খেলার মাঠের সাফল্যে ভক্তরা কোন খেলোয়াড়কে রাখে মাথার মুকুট করে। সেই মুকুটে কাঁটাও আছে। সামান্য ব্যর্থতায় শুনতে হয় ‘ভুয়া’ ডাক। খেলার মাঠের এই উত্থান-পতনের মতো শঙ্কা কী রাজনীতির মাঠেও নেই?
রাজনীতির ময়দানে নেমে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তার ঠিকানা জেল। রাজনীতির মাঠে ‘আনাড়ি’ সাকিব আল হাসানকেও বরণ করতে হতে পারে একই ভাগ্য।
চেক প্রতারণার মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আজ (রবিবার) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর অর্থ, দেশে ফিরলে জেলে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন মাত্র সাত মাস আগে রাজনীতিতে নামা সাকিব।
সেই ঝুঁকি যে আছে, সেটা ৫ আগস্ট রাজনীতির পট পরিবর্তনের পর বুঝতে পেরেছিলেন সাকিব। এজন্য দেশে ফিরে খেলতে চাননি বিদায়ী টেস্ট। মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার জন্য দুবাই পর্যন্ত এসেও ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে।
কারণ সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে, সরকার সবুজ সংকেত দিতেও পারে না। আইন তার নিজের গতিতে চলে। সেই গতিতে চলাতেই আজ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো তার বিরুদ্ধে। এই রায়ে হয়তো সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষের সিলমোহরও পড়ে গেল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা কোন আসামিকে নিশ্চিতভাবে জাতীয় দলে বিবেচনা করবে না বিসিবি।
গত নির্বাচনের আগে বর্ণিল ক্যারিয়ারের এমন ধূসর ‘সমাপ্তি’ দূরতম কল্পনাতেও ছিল না সাকিবের। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত ব্যাপারগুলোই ঘটে চলেছে এই কিংবদন্তির জীবনে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিশ্চুপ ছিলেন সাকিব। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে তখন ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান কিন্তু নীরব থাকা সাকিব কানাডার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ব্যস্ততার পাশাপাশি পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন । প্রবাসী দর্শকরা আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন ‘‘দেশের জন্য আপনি কী করেছেন?’’
চোখের মনি থেকে এভাবেই সাকিব হয়ে উঠেন চোখের বালি। শেখ হাসিনার পদত্যাগের কিছুদিনের মধ্যেই পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় নাম উঠে যায় সাকিবের। সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজার কারসাজিতে জরিমানা হয় ৫০ লাখ টাকা।
এরপর অক্টোবরে ফেইসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিলেও গণমানুষের ক্ষোভ কমেনি তার ওপর। সেই মাসে বিদায়ী টেস্ট খেলতে দুবাই পর্যন্ত এসেও ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। টেস্টের আগে মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে সাকিবের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে ঘটে সংঘর্ষ।
নভেম্বরে জব্দ করা হয় সাকিব ও তাঁর স্ত্রী উম্মে আল হাসান শিশিরের ব্যাংক হিসাব। একই মাসে মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো কাউন্টিতে সারের হয়ে খেলার সময় তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে উঠে প্রশ্ন।
ইংল্যান্ডের লাফবোরো ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়ামে সাকিব ফেল করেন বোলিং পরীক্ষায়। তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তার বোলিং নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র সেন্টার ফর স্পোর্টস সায়েন্সে দেওয়া বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় ফেল করেন আবারও। তাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ পড়েন সাকিব। বাংলাদেশের পাঠ্যবই থেকেও বাদ পড়ে তার নাম।
শুধু ব্যাটার সাকিবে আস্থা রাখেনি বিসিবি। কারণ চোখের সমস্যায় অনেক দিন ধরে নিজের সেরা ব্যাটিং ছন্দে ছিলেন না সাকিব। একই কারণে আইপিএল বা পিএসএলের কোন দল আগ্রহ দেখায়নি সাকিবের ওপর।
আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারের এই ‘গ্রহণ’ কী কাটবে সাকিবের? নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটের বরপুত্রের বিদায়টা মলিন আর ধূসরই হবে।