রাজস্ব আদায় বাড়াতে ঢাকাসহ দেশের ১৮টি জেলার সব সোনার দোকানে ভ্যাট মেশিন বা ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ জন্য দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির (বাজুস) সহায়তা চেয়েছে এনবিআর। রবিবার এনবিআরের মূসক তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকল্প পরিকল্পনা বিভাগের দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল বাজুসের সভাপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে এসব এলাকার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়েছেন।
চিঠিতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকার বাজার ও এলাকাভিত্তিক দোকানের তালিকা চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুতে জুয়েলার্স সমিতির নেতাদের সঙ্গে ইএফডি স্থাপন নিয়ে আলোচনা করে এনবিআর। সেখানে সমিতির নেতারা জুয়েলারি খাতে ভ্যাট, ব্যাগেজ রুল, সোনা আমদানিসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে তারা জানান, জুয়েলারি খাতে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে সব প্রতিষ্ঠানে ইএফডি স্থাপনের পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার যুক্তিসংগত সমাধান করা গেলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলে মন্তব্য করেন জুয়েলার্স সমিতির নেতারা। এনবিআর থেকেও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
ওই সভায় এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকার সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এনবিআরের চিঠিতে আরও বলা হয়, জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপনের বিষয়ে আগামী ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় অংশীজনদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক অনলাইন সভা করা হবে।
এরপরই বেসরকারিভাবে ইএফডি বসানোর চুক্তি করা প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস যন্ত্রটি বসাতে মাঠপর্যায়ে কাজ করবে।
চিঠিতে বাজুসকে অনুরোধ করা হয়, পূর্ণাঙ্গ সম্ভব না হলেও আংশিক তালিকা যেন দেওয়া হয়।
রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে। এই ঘাটতি মেটাতেই অর্থ বছরের মাঝপথে এসে গত ৯ জানুয়ারি এক বিশেষ আদেশে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার।
এর মধ্যে রেস্তোরাঁ সেবায় ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়।
মূল্যস্ফীতি যখন দুই অঙ্কের কোঠায়, তখন শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-কর বাড়ানোর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ী মহল থেকেও উঠেছে বিরোধিতা। বাংলাদেশে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি তা ঠেকাতে সেদিনই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুমকি দেয়।
ওই আদেশে ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, আচার, সস, সিগারেট, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকেটসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়।
হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক কর্মচারিদের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ জানুয়ারি এই খাতের ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একইদিন ওষুধসহ আরও কয়েকটি পণ্য ও সেবার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানো হতে পারে বলে জানায় এনবিআর।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস করে গেলেও অভ্যুত্থানে এক মাস পরই তাদের পতন ঘটায় বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।
ঘোষিত বাজেটে গোটা অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে পাঁচ মাসেই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে তা আদায় করতে না পারায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।
কিন্তু এবার অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ঘাটতি তার দ্বিগুণ হওয়ায় পুরো বছর শেষে ঘাটতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সরকারের চিন্তার জন্য যথেষ্ট।
এই ঘাটতি পূরণে অর্থ বছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট বা মূসক), শুল্ক ও আয়কর বাড়ানোর পথে হাঁটছে অন্তবর্তী সরকার।
সে উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ঢাকাসহ ১৮ জেলার সব সোনার দোকানে ইএফডি বসানো হবে বলে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।