বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে মো. সাগর নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রবিবার শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামানের আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনের দুই বারের সংসদ সদস্য এনামুর ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ওই আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা ও দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা হয়। গত ২৬ জানুয়ারি ভাটারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
পরদিন মিরপুর মডেল থানার এ হত্যা মামলায় তাকে ছয় দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার সিএমএম আদালত। রিমান্ড শেষে এদিন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম। এসময় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী ।
শুনানিতে এই আইনজীবী বলেন, “আসামি হার্টের রোগী। তার হার্টে ছয়টি রিং পরানো হয়েছে। অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তি। ঘটনার সাথে তিনি আদৌ জড়িত নন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় এই আসামি আহত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাও দিয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে তার জামিন চাচ্ছি।”
শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
মামলায় বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাগর।
এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর তার মা বিউটি আক্তার মিরপুর মডেল থানায় শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করে ২৪২ জনের নামে হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় ৩০ নম্বর আসামি ডা. এনামুর রহমান।
এনামুর রহমান দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন তিনি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অজানা উৎস থেকে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান হাইয়ুল কাইয়ুমকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এনামুরের প্রায় ৬ কোটি টাকা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ এবং এনাম ক্যান্সার হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।