Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

চীনেও নেই টিকটক, নিষিদ্ধ আরও দেশে

tiktok-ban
[publishpress_authors_box]

ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের সময় যুক্তরাষ্ট্রে ফুরিয়ে আসছে। চীনা মালিকানাধীন এই প্লাটফর্মটিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় আইনকে শুক্রবার অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

নিষেধাজ্ঞাটি রবিবার থেকে কার্যকর হবে। তবে এর বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য এখনও স্পষ্ট নয়।

নিষেধাজ্ঞা বা বিক্রির আইনটি নিয়ে কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছিল। চীন কি আমেরিকানদের ব্যক্তিগত তথ্য দেখতে বা এর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এমন চিন্তা থেকেই আইনটি সামনে আসে।

অবশ্য টিকটক শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, তাদের ব্যবহারকারীদের কোনও তথ্য চীনের সরকারকে দেওয়া হয় না। প্লাটফর্মটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা যুক্ত আছেন।

টিকটকের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটির বেশি। দেশটির ফেডারেল সরকার এরই মধ্যে সরকারি ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে। তবে বিশ্বের আরও অনেক দেশে জনপ্রিয় এই নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মজার তথ্য হলো, চীনা কোম্পানির অ্যাপ টিকটক চীন দেশেই নেই।

চীন

দেশটিতে টিকটক নিষিদ্ধ না হলেও এটি দেখতে পাওয়া যায় না। সেখানে বাইটড্যান্সের অ্যাপের নাম ‘দইয়িন’। চীনাদের জন্য তৈরি এই অ্যাপ। এই অ্যাপটি টিকটকের মতোই। দুইয়িনের সাফল্য দেখে এর একটি আন্তর্জাতিক সংস্করণ হিসাবে টিকটক আনে বাইটড্যান্স।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, টিকটককে চীনা সেন্সরশিপের আওতায় আনা হয়েছে। বিদেশি সরকারগুলো টিকটকের সমালোচনা শুরু করলে বাইটড্যান্স দুটি অ্যাপের তথ্য আলাদা করতে একটি ওয়াল তৈরি করে।

ভারত

২০২০ সালের ভারত চীনের সঙ্গে সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে টিকটক নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞাটি স্থায়ী করা হয়।

২০২০ সালের জুনে হিমালয়ে চীনা সেনাদের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। এরপর ভারত ৫০টির বেশি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে টিকটক ও মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটও ছিল।

নেপাল

নেপাল ২০২৩ সালের শেষের দিকে টিকটক নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়। দেশটির যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, অ্যাপটি সামাজিক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে নিয়মিতভাবে কনটেন্ট শেয়ার করছিল। নেপালের মন্ত্রিসভা সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সূত্র ধরেই টিকটককে নিষিদ্ধ করা হয়।

অথচ আগস্টে নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেওয়া হয়। তখন নেপাল সরকার জানিয়েছিল, অ্যাপটি ব্যবহারের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ প্ল্যাটফর্মে সাইবার অপরাধ চিহ্নিত করতে পারবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান নীতি নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলো — ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় কাউন্সিল — তাদের স্টাফদের ফোন থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করে। ইউরোপীয় কমিশন এক ঘোষণায় জানিয়েছে, এই পদক্ষেপটি ‘সাইবার নিরাপত্তার হুমকি এবং সাইবার আক্রমণের জন্য ব্যবহার হতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে’।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের কিছু সরকার তাদের কর্মীদের কাজের ফোনে টিকটক ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস।

কানাডা

কানাডা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব সরকারি ফোন থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করে। দেশটির সরকার জানায়, তাদের সিদ্ধান্তটি অ্যাপটির পর্যালোচনার ফলস্বরূপ। এটি গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তখন নিষেধাজ্ঞাটিকে একটি সম্ভাব্য ‘প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

নভেম্বরে কানাডা জাতীয় নিরাপত্তা পর্যালোচনার পর টিকটকের ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তবে তারা কানাডীয়দের অ্যাপে প্রবেশে বাধা দেবে না। কারণ এ ধরনের সিদ্ধান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয় বলে জানানো হয়।

যুক্তরাজ্য

২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, সরকারী মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের এবং প্রশাসনিক কর্মচারীদের ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করা হবে। কারণ এটি রাষ্ট্রীয় তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এর কিছুদিন পর, ব্রিটিশ পার্লামেন্টও তার সংশ্লিষ্ট ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে টিকটক নিষিদ্ধ করে। তখনকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, সিদ্ধান্তের আগে দেশটি ‘আমাদের মিত্রদের পদক্ষেপও দেখবে’।

অস্ট্রেলিয়া

২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পরামর্শে সব ফেডারেল সরকারী ডিভাইস থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করে। এপ্রিলে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, ‘সরকারী ডিভাইসে টিকটক অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।’

নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে। এতে ১৬ বছরের নিচে শিশুদের জন্য টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

তাইওয়ান

তাইওয়ান ২০২২ সালে সরকারী ডিভাইস থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করে। অঞ্চলটির মিডিয়া রিপোর্ট করেছে যে, কর্মকর্তারা জাতীয় সাইবার নিরাপত্তার কারণে পাবলিক সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যে তারা একটি দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করেছিল। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।

নিউ জিল্যান্ড

২০২৩ সালের মার্চে আইনপ্রণেতারা নিউ জিল্যান্ডের সংসদীয় নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকারসম্পন্ন মোবাইল ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। কর্মকর্তারা সাইবার নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন এবং জানান, যারা কাজের জন্য টিকটক ব্যবহার করতে প্রয়োজন, তাদের জন্য কিছু ব্যতিক্রম করা হবে।

নিউ জিল্যান্ডের সরকার জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তগুলো তাদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান

বিগত বছরগুলোতে পাকিস্তানে কর্তৃপক্ষ কয়েকবার টিকটক সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তবে পরবর্তীতে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। ২০২১ সালে এক ঘটনায় আদালত ‘অনৈতিক ও অশ্লীল কনটেন্ট’ নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর অ্যাপটি ব্লক করে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা এক মাসেরও কম সময় পর তুলে নেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক পাকিস্তানের নির্বাচনী ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল টিকটক ব্যবহার করে লাখ লাখ ভোটারের কাছে পৌঁছেছিল। তারা ফেসবুক এবং অন্যান্য টেক্সট-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে না।

আফগানিস্তান

তালেবান ২০২২ সালে টিকটক নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয় ‘যুব সমাজকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা’ করার যুক্তিতে। নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হলেও, ব্যবহারকারীরা ভিপিএন ব্যবহার করে এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে টিকটক ব্যবহার করে।

ইন্দোনেশিয়া

২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়া টিকটক সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে। এর কারণ ছিল ‘পর্নোগ্রাফি, অশোভন কনটেন্ট এবং অবমাননা’ সম্পর্কিত উদ্বেগ। অ্যাপটি কিছু কনটেন্ট সেন্সর করতে সম্মত হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞাটি এক সপ্তাহেরও কম সময়ে তুলে নেওয়া হয়।

সোমালিয়া

সোমালিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী ২০২৩ সালের আগস্টে বলেন, দেশটি টিকটক, টেলিগ্রাম ও অনলাইন জুয়া সাইট ১এক্সবেট এর প্রবেশাধিকার সীমিত করার পরিকল্পনা করছে। এর কারণ ছিল ‘বাজে কনটেন্ট’ ও ‘যুব সমাজের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব’ নিয়ে উদ্বেগ।

মন্ত্রী ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে এই প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তিনি দাবি করেন, ‘সন্ত্রাসী এবং অশালীন গোষ্ঠীরা’ এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ‘ভয়াবহ চিত্র ও মিথ্যা তথ্য’ জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত