Beta
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

লায়লা কানিজকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

laila kaniz
[publishpress_authors_box]

‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচনায় আসা এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের এক মামলায় একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রবিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়।

গত ১৫ জানুয়ারি ভোরে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। ডিবির সদস্যরা বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মতিউর অস্ত্রের কথা স্বীকার করেন। তিনিই তার শয়নকক্ষের আলমারি থেকে বিদেশি পিস্তল বের করে দেন।

ওইদিনই অস্ত্র আইনের মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ১৮ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছে।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করে দুদক। প্রত্যেক মামলায়ই আসামি করা হয় মতিউর রহমানকে।

লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব সম্পদ অর্জনে মতিউর রহমানের সহযোগিতার অভিযোগ এনে মামলায় তাকেও আসামি করা হয়।

এ মামলায় গত ২১ জানুয়ারি তাকে সাত দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে দুদক। আদালত ২৭ জানুয়ারি তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির তারিখ রেখেছে।

১৫ জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাঈল লায়লা কানিজকে সাত দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) আবেদন করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে রিমান্ড শুনানির জন্য ১৯ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করে। সেদিন শুনানি পিছিয়ে ২৬ জানুয়ারি রাখা হয়।

রবিবার দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর লায়লা কানিজের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

ছেলের ছাগলকাণ্ডে বিত্ত-বৈভব নিয়ে আলোচিত সরকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন ২০২৩ সালে উপনির্বাচনে। আর কোনও প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।

রায়পুরার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুস সাদেক। ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি মারা যাওয়ায় তিন মাসের মধ্যে ওই উপজেলায় উপনির্বাচন হয়েছিল, যাতে চেয়ারম্যান হন লায়লা। তার ঠিক আগে তাকে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক করা হয়।

উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কয়েক মাস আগেও লায়লা ছিলেন সরকারি চাকরিতে। সাদেক যখন মারা যান তখন তিনি ছিলেন ঢাকার তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

রিমান্ড শুনানিতে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “সহকারী প্রফেসর হিসেবে তিনি (লায়লা কানিজ) চাকরি করেন। তার সম্পদের সোর্সের অস্তিত্ব নাই। চাকরি জীবনে যা আয় করেছেন সেটার বাইরে যেসব সম্পদ রয়েছে, সেগুলো অবৈধভাবে অর্জিত। তার এসব সম্পদের আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। তার কাছে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ রয়েছে। তিনি কোনও মানি লন্ডারিং করেছেন কি না এবং অবৈধ সম্পদের তথ্য জানতে তাকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শাহান শাহ তাপস বলেন, “তার বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিতভাবে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ট্রায়ালে এটা প্রমাণ করব। তার স্বামী মতিউরের কারণে এ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সব কিছু পূর্ণাঙ্গভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছি। তাকে হেনস্তা করতেই এ মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তার রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন দেওয়া হোক।”

শুনানিতে লায়লা কানিজের আরেক আইনজীবী মো. ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিক মুন্নি সাহার প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

তিনি বলেন, “সাংবাদিক মুন্নি সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন দুদক বলেছিল, তার বিরুদ্ধে ১১২ কোটি টাকা লেনদেনের খবর। তাকে কিন্তু গ্রেপ্তার করেনি। ছেড়ে দিয়েছে।”

তখন দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর মামলার ‘মেরিট’ নিয়ে কথা বলতে বলেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শাহান শাহ তাপস বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ এজাহার, মিথ্যা বলেছেন।”

তখন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “সত্য মিথ্যা ন্যায় বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ হবে। আদালত ন্যায় বিচার করবেন।”

পরে আদালত লায়লা কানিজের রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়।

গত কোরবানির ঈদে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে মুশফিকুর রহমান নামে এক তরুণের ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, ওই তরুণ তৎকালীন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে।

এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন আলোচনায় আসে। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকা নিয়েও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।

এই ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত এই রাজস্ব কর্মকর্তার ‘অবৈধ সম্পদের’ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদকও। সেজন্য দুদকের উপ পরিচালক আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত