ঢাকাসহ দেশের সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটার অনুমতি নেওয়ার জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনে গত বছর জারি করা এ সংক্রান্ত রুল যথাযথ ঘোষণা করে মঙ্গলবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সাত দিনের মধ্যে ঢাকায় কমিটি গঠন করতে বলেছে আদালত। পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
আর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে জনপ্রশাসন সচিবকে সাত দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি করতে বলা হয়েছে।
জেলা কমিটিতে জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক, স্থানীয় সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ বা বিশেষজ্ঞ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক এবং সিভিল সার্জনকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
আর উপজেলা কমিটিতে স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীকে রাখতে বলা হয়েছে।
গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এর পক্ষে গত ৫ মে রিট আবেদনটি করা হয়।
প্রাথমিক শুনানির পর ৭ মে রুল দেয় হাই কোর্ট। পরিবেশ রক্ষায় গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এই রুল যথাযথ ঘোষণা করে ঢাকাসহ সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনার রায় দিল হাই কোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মণ্ডল ও সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শফিকুর রহমান।
আদালত রায়ে বলেছে, “দেশে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। নির্বিচারে গাছ কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকারকে খর্ব করছে। পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য যে পরিমাণ গাছ বা বনায়ন দেশে থাকা প্রয়োজন সে পরিমাণ গাছ বা বনায়ন নেই। ফলে গাছ রক্ষা করা খুবই জরুরি।”
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “কমিটি গঠনের নির্দেশনার পাশাপাশি ২০২৪ সালে প্রণীত সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা সংক্রান্ত একটি বিধান পরিবর্তন করতে বলেছেন হাই কোর্ট।
“আদালত বলেছেন, সামজিক বনায়নের গাছ না কেটে গাছের বাজার মূল্য নির্ধারণ করে সে টাকা নির্বাচিত উপকারভোগীদের (ভূমিহীন, দুস্থ মহিলা, অনগ্রসর গোষ্ঠী, দরিদ্র আসিবাসী, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাসহ আরও অনেকেই) দেওয়ার বিধান সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় যুক্ত করতে।”
এক প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, “সামাজিক বনায়নের গাছ কাটাই যাবে না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেকোনও গাছ কাটতে কমিটির অনুমতি লাগবে। তবে গ্রাম পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানার গাছ কাটতে অনুমতি লাগবে না।”