যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে ফেরার দিনই শতাধিক নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; তার মধ্যে একটি ছিল অভিবাসীদের সন্তানের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের। কিন্তু তাবে বাদ সেধেছে আদালত।
সিএনএন জানিয়েছে, ওয়াশিংটন রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেমোক্রেট শাসিত তিনটি রাজ্যের আবেদনে ফেডারেল বিচারক জন কুনার বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই আদেশ স্থগিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর প্রথম বাক্যেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতির বিষয়টি বলা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বা নাগরিক অধিকার পাওয়া সব ব্যক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, রাষ্ট্রের যেখানেই তারা বাস করুন না কেন।
রিপালিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাহী আদেশে এই সুযোগ বন্ধের নির্দেশ দেন।
তার আদেশে বিষয়টি দাঁড়ায় এমন, যদি কোনও ব্যক্তির মা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকেন এবং বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তাহলে সেই ব্যক্তি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাবেন না।
নতুন আদেশ ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকরের ঘোষণা ট্রাম্প দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার মধ্যেই বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠন আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে মামলা ঠুকতে থাকে।
এখন স্থগিতাদেশের আদেশ দিলেন ওয়াশিংটন রাজ্যে সিয়াটলের জ্যেষ্ঠ বিচারক কুনার। আদেশে তিনি বলেছেন, প্রেডিডেন্টের ওই আদেশ পুরোপুরি অসাংবিধানিক এবং তার ৪০ বছরের বিচারিক জীবনে সংবিধানের এমন লঙ্ঘন আগে কখনও দেখেননি।
ট্রাম্পের মতোই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের সময় নিয়োগ পাওয়া বিচারক কুনার আগামী ১৪ দিনের জন্য ট্রাম্পের আদেশ স্থগিত করেছেন। এই সময়ে নাগরিকত্ব বাতিলের কোনও পদক্ষেপ না নিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আদেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্প যখন এই আদেশে সই করেন, তখন আইনজীবীরা কোথায় ছিলেন?- এমন মন্তব্যও করেন এই বিচারক। তিনি মনে করেন, একজন আইনজীবীও যদি এই আদেশকে অসাংবিধানিক বলতেন, তাতে তিনি সান্ত্বনা পেতেন।
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসা ট্রাম্প তার এবার শপথ নেওয়ার পর অভিষেক ভাষণেই বলেছিলেন, লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠাবেন তিনি।
এর পরপরই জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের বর্তমান অধিকারটি সঙ্কুচিত করার আদেশে তিনি সই করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৮৬৮ সালে। তাতে আমেরিকায় জন্ম নেওয়া দাসদের নাগরিকত্বের বিষয়টির সুরাহা করা হয়েছিল।
এরপর ১৮৯৮ সালে অভিবাসীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতির প্রয়োগ নিশ্চিত করেছিল দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
তবে অভিবাসনবিরোদী কট্টরপন্থীরা বলে আসছিলেন, এই নীতি অবৈধ অভিবাসনের পথ তৈরি করে দিয়েছে। এই সুযোগ নিতে গর্ভবতী নারীরা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সন্তান প্রসব করেন।
একে ‘বার্থ ট্যুরিজম’ বলা হয়ে থাকে। এভাবে জন্ম নেওয়া শিশুকে ডাকা হয় ‘অ্যাংকর বেবি’ নামে।
ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে সই করার পর আইন বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করা যায় না।
তাদের মত, সংবিধানের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুবিধা বাতিল করা যায়, কিন্তু তার জন্যও দরকার হবে প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট। তাহলেই শুধু হবে না, তিন- চতুর্থাংশ রাজ্যকে সেটি অনুমোদন করতে হবে।