Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

রেমিটেন্স কমেছে, ১৮ দিনে ১২০ কোটি ডলার

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
[publishpress_authors_box]

অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো যখন বার্তা দিচ্ছিল দুঃসংবাদের, তখন রেমিটেন্সই দেখাচ্ছিল আশা; এখন সেই প্রবাসী আয়েও দেখা যাচ্ছে ধীর গতি।

বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, নতুন বছরের প্রথম মাস এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের সপ্তম মাস জানুয়ারির ১৮ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ (১.২ বিলিয়ন) ডলার।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ ১৪ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা।

এই ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ৮১৯ কোটি টাকা।

অথত গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের প্রথম ২১ দিনেই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি ৭২ লাখ) ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছিল।

সেই ২১ দিনে প্রতিদিন গড়ে এসেছিল ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।

ডিসেম্বর মাসে মোট রেমিটেন্স আসে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার, যা ছিল একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। এর আগে এক মাসে এত রেমিটেন্স কখনই আসেনি।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বাধিক ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অঙ্কের রেমিটেন্স এসেছিল গত বছরের জুন মাসে, ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নভেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। প্রতিদিন গড়ে এসেছিল ৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ডলার, জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে।

অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসের পাঁচ মাসই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে দেশে। এর আগে কখনই এমনটা দেখা যায়নি।

গত বছরের মাঝামাঝিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমে গিয়েছিল।

ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিল।

সেই অান্দোলনে আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রেমিটেন্সে দেখা দেয় উল্লম্ফন। পাঁচ মাস পর এখন রেমিটেন্সে নিম্নমূখী ধারা দেখা যাচ্ছে।

ডিসেম্বরের ১৮ দিনে যে রেমিটেন্স এসেছে, মাসের বাকি ১৩ দিনে (১৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক দাঁড়াবে ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ (২.০৭ বিলিয়ন) ডলার, যা হবে ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

রিজার্ভ ২০.১৩ বিলিয়ন ডলারে

বর্তমান সময়ে অর্থনীতির উদ্বেগজনক সূচক রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। গত ৯ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গ্রস হিসাবে ২৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।

আকুর দেনা শোধের আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

গত ১১ নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

এরপর রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ায় রিজার্ভও বাড়তে থাকে।

আইএমএফের চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় করার শর্ত হিসেবে গত ডিসেম্বর শেষে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনার কারণেও রিজার্ভ বাড়তে থাকে।

২৪ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ওই দিন গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

এর পর ২৯ ডিসেম্বর এশীয় উন্নয়ন তহবিলের (এডিবি) ৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

৮ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ আরও বেড়ে ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। গ্রস হিসাবে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

৯ জানুয়ারি আকুর দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে।

এক বছর আগে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে—রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত