ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইতিমধ্যে ওহাইও থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর জেডি ভ্যান্স দুইটি রেকর্ড করে ফেলেছেন। একটি বয়সের দিক থেকে এবং অপরটি চেহারা ও বেশভূষায়।
ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এই সহস্রাব্দের প্রথম সবচেয়ে কম বয়সী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন।
১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া ভ্যান্সের বয়স এখন ৪০ পেরিয়েছে। তার আগে ১৯৫৩ সালে রিচার্ড নিক্সন ৪০ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন সি. ব্রেকিনরিজ, যিনি ১৮৫৭ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে জেমস বুকাননের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
তবে বেশভূষার ব্যাপারটি আরও মজার। জেডি ভ্যান্স হবেন প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট, যিনি দাড়িওয়ালা।
১৯০৫ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত থিওডোর রুজভেল্টের সময়ে দায়িত্ব পালন করা চার্লস ডব্লিউ ফেয়ারব্যাঙ্কস ছিলেন ভ্যান্সের আগে মুখে দাড়ি রাখা শেষ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ১৯৩৩ সালে হার্বার্ট হুভারের ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস কার্টিস ছিলেন সর্বশেষ ভাইস প্রেসিডেন্ট, যিনি গোঁফ রেখেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রে দাড়ি-গোঁফ রাখার চল দীর্ঘদিন ধরেই নেই। সবশেষ গোঁফধারী প্রেসিডেন্ট ছিলেন উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট (১৯০৯–১৯১৩)। আর দাড়িযুক্ত সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন বেনজামিন হ্যারিসন, যিনি ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
গত বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রানিং মেট হিসেবে জেডি ভ্যান্সকে বাছাই করার আগে অনেক রিপাবলিকানদের মধ্যেই তার এই চেহারা নিয়ে শঙ্কা ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও কেউ কেউ মনে করছিলেন, জেডি ভ্যান্স এর দাড়ি-গোঁফ এর কারণে শেষ মুহূর্তে হয়তো ট্রাম্পের রানিং মেট হওয়া থেকে ছিটকে পড়বেন তিনি।
কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছিল ট্রাম্পের একটি উক্তি। সদ্য দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেওয়া এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট তখন বলেছিলেন, “তিনি (ভ্যান্স) দেখতে একজন তরুণ আব্রাহাম লিঙ্কনের মতো।”
ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির ২০১৫ সালের একটি গবেষণা বলছে, মার্কিন ভোটাররা দাড়ি-গোঁফ রাখা ব্যক্তিদের সাধারণত আগ্রাসী, রক্ষণশীল মানসিকতার এবং বলপ্রয়োগে সমর্থনকারী হিসেবে মনে করেন।
ভ্যান্সের রাজনৈতিক অবস্থান এই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার রাজনৈতিক মতামত এবং অবস্থান, যেমন- অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি, সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, এবং রক্ষণশীল মূল্যবোধ— ওকলাহোমার ওই গবেষণা ফলাফলের সঙ্গে মিলে যায়।
জেডি ভ্যান্স প্রথমবারের মতো মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করেন তার স্মৃতিকথা ‘হিলবিলি এলিজি’ (২০১৬) প্রকাশের মাধ্যমে। বইটি মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রমজীবী শ্রেণির জীবনধারা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে লেখা, যা ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল। পরে এই বইটি থেকে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হয়। ২০২২ সালে তিনি প্রথমবারের মতো ওহাইও থেকে সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন এবং খুব দ্রুত ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন।
ভ্যান্সের দাড়ি নিয়ে আলোচনা কেবল তার চেহারা বা স্টাইল নয়, বরং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণে তৈরি একটি নতুন অধ্যায়। এক শতাব্দীর পুরনো ঐতিহ্য পুনর্জাগরিত করার পাশাপাশি এটি ব্যক্তিত্বের প্রকাশের একটি উদাহরণ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
ভোটারদের মানসিকতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভ্যান্সের মতো নেতারা রাজনীতির পুরনো ধারাকে পরিবর্তন করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।