দাবি পূরণের আশ্বাসে ধর্মঘট থেকে সরেছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা; তাতে ৩০ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
রানিং স্টাফরা ধর্মঘট শুরু করলে সোমবার মধ্যরাতে দেশে রেলসেবা অচল হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার দিনভর নানা আশ্বাসেও কর্মসূচি থেকে সরছিলেন না রেলকর্মীরা।
শেষে গভীর রাতে রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের মিন্টো রোডের বাসায় বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারে ঘোষণা দেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান।
এরপর বুধবার সকালে ট্রেনের চাকা গড়াতে শুরু করে লাইনে। কমলাপুর েথকে জয়দেবপুরগামী কমিউটার ট্রেনটি প্রথমে ছাড়ে। এরপর অন্য ট্রেনগুলোও ছাড়তে শুরু করে।
কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের অন্যান্য স্টেশন থেকেও ট্রেন ছেড়েছে।”
ট্রেন চলাচল শুরুর পর আর কোনও গোলযোগের খবর মেলেনি বলে জানান তিনি।
রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতিেএই ধর্মঘট ডেকেছিল। গত ২২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি পূরণের জন্য ২৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল তারা। কিন্তু তাতে সরকারের সাড়া না পাওয়ায় কর্মবিরতি শুরু করে।
গার্ড, ট্রেনচালক (লোকো মাস্টার), সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিকেট পরিদর্শকদের (টিটিই) মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে রানিং স্টাফ দেড় হাজারের বেশি।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে কাজ করতে হয় ১৫–১৮ ঘণ্টা। সেজন্য তাদের আগে তাদের দেওয়া হতো বিশেষ আর্থিক সুবিধা, এটিকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়।
মূল বেতনের সঙ্গে মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবিতে সোমবার মধ্যরাতে ধর্মঘট শুরু করেন রানিং স্টাফরা।
সে কারণে রাজধানীসহ গোটা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে বিআরটিসি বাসে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর উদ্যোগ নেয় রেল বিভাগ। তা নিয়েও যাত্রীদের ছিল অসন্তোষ।
উপদেষ্টার অনুরোধে রেলকর্মীরা কাজে না ফেরায় আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মো. ফাহিমুল ইসলাম।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও যোগ দেন বৈঠকে। কিন্তু সেখানেও কোনও সমঝোতা হয়নি। এরপর মধ্যরাতে বৈঠকে আসে সমাধান।
রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলছেন, আন্দোলনরত রেলকর্মীদের দাবির অনেক অংশ এরই মধ্যে পূরণ করা হয়েছে। বাকিটা পূরণের ভার অর্থ বিভাগের হাতে। তা পূরণে অর্থ বিভাগের সঙ্গে রেল বিভাগ আলোচনা চালিয়ে যাবে।
রেল উপদেষ্টা যখন বলেছেন দাবি পূরণ অর্থ বিভাগের হাতে, তখন ‘অর্থ সংকুলানের’ কারণ দেখিয়ে এক সঙ্গে সব দাবি পূরণ করা কঠিন বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।