মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত যে ১৯৩ জনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার কথা ছিল তাদের মধ্যে ৪৯ জন নির্ধারিত সময় গতকাল ২৯ জানুয়ারি বুধবার পর্যন্ত আসেনি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তাদেরকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার আসতে বলা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমিন।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “১৯৩ জনকে আসতে বলা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪৯ জন এখনও বাকি। আমরা তাদের রবিবার আসতে বলেছি। বাকিদের কাগজপত্র দেখা শেষ।”
মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গত ১৭ জানুয়ারির ভর্তি পরীক্ষা অংশ নেয় এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন। ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে; পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৪০।
৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয় ৫ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৩ জন থাকার বিষয়টি সমানে আসার পর ‘কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন’- এমন যুক্তি দিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
প্রকাশিত ফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে সে রাতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তারা ফল বাতিলের দাবিও জানান। পরদিন ২০ জানুয়ারিও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতে বিষয়টি নিয়ে সেদিন বৈঠক করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রুবীনা সেদিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, “আজ এ বিষয়ে আমাদের মিটিং ছিল। কারণ বিএমডিসি নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য এ কোটা নির্ধারিত। কিন্তু নাতি-নাতনিদের জন্য নয়। সেই হিসাবে এই কোটা রয়েছে। সন্দেহজনক ১৯৩ জনকে আমরা ডেকেছি। তাদের ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে এবং আমরা ওয়েবসাইটেও দেব।”
অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন জানান, আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি সব কাগজসহ তাদের ডাকা হয়েছে।
সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য তিনটা কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রতিদিন ৬৬ জনের কাগজপত্র যাচাই করা হবে। সবকিছু দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
এই ১৯৩ জনের ফল স্থগিত বলা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নে অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমীন বলেন, “আমরা ঠিক স্থগিত শব্দ বলছি না। বলতে পারেন, কাগজপত্র দেখার জন্য ডাকা হচ্ছে। সবকিছু যাচাই করা হবে, এরপর সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
যে ৪৯ জন আসেনি তারা ছাড়া বাকিদের সবকিছু দেখে কী পাওয়া গেল- বৃহস্পতিবার সকাল সন্ধ্যার এ প্রশ্নে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক রুবীনা ইয়াসমীন বলেন, “সেটা এখনই বলব না। সবারটা দেখে আমরা জানাব।”
অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নীতিমালা অনুযায়ীই মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে। কোটা অনুযায়ী তাদের জন্য গতবার ছিল ১০৮টি আসন; এবার রয়েছে ২৬৯টি আসন। এবার এ কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে ১৯৩ জন; বাকি ৭৬টি আসন এরই মধ্যে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হয়েছে।
ওই ১৯৩ জন আসলেই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না, তারা নাতি-নাতনি হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিচ্ছে কি না, বা অন্য কেউ মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ নিচ্ছে কি না- এসব যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যাচাই-বাছাইয়ে কোনও ভুল বা অসত্য তথ্য পাওয়া গেলে সেই প্রার্থীর ভর্তি বাতিল হবে এবং মেধাতালিকা থেকেই সেই শূন্য আসন পূরণ করা হবে।
দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। বেসরকারি ৬৭টি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি আসন রয়েছে। এছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ আছে।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় এই পরীক্ষার মেধাতালিকার ভিত্তিতে। এই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই শুধু বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া যায়।
মেডিকেলে ভর্তি : মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১৯৩ জনের কার্যক্রম স্থগিত
স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা পদ্ধতি বিএমডিসি নীতিমালাতেই রয়েছে। সে অনুসারেই ফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স হিসেবে এখন তাদের সন্তানদের থাকার কথা না কোনও ভর্তি পরীক্ষায়। এই সুযোগটাই অন্য কেউ নিচ্ছে কি না, সেটাই যাচাই করা হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সরকারি মেডিকেল কলেজে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময়সীমা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির অনলাইন আবেদন গ্রহণের বিজ্ঞপ্তি ২৩ জানুয়ারি প্রকাশ হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ২০ জানুয়ারি সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞিপ্তি দিয়ে জানায়, যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই ১৯৩ জনের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। বাকিরা যথাসময়ে ভর্তি হতে পারবে।