছেন রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা।
এর আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ভারত। টানা দুই টেস্ট সিরিজে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ওপর কঠোর হয়েছে বিসিসিআই। নতুন ১০ নির্দেশনায় ক্রিকেটাররা অনেক সুবিধাই হারাবেন। যার মধ্যে পরিবারকে বেশিদিনের জন্য সফরসঙ্গী রাখতে না পারার সঙ্গে নির্দিষ্ট ওজনের মধ্যে মালামাল নেওয়ার নিয়ম বেঁধে দেওয়া। এগুলো না মানলে ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে নিষিদ্ধ হবেন ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।
বোর্ড এই নির্দেশনা জারি করে চাইছে, ক্রিকেটারেরা খেলার প্রতি আরও মনোযোগী হোক। সেই সঙ্গে দলে একাগ্রতা, শৃঙ্খলা ও ইতিবাচক মনোভাব চাইছে বিসিসিআই। ইন্ডিয়া টুডে’র খবর, বিসিসিআই সভাপতি রজার বিন্নী অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কোচ গৌতম গম্ভীর ও প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকারের সঙ্গে বৈঠকে করে ১০টি নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছেন।
১. খেলতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেট
জাতীয় দলে সুযোগ ও কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় আসতে সব ক্রিকেটারকে খেলতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেট। কোনও ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে না পারলে কারণ জানাতে হবে আগেই। এজন্য অনুমতি নিতে হবে নির্বাচক কমিটির প্রধানের।
২. পরিবারের সঙ্গে যাতায়াতে বিধিনিষেধ
সব ক্রিকেটারকে দলের সঙ্গে থাকতে হবে, পরিবারের সঙ্গে আলাদাভাবে যাতায়াত করা যাবে না। যদি কেউ পরিবারের সঙ্গে যাতায়াত করতে চায়, তাহলে তাকে কোচ অথবা নির্বাচক কমিটির অনুমতি নিতে হবে।
৩. বেশি জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া যাবে না
চাইলেই যত খুশি তত জিনিসপত্র নেওয়ার সুযোগ আর থাকছে না ভারতীয় ক্রিকেটারদের। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ দিনের বেশি সফরে গেলে পাঁচটি ব্যাগ নিতে পারবেন একজন ক্রিকেটার। শুধু তা-ই নয়, এই পাঁচ ব্যাগের মোট ওজন ১৫০ কেজির বেশি হওয়া যাবে না। ৩০ দিনের কম হলে ক্রিকেটারদের ব্যাগের সংখ্যা কমে হবে চারটি। তখন বহন করা যাবে সর্বোচ্চ ১২০ কেজির ওজন।
৪. ব্যক্তিগত স্টাফে বিধিনিষেধ
ব্যক্তিগত স্টাফেও থাকছে বিধিনিষেধ। এখন থেকে ব্যক্তিগত ম্যানেজার, সহকারী, নিরাপত্তারক্ষী কিংবা রাঁধুনি নিতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। অবশ্য কেউ বেশি প্রয়োজন মনে করলে সেক্ষেত্রে লাগবে বোর্ডের অনুমতি।
৫. ব্যাগ পাঠাতে হবে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে
বাড়তি কোনও সরঞ্জাম কিংবা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিতে হলেও অনুমতি লাগবে। এজন্য বেঙ্গালুরুর সেন্টার অব এক্সিলেন্সে ওই ব্যাগ কিংবা সরঞ্জাম পাঠিয়ে অনুমতি নিতে হবে। এজন্য অবশ্য খরচটা ক্রিকেটারকেই বহন করতে হবে। বোর্ড এই খরচের ভার নেবে না।
৬. অনুশীলনে উপস্থিতি
নির্ধারিত অনুশীলনে আসা বাধ্যতামূলক। চাইলেই অনুশীলনে যাবেন না, ভারতীয় ক্রিকেটে এই দিন শেষ। অনুশীলনে নিজের মতো করেও যাওয়া যাবে না। যেতে হবে হবে দলের সঙ্গে, ফিরতেও হবে দলের সঙ্গে।
৭. বিজ্ঞাপনের কাজে নিষেধাজ্ঞা
সফরের মাঝে কোনোরকম বিজ্ঞাপনের কাজ করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। সিরিজ শেষ হলেই কেবল ক্রিকেটের বাইরের এই কাজ করতে পারবেন।
৮. সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে পরিবারের জন্য
বিদেশে ৪৫ দিন থাকতে হবে- এমন সফরের ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের বেশি স্ত্রী ও সন্তানকে সঙ্গে রাখতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। সফর চলাকালীন পরিবার একবারই আসতে পারবে। এই সময়ের খরচ বিসিসিআই বহন করবে। অবশ্য দুই সপ্তাহের বেশি যদি কেউ থাকতে চান, তাহলে নিজেকে খরচ বহন করত হবে। পরিবারের সদস্যরা কখন আসবেন, সেটা ঠিক করে দেবেন কোচ, অধিনায়ক ও বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশনস। ক্রিকেটারদের পরিবারের বাইরে এই সময়ে অন্য কেউ দেখা করার অনুমতি পাবেন না।
৯. বোর্ডের অনুষ্ঠানে থাকা বাধ্যতামূলক
বিসিসিআইয়ের শুট ও বিজ্ঞাপনের কাজে ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। বোর্ডের অনুষ্ঠানেও ক্রিকেটারদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
১০. থাকতে হবে সফরের শেষ পর্যন্ত
কোনও ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়ে গেলেও ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। যতদিন সিরিজ বা সফর শেষ না হবে, দলের সঙ্গে থাকতে হবে।