Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

প্রথম দিনে যে ১০ নির্বাহী আদেশ দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

Tump Order
[publishpress_authors_box]

প্রথমবার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে প্রথম দিন শুধু একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেটি ছিল ওবামাকেয়ার বাতিল।

মাঝে বিরতির পর আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সোমবার তিনি শপথ নিয়ে শুরু করবেন দ্বিতীয় যাত্রা।

তবে এবার, মানে শপথের দিনই অন্তত ১০টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন তিনি। এমনটাই জানা গেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।

গণ অভিবাসন

ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনা তার প্রথম দিনের এজেন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, “প্রথম দিনেই আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী তাড়ানোর প্রোগ্রাম চালু করবো, যাতে অপরাধীরা বের হয়ে যায়।”

অবশ্য ট্রাম্পের এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে অভিবাসন সমর্থকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এমন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা কঠিন এবং ক্ষতিকর।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা

ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশটির সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনী অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সবার অধিকার। এই পদক্ষেপটি আইনি ও বাস্তবিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

যখন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি প্রথম দিনেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করবেন, ট্রাম্প উত্তর দেন, “অবশ্যই”। এছাড়া ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের সব উন্মুক্ত সীমান্ত নীতিও বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, অভিবাসীদের দ্রুত তাড়াতে তিনি ‘টাইটেল ৪২’ নামক একটি পাবলিক হেলথ আইন ব্যবহার করবেন।

ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের ক্ষমা

ট্রাম্প ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার সঙ্গে জড়িতদের ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ক্ষমা দেওয়ার সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “প্রথম দিনেই বিষয়টি দেখব।” তিনি আরও জানান, যাদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের ক্ষমা দেওয়ার বিষয়টিও তিনি ভাববেন।

এই পদক্ষেপটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, ৬ জানুয়ারির হামলায় জড়িতদের ক্ষমা করে দিলে আইনের শাসন ক্ষুণ্ন হবে। তবে টাইম ম্যাগাজিনকে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রথম নয় মিনিটের মধ্যেই তিনি ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের ক্ষমা করে দেবেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বা তার আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট নেতা কমলা হ্যারিসের সঙ্গে এক বিতর্কে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমি জেলেনস্কি ও পুতিনকে খুব ভালোভাবে জানি। আমার সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক। তারা আপনার প্রেসিডেন্টকে সম্মান করে, ঠিক আছে, তারা আমাকে সম্মান করে। কিন্তু তারা বাইডেনকে সম্মান করে না।”

শুল্ক আরোপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করবেন ট্রাম্প। এমন প্রতিশ্রুতিতে শুরু ওই দেশগুলোই বিপাকে পড়েনি, পাশাপাশি অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা মনেন করেন, এমন শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর গুরুতর ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

গত ২৫ নভেম্বর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশালে লেখেন, “২০ জানুয়ারি আমার প্রথম নির্বাহী আদেশগুলোর মধ্যে আমি সেসব দলিলেই স্বাক্ষর করব, যাতে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। আর এর অযৌক্তিক সীমান্তও বন্ধ হবে।”

বাইডেনের ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল ম্যান্ডেট’ বাতিল

ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) ‘ম্যান্ডেট’ বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হিউস্টনে এক প্রচার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার দিনই ক্রুকেড জো’র ইলেকট্রিক ভেহিকল ম্যান্ডেট বাতিল করব।”

বাইডেনের এই ম্যান্ডেটে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ি ও ট্রাকের ৫০ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কোন গাড়ির ধোয়া নির্গমন নল কতটুকু হবে, তাও নির্ধারিত হয় এই ম্যান্ডেটে।

তবে ট্রাম্প মনে করেন, এই নীতিমালা আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী গ্যাসচালিত যানবাহনের শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তা দেশীয় অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইলেকট্রিক ভেহিকলের উন্নতি হওয়া উচিত, কিন্তু সেটি জনগণের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

তেলকূপ খনন

যুক্তরাষ্ট্রে তেলকূপ খনন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। ফক্স নিউজের সঞ্চালক শন হ্যানিটির সঙ্গে একটি টাউন হল সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “খনন করুন, খনন করুন, খনন করুন।”

তার মতে, দেশে তেলের উৎপাদন বাড়ালে জ্বালানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। তবে পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, তেলের খনন বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাকে আরও তীব্র করবে।

নারীদের খেলায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ

ট্রাম্প নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রান্সজেন্ডার অধিকার নিয়ে তার অবস্থান বিতর্কিত। তিনি বারবার ট্রান্সজেন্ডার নারীদের পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমি নারীদের খেলাধুলা থেকে পুরুষদের শতভাগ সরিয়ে দেব, প্রথম দিনেই।”

জেন্ডার অ্যাফার্মিং কেয়ার

ট্রাম্প জেন্ডার-অ্যাফার্মিং কেয়ার বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার প্রচার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, “প্রথম দিনেই আমি জো বাইডেনের তথাকথিত ‘জেন্ডার-অ্যাফার্মিং কেয়ারের’ নিষ্ঠুর নীতিগুলো বাতিল করব।”

এই পদক্ষেপ এলজিবিটিকিউ+ সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, এই ধরনের নীতি বৈষম্যমূলক এবং ক্ষতিকর হতে পারে।

মেড-ইন-আমেরিকা গাড়ি শিল্প

ট্রাম্প আমেরিকান গাড়ি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটি ভোট মানে, ভবিষ্যতের গাড়ি আমেরিকায় তৈরি হওয়া।” তার এই প্রতিশ্রুতি গাড়ি শিল্পের কিছু অংশে উৎসাহ তৈরি করেছে।

তবে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর কোন প্রতিশ্রুতিগুলো অগ্রাধিকার পাবে এবং কীভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট—ট্রাম্পের প্রথম দিনের পরিকল্পনা উচ্চাভিলাষী এবং বিস্তৃত। এটা তার প্রেসিডেন্সি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত গঠনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত