দিনভর বিক্ষোভে ঢাকার শ্যামলীতে সড়ক অচল করে রেখেছিল জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসেও কাজ হচ্ছিল না। বরং তা উপেক্ষা করে রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে তারা। শেষে অভ্যুত্থানের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ গিয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের কর্মসূচি থেকে ফেরান।
জুলাই অভ্যুত্থানে ১৩ হাজারের মতো আহত হয়েছে। তাদের অনেকে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে।
সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে আহতরা শনিবার রাতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) বিক্ষোভ করছিল। রবিবার সকালে তারা শ্যামলীতে শিশুমেলার সামনের সড়ক অবরোধ করে।
এর মধ্যে বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দায়িত্ব নিয়েই আহতদের সুচিকিৎসার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া নির্দেশ দেয়।
এরপর সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা শ্যামলী থেকে মিন্টো রোডে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে রওনা হয়। তাদের ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে আটকে দিয়েছিল পুলিশ।
রাত পৌনে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।
দাবি পূরণের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবে বলে জানায় তারা।
তাদের দাবিগুলো হলো- বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাড়াও আহতদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের সরকারি গৃহায়ণ বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, তাদের পরিচয়পত্র দেওয়া ও রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা, যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা, নারীযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা, বিনামূল্যে বিমান, রেল ও বাসে চলাচলের ব্যবস্থা, যানবাহন ক্রয়ে শুল্ক-কর পরিহার করা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অতিথিশালা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া।
পুলিশ পরিস্থিতি সামলে উঠতে না পারার পর রাত ১২টার দিকে যমুনার সামনে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি গিয়ে প্রথমে বিক্ষুব্ধদের তোপের মুখে পড়েন।
পরে আহতদের কয়েকটি দাবি এক সপ্তাহের মধ্যে পূরণে সরকারের সঙ্গে আলোচনার অঙ্গীকার করে পরিস্থিতি শান্ত করেন তিনি।
হাসনাত আহতদের বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়া হয়নি, এটা সরকারের ব্যর্থতা।
“এজন্য সরকারের আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি দায়ী। সচিবরা দায়ী, আমলারা দায়ী। যারা আহত হয়েছেন, তাদের আমরা সুচিকিৎসা দিতে পারিনি। এজন্য আমি নিজে ব্যথিত।”
সরকার আহতদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাসনাত বলেন, “অবিলম্বে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার, সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে করবে। আপনাদের এ দাবি আমি সরকারের কাছে জানাচ্ছি।”
এরপর রাত ২টার দিকে বিক্ষুব্ধরা যমুনার সামনে থেকে সরে যায়।
এই আহতরা গত নভেম্বরের শুরুতে অভিযোগ করেছিলেন, হাসপাতালগুলোতে প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছেন না তারা।
এরপর গত ১৩ নভেম্বর নিটোর বা পঙ্গু হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। সেদিনও গভীর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা সেখানে গিয়ে কথা বলে তাদের শান্ত করেছিল।
পরদিন ১৪ নভেম্বর সচিবালয়ে আহত ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকার। বৈঠকে আহত ব্যক্তিরা সরকারের কাছ থেকে তাদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের দাবি পূরণের আশ্বাস পান।
কিন্তু আড়াই মাস পর গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা গত শনিবার সন্ধ্যায় আবার রাজপথে নামেন। তাদের অভিযোগ, সরকার তাদের কোনও দাবিই মানেনি।